ভারতের ঘাড়ের ওপর চীনা বিমানঘাঁটি

Lhasa
চীন নিয়ন্ত্রিত তিব্বতের রাজধানী লাসায় পোতালা প্রাসাদে দেশটির ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির ৯৬তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তোলা হচ্ছে চীনের জাতীয় পতাকা। ছবি: রয়টার্স ফাইল ফটো

ভারতের সঙ্গে চীনের রয়েছে দীর্ঘ স্থলসীমান্ত। ভারতের পশ্চিমে সেই অধিকৃত কাশ্মির থেকে শুরু করে পূর্বে বিরোধপূর্ণ অরুণাচল প্রদেশ পর্যন্ত প্রায় তিন হাজার কিলোমিটারের সীমানা রয়েছে মহাপ্রাচীরের দেশটির সঙ্গে।

চীন-ভারত সীমান্ত ভূপ্রাকৃতিকভাবে যেমন বিপদসংকুল, ভূরাজনৈতিকভাবেও তেমনি সংঘাতময়। তাই ভারতের ঘাড়ের ওপর চীনাদের বিমানঘাঁটি বানানো তাজমহলের দেশটির জন্যে অস্বস্তিকর বটে।

গতকাল (৩ অক্টোবর) ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস জানায়, দিল্লি থেকে মাত্র সাড়ে ১৩শ কিলোমিটার দূরে চীন নিয়ন্ত্রিত তিব্বতের রাজধানী লাসায় তৈরি করা হয়েছে একটি বিমানঘাঁটি। লাসার গংগার বিমানবন্দরটিকে চীনা সরকার একটি অত্যাধুনিক সামরিক বিমানঘাঁটিতে রূপান্তরিত করেছে।

প্রতিবেদনটিতে আরও বলা হয়, এই বিমানঘাঁটিতে ভূগর্ভস্থ বোমা-নিরোধক আশ্রয়কেন্দ্র গড়ে তোলা একটি ‘নতুন ঘটনা’। তবে, রাশিয়ার সীমান্তেও চীনের গণমুক্তি ফৌজ বা পিপলস লিবারেশন আর্মির এমন অবকাঠামো রয়েছে।

সূত্রের বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যমটি জানায়, প্রাথমিকভাবে এই বিমানবন্দরটিকে আঞ্চলিক যোগাযোগ বাড়ানোর জন্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হলেও পরবর্তীতে দেখা যায় চীন সরকার এটিকে একটি সামরিক স্থাপনায় পরিণত করেছে।

বিমানবন্দরের আশপাশের পাহাড়-পর্বতের গভীরে তৈরি করা হয়েছে বোমা-নিরোধক হ্যাঙ্গার। এই হ্যাঙ্গারে রাখা যাবে অন্তত ৩৬টি যুদ্ধবিমান।

সাম্প্রতিক সময়গুলোতে চীনের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক ভালো হওয়ার খবর আসছিলো। ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং চীনা রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং দুজনেই দেশ দুটির মধ্যে সুসম্পর্কের প্রতীজ্ঞা করেছেন।

তবে বিশ্লেষকদের মতে লাসায় চীনের এমন পদক্ষেপ নেওয়া হয় গত বছরের দোকলাম ঘটনার পর। চীন-ভারত ও ভুটানের সীমান্তে দোকলাম এলাকায় আঞ্চলিক শক্তিধর দেশ দুটি নেমে ছিলো শক্তি পরীক্ষায়। তাদের সেনাদের দাঁড় করানো হয়েছিলো মুখোমুখি। আরেকটি চীন-ভারত যুদ্ধের আশঙ্কাও সৃষ্টি হয়েছিলো তখন।

একটি সূত্র হিন্দুস্তান টাইমসকে বলে, “আপনি যখন বোমা নিরোধক হ্যাঙ্কার নির্মাণ করবেন তখন বুঝতে হবে যে এর মধ্যে শত্রুতার সম্ভাবনা রয়েছে। অর্থাৎ, যুদ্ধবিমানগুলো খোলা আকাশের নিচে রাখা নিরাপদ নয় তখনই যখন সেখানে শত্রুর আক্রমণের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। ধারণা করা হচ্ছে- আক্রমণের সময় যেন বিমানগুলোকে ভূগর্ভস্থ বোমা-নিরোধক আশ্রয়কেন্দ্রে পাঠিয়ে দেওয়া যায় সেই ভাবনা থেকেই এমন অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে।”

তবে বসে নেই ভারতও। খবরে প্রকাশ, দেশটির বিভিন্ন বিমানঘাঁটিতে বসানো হয়েছে ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপণ যোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র (এসএএম)। আর জরুরি ভিত্তিতে সিকিম রাজ্যে স্থাপিত শিগাৎসে বিমানঘাঁটিটিকে করা হয়েছে আরও বিস্তৃত। এমনকি, নতুন দিল্লির নিরাপত্তা অবকাঠামোতে বায়ুসেনাদের জন্যে করা হয়েছে বোমা-নিরোধক হ্যাঙ্গার।

ভারতের মন্ত্রিসভা এবং জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের পরামর্শক সংস্থা এনএসএবি-র সদস্য লেফটেনেন্ট জেনারেল এসএল নরসিংহ বলেন, “চীনের মতো ভারতকেও তার নিরাপত্তা অবকাঠামো বাড়াতে হবে।”

তাই ভারতও এর উত্তর সীমান্তে তথা চীন সীমান্তে অ্যাডভান্সড ল্যান্ডিং গ্রাউন্ড (এএলজি) ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটাচ্ছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় অরুণাচল প্রদেশে নির্মিত ওয়ালং, মেচুকা, তুতিং, পাসিঘাট এবং জিরো বিমানাঙ্গণগুলোকে নতুন করে সাজিয়ে তোলা হচ্ছে।

এদিকে, সংবাদমাধ্যমটির পক্ষ থেকে নতুন দিল্লিতে অবস্থিত চীনা দূতাবাসে যোগাযোগ করা হলে লাসার বিমানবন্দরকে বিমানঘাঁটিতে পরিণত করার বিষয়ে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

আরও পড়ুন:

ভারতের রাশিয়া ‘জয়’, মনঃক্ষুণ্ণ আমেরিকা

Comments

The Daily Star  | English

Iran fires back at Israel after onslaught targets nuclear facilities

Air raids sirens and explosions rang out across Israel after Prime Minister Benjamin Netanyahu took to the airways to issue a word of caution, saying he expected "several waves of Iranian attacks" in response

15m ago