স্রোতের বিপরীতে চোখ জুড়ানো লিটন

লিটন দাস একেকটি চার মারেন, প্রেস বক্সে থাকা ভারত-পাকিস্তানের সাংবাদিকরা বলে উঠেন ‘হোয়াট এ শট!’। লিটনের প্রতিভা নিয়ে কখনই সংশয় ছিল না। ঘরোয়া ক্রিকেটে তার দৃষ্টিনন্দন ব্যাটিংয়ের তারিফ শোনা যায় হরহামেশা। কিন্তু আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মিলছিল না সেই বিচ্ছুরণ। দিতে পারছিলেন না নিজের সামর্থ্যের প্রমাণ। অবশেষে বড় মঞ্চ পেয়ে লিটন খেললেন ১১৭ বলে ১২১ রানের চোখ জুড়ানো ইনিংস।
Liton Das
দারুণ সেঞ্চুরির পর লিটন, ছবি: এএফপি

লিটন দাস একেকটি চার মারেন, প্রেস বক্সে থাকা ভারত-পাকিস্তানের সাংবাদিকরা বলে উঠেন ‘হোয়াট এ শট!’। লিটনের প্রতিভা নিয়ে কখনই সংশয় ছিল না। ঘরোয়া ক্রিকেটে তার দৃষ্টিনন্দন ব্যাটিংয়ের তারিফ শোনা যায় হরহামেশা। কিন্তু আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মিলছিল না সেই বিচ্ছুরণ। দিতে পারছিলেন না নিজের সামর্থ্যের প্রমাণ। অবশেষে বড় মঞ্চ পেয়ে লিটন খেললেন ১১৭ বলে ১২১ রানের চোখ জুড়ানো ইনিংস।

টেস্টে অবশ্য কয়েকটি ইনিংসে নিজের সামর্থ্যের জানান আগেই দিয়েছিলেন লিটন। টি-টোয়েন্টিতেও মাঝেমাঝে দেখা গেছে ঝলক। কিন্তু ওয়ানডেতে অনেক সুযোগেও মিলছিল না আলোর রেখা। সারাক্ষণই এই বাদ পড়েন, এই বাদ পড়েন অবস্থা। এশিয়া কাপটা ছিল তার ফেরার মিশন। সেই মিশনে প্রথম তিন ম্যাচে একেবারেই ব্যর্থ তার ব্যাট। আফগানিস্তানের বিপক্ষে গিয়ে পেয়েছিলেন তাল,  দারুণ ব্যাট করে ৪১ রানে পৌঁছেই আত্মঘাতি শটে সব অর্জন ধূলিসাৎ করে ফিরেছেন। পাকিস্তানের বিপক্ষে ফাইনালে উঠার পথেও ব্যর্থ।

ওপেনিংয়ে ভাল করতে পারছেন না আর কেউই। এই সংকট কালে ভারতের বিপক্ষে ফাইনালেও টিকে যান তিনি। জানতেন ব্যর্থ হলেই দোয়ার বন্ধ হয়ে যাবে। শেষ সুযোগটা কাজে লাগিয়েছেন দারুণভাবে। প্রথম ফিফটিতেই তাণ্ডব তুলেছেন বেশি। ৩৩ বলে পৌঁছান ফিফটিতে। ড্রেসিং রুমের বারান্দায় এসে মাশরাফি মর্তুজা ইশারা করছিলেন ইনিংস বড় করার।  পরের বলেই ক্যাচ দিয়ে ভাগ্য পরীক্ষায় উৎরে আর থামেননি। অদ্ভুত সুন্দর সব সুইপ খেলেছেন, পুল লাগিয়েছেন মাঝ ব্যাটে। ডাউন দ্য উইকেটে এসে সোজা ব্যাটে সীমানা পার করেছেন নিখুঁতভাবে। মাশরাফির জুয়ায় ওপেন করতে নামা মেহেদী হাসান মিরাজকে পাশে নিয়ে গড়েছেন ১২০ রানের জুটি। ওয়ানডেতে উদ্বোধনী জুটিতে যা ভারতের বিপক্ষে সর্বোচ্চ। পুরো ইনিংসে ১২ চারের সঙ্গে লিটন মেরেছেন ২ ছক্কা।

ক্যারিয়ারের প্রথম তিন অঙ্কে যান ৮৭ বলে। তিনি নব্বুইয়ের ঘরে থাকতেই দিক হারানো শুরু বাংলাদেশের। প হতভম্ব হয়ে অনেকক্ষণ থেমে থাকতে হয়েছে, পরের ৫০ নিতে তাই লেগেছে ৫৪ বল। যোগ্য সঙ্গ পেলে হয়ত আরও আগ্রাসি হতে পারত তার ব্যাট।

আউট হয়েছেন কিছুটা হাওয়া গরম করে। চায়নাম্যান কুলদীপ যাদবের গুগলিতে পরাস্ত হয়ে ক্রিজ থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন। বল ধরে দ্রুত স্টাম্প ভেঙে দেন মহেন্দ্র সিং ধোনি। রিপ্লে দেখে মনে হয়েছে লাইনের উপর ছিল তার পায়ের একটা অংশ, সামান্য কোন অংশ লাইনের ভেতরে ছিল না পরিষ্কার হওয়া যায়নি। টিভি আম্পায়ার রড টাকার অনেকক্ষণ দেখেও রায় দেন লিটনের বিপক্ষে। লিটন বেনিফিট অব দ্য ডাউট পেতে পারেন কিনা, এই প্রশ্ন অবশ্যই উঠতেই পারে।

তবে ম্যাচের যা ছবি, সেই প্রশ্ন উঠার সুযোগ কম। লিটনের এনে দাওয়া দারুণ সুযোগ হেলায় নষ্ট করেছেন বাকিরা। বিশেষ করে দুই সিনিয়র ব্যাটসম্যান মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও মুশফিকুর রহিম নিজেদের বিলিয়ে দেন বাজে শটে। লিটনের অমন সেঞ্চুরির দিনে বাংলাদেশ আড়াইশ করতে পারে না, কারণ দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সৌম্য সরকারের ৩৩, ওপেনিংয়ে নেমে মেহেদী হাসান মিরাজ করেছিলেন ৩২। বাকি আর কেউ দুই অঙ্কেও যেতে পারেননি।

 

Comments