‘যারা জোটে গেলেন তারা প্রায় সবাই কোনো না কোনো সময় আওয়ামী লীগের সঙ্গে ছিলেন’
![](https://tds-images-bn.thedailystar.net/sites/default/files/styles/big_202/public/feature/images/mohiuddin.jpg?itok=Qb8f-_h_×tamp=1539508128)
বিএনপির সঙ্গে ড. কামাল হোসেনের গণফোরামসহ মোট চারটি দলের ঐক্য গড়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়েছে গতকাল। শেষ মুহূর্তে এসে বিএনপির জামায়াত সংশ্রব নিয়ে আপত্তি তুলে অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন বিকল্প ধারা এতে যোগ দেওয়া থেকে বিরত থাকে। এ নিয়ে গত কয়েক দিন ধরেই দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে নানা আলোচনা। দেশের দৈনিক পত্রিকাগুলোতেও এ নিয়ে প্রকাশিত হচ্ছে খবর ও বিশ্লেষণ।
গতরাতে চ্যানেল আই-তে দৈনিক মানবজমিনের সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীর উপস্থাপনায় ‘আজকের সংবাদপত্র’ অনুষ্ঠানে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন ‘জাসদের উত্থান পতন: অস্থির সময়ের রাজনীতি’ খ্যাত লেখক ও গবেষক মহিউদ্দিন আহমদ।
আলোচনার প্রেক্ষাপটে মহিউদ্দিন আহমদ বলেন, ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর জামায়াতের দুজন নেতাকে মন্ত্রী করা হয়। যুদ্ধাপরাধ মামলায় তাদের ফাঁসি হয়েছে। সেসময় জামায়াতের ১৭ জন সাংসদ ছিল। তাদের সমর্থন নিয়েই বদরুদ্দোজা চৌধুরী রাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন। এখন পর্যন্ত তিনি জামায়াতের সঙ্গে রাজনীতি করার জন্য প্রকাশ্যে ক্ষমা চাননি বা বলেননি তিনি এর জন্য অনুতপ্ত।
এই জোটে কামাল হোসেনের মতো বঙ্গবন্ধুর আস্থাভাজন লোক থেকে শুরু করে অনেক মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন। কিন্তু এখন যদি বদরুদ্দোজা চৌধুরীরা মুক্তিযুদ্ধের চ্যাম্পিয়ন হয়ে যান সেটা তো বিশ্বাসযোগ্য না। আওয়ামী লীগ যে ধরনের কথা বলে- বদরুদ্দোজা চৌধুরীও সেরকম বক্তব্য দিয়ে জোটে না আসার বিষয়টি ব্যাখ্যা করছেন- পর্যবেক্ষণ মহিউদ্দিন আহমদের।
তিনি বলেন, কার কত ভোট আছে সেটি বিবেচনায় সব সময় জোট হয় না। কাউকে প্রতিপক্ষ হিসেবে রাখার চাইতে তাকে সঙ্গে রাখতে পারলেও বেশি গ্রহণযোগ্যতা পাওয়া যায়। এ কারণেই রাজনৈতিক দলের মধ্যে জোট হয়। …জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সবাই একমত যে আওয়ামী লীগ কর্তৃত্ববাদী রাজনীতি করছে, তাদের ভাষায় এটা দুঃশাসন। এটা থেকে তারা পরিত্রাণ চান। এটিকে আওয়ামী লীগ বিরোধী একটি বিস্তৃত জোট বলা চলে।
তিনি আরও বলেন, যারা জোটে গেলেন তারা প্রায় সবাই কোনো না কোনো সময় আওয়ামী লীগের সঙ্গে ছিলেন। আওয়ামী লীগ কেন তাদের কাছে টানতে পারল না? আওয়ামী লীগ কেন তার পুরনো মিত্রদের বিএনপির দিকে ঠেলে দিল? এর জবাবও আওয়ামী লীগকে দিতে হবে।
এই জোট গঠনকে স্বাগত জানিয়ে তিনি বলেন, এটা একদিক দিয়ে ভালো যে এর মাধ্যমে মেরুকরণটা আরও তীব্র হলো। এই জোট নির্বাচনী জোটের দিকে গেলে আরও আকর্ষণীয় নির্বাচন হবে।
মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীদের সম্পর্কে বি. চৌধুরীর বক্তব্য সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে তিনি বলেন, যুদ্ধদিনের কথা বইয়ের জন্য আমি শমসের মবিন চৌধুরীর সাক্ষাৎকার নিয়েছিলাম। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি চট্টগ্রামে লেফটেনেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তিনি জানিয়েছিলেন, ২৯ মার্চ পাকিস্তানি বাহিনীর একটি কমান্ডো দল গিয়েছিল আনোয়ারায়। এর নেতৃত্বে ছিলেন মেজর মান্নান। তারা এলোপাথাড়ি গুলি করে অনেক মানুষ মেরেছিলেন। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম এটা কোন মান্নান। তিনি বলেন, বিএনপির মান্নান। পরে তিনি বিকল্প ধারায় যোগ দিয়েছেন। এখন তিনি বিকল্প ধারার সাধারণ সম্পাদক। সেদিন তার ভূমিকা যাই হোক সেটা তো প্রশ্নবিদ্ধ।
‘আমার মনে হয় ইস্যুটা জামায়াত না। ইস্যুটা হচ্ছে তারা আওয়ামী লীগ বিরোধী একটি বড় প্ল্যাটফর্ম গড়তে যাচ্ছেন। সেখানে কে থাকবে কে থাকবে না সেই সিদ্ধান্ত আওয়ামী লীগ নিবে না।’
এই অবস্থায় বি. চৌধুরীর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ কোথায়? এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা তারা নীতিগত কারণে করেছেন (ঐক্যফ্রন্টে না যাওয়া) নাকি এটা তাদের পার্ট অব গেম সেটা আমরা জানি না। এটা জানার জন্য আমাদের আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে।
সবচেয়ে দুঃখজনক ব্যাপার হলো জামায়াতে ইসলামির মতো একটা স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তির দল এখনো থাকে কি করে? তাদেরকে নিয়ে কেন আমাদেরকে এখনও কথা বলতে হয়? প্রশ্ন রেখে আলোচনার ইতি টানেন মহিউদ্দিন আহমদ।
Comments