রায় বিষয়ে আওয়ামী লীগ- বিএনপির দুই আইনজীবীর অবস্থান
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদীন। অ্যাডভোকেট আবদুল মতিন খসরু বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক আইনমন্ত্রী। দ্য ডেইলি স্টার অনলাইনের সঙ্গে এই দুই আইনজীবী কথা বলেছেন ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায় প্রসঙ্গে।
‘তারেক রহমানকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়ার মতো কোনো প্রমাণ ছিল না’
অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায়ের বিষয়ে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?
জয়নুল আবেদীন: যে রায় হয়েছে, এটি সরকারের প্রতিহিংসার প্রতিফলন। এটি একটি ফরমায়েশি রায়। তারেক রহমানকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়ার মতো কোনো তথ্য প্রমাণ ছিল না। মামলার দুই নম্বর সাক্ষী আদালতে জবানবন্দি দেননি। এই মামলায় তারেক রহমানকে যিনি জড়িয়েছেন, সেই মুফতি হান্নান আদালতের সামনে সাক্ষ্য দিতে পারেননি। তার আগেই অন্য একটি মামলায় তার ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে।
গ্রেনেড হামলার পর তৎকালীন বিএনপি সরকার ঠিকমতো তদন্ত করেনি। বিভ্রান্তিকর তদন্ত করেছে। তারপর দীর্ঘ সময় নিয়ে তদন্ত হয়েছে, বিচারিক প্রক্রিয়া চলেছে। এতদিন পর এসে কেন আপনারা একথা বলছেন?
জয়নুল আবেদীন: তারেক রহমানের বিরুদ্ধে কোনো প্রমাণই নেই। মামলায় যে ২০৫ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন তারা কেউ বলেননি যে, এই ঘটনায় তারেক রহমান জড়িত।
আপনাদের পরবর্তী পদক্ষেপ কী?
জয়নুল আবেদীন: রায়ের বিরুদ্ধে আমরা উচ্চ আদালতে আপিল করব। তারেক রহমান যে নির্দোষ, আশা করি উচ্চ আদালতে আমরা তা প্রমাণ করতে পারব।
সাজাপ্রাপ্ত তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনার কথা বলছে সরকার। আপনার কী মনে হয়?
জয়নুল আবেদীন: বন্দী বিনিময়ের আওতায় সরকার তারেক রহমানকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করতে পারে। সেক্ষেত্রে কিভাবে কী করবে না করবে এটা সরকারের ব্যাপার।
‘বাবর, পিন্টুর বিরুদ্ধে যে অভিযোগ, তারেক রহমানের বিরুদ্ধেও একই অভিযোগ’
অ্যাডভোকেট আবদুল মতিন খসরু
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায়ের ব্যাপারে আপনার কী প্রতিক্রিয়া?
আবদুল মতিন খসরু: রায়ে আমরা সন্তুষ্ট। কিন্তু তারপরও উচ্চ আদালতে আমরা আপিল করব কারণ- লুৎফুজ্জামান বাবর এবং আব্দুস সালাম পিন্টুর বিরুদ্ধে যে অভিযোগ, তারেক রহমানের বিরুদ্ধেও একই অভিযোগ। সুতরাং একই অভিযোগে কারো মৃত্যুদণ্ড হবে আর কারো যাবজ্জীবন হবে, এই ব্যাপারটিকে আমরা বৈষম্যমূলক মনে করছি। ফলে এই বৈষম্য দূর করতেই রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করবে।
এই রায়কে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার প্রতিফলন ও ফরমায়েশি রায় হিসেবে উল্লেখ করেছে বিএনপি।
আবদুল মতিন খসরু: মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মন্তব্যটি ভয়াবহ ক্ষতিকর। একজন দায়িত্বশীল মানুষ এ ধরনের কথা বলতে পারেন না। আদালত একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান। আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে একজন দায়িত্বশীল মানুষের কাছ থেকে এ ধরনের মন্তব্য শোভা পায় না। এটা কোনো রাজনৈতিক রায় নয়। এ রায়ের জন্য ১৪ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে। ২০৫ জন মানুষের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে।
বিএনপির লজ্জা পাওয়া উচিত। তাদের আমলে এ ঘটনার বিচার হয়নি। বরং তারা এ ঘটনার তদন্ত কাজে বাধা দিয়েছে, বিচার করার দিকে তো যায়ইনি। প্রথমত, তারা ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ব্যবহৃত আর্জেস গ্রেনেডসহ অন্যান্য আলামত উদ্দেশ্যমূলকভাবে ধ্বংস করে ফেলেছে। দ্বিতীয়ত, আলামত সংরক্ষণ করতে বলায় তদন্তকারী কর্মকর্তা মেজর (অব.) শামসুদ্দিন আহমেদ চৌধুরী শামসকে বরখাস্ত করেছে। তৃতীয়ত, হামলায় ২৪ জন মানুষের মৃত্যু হলো, কিন্তু এ নিয়ে সংসদে কোনো আলোচনাই হয়নি। এত বড় ঘটনা নিয়ে সংসদে আলোচনা তুলতে বিরোধীদলকে অনুমতি পর্যন্ত দেননি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। এতেই পরিষ্কার হয়ে যায় যে, পুরো দলটিই আসলে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত। রাষ্ট্রীয় নির্দেশনাতেই হামলাটি পরিচালিত হয়।
মামলায় সাজাপ্রাপ্ত ১৮ জন এখনও পলাতক রয়েছেন, তাদের ক্ষেত্রে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে?
আবদুল মতিন খসরু: দেশের বাইরে যারা পলাতক রয়েছেন তাদেরকে অবশ্যই ফিরিয়ে আনা হবে এবং অতিদ্রুত ফিরিয়ে আনতে সর্বাত্মক চেষ্টা করবে সরকার। লন্ডনে অবস্থানরত তারেক রহমানকে ফিরিয়ে আনতে আমরা ইন্টারপোলের সাহায্য নেব। ইতিমধ্যে ইন্টারপোলের সঙ্গে এ ব্যাপারে কথাও হয়েছে।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদীন বলেছেন, এ ঘটনায় তারেক রহমানের জড়িত থাকার কোনো প্রমাণ নেই। আপনি কি মনে করেন?
আবদুল মতিন খসরু: মুফতি হান্নানসহ ছয় জন সাক্ষী তারেক রহমানের বিরুদ্ধে জবানবন্দি দিয়েছেন। তারা সকলেই বলেছেন যে, এ ঘটনার মূল নির্দেশদাতা তারেক রহমানই। তার উৎসাহ এবং সুরক্ষার আশ্বাসেই অভিযুক্তরা তৎকালীন বিরোধী দলকে দেশ থেকে মুছে দিতে ছেয়েছিল।
Comments