বিদেশিদের জন্যে দরজা খুলছে জাপান

বিশ্বের অন্যতম অর্থনৈতিক পরাশক্তি জাপানে কাজ করতে যাওয়ার ইচ্ছা রয়েছে অনেক বিদেশিরই। কিন্তু, সবাই জানেন যে এটি খুবই কঠিন। কেননা, জাপান সরকারের রক্ষণশীল নীতির কারণে মেধাবী ও দক্ষ শ্রমিকেরাও সেই দেশটিতে কাজের সুযোগ পান কম।
Vietnamese worker in Japan
জাপানের একটি কারখানায় কাজ করছেন একজন ভিয়েতনামী শ্রমিক। ছবি: দ্য জাপান টাইমসের সৌজন্যে।

বিশ্বের অন্যতম অর্থনৈতিক পরাশক্তি জাপানে কাজ করতে যাওয়ার ইচ্ছা রয়েছে অনেক বিদেশিরই। কিন্তু, সবাই জানেন যে এটি খুবই কঠিন। কেননা, জাপান সরকারের রক্ষণশীল নীতির কারণে মেধাবী ও দক্ষ শ্রমিকেরাও সেই দেশটিতে কাজের সুযোগ পান কম।

তবে, এবার কিছুটা হলেও সেই নীতি শিথিল করতে যাচ্ছে জাপান সরকার। সম্প্রতি, দ্য জাপান টাইমস পত্রিকার এক খবরে বলা হয়, বিভিন্ন পেশার সাধারণ শ্রমিকরাও যেনো তাদের পরিবার নিয়ে স্থায়ীভাবে জাপানে থাকতে পারেন সেই বিষয়টি নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করছে দেশটির সরকার।

সূর্যোদয়ের দেশটিতে জনসংখ্যা কমে যাওয়ার পাশাপাশি দক্ষ শ্রমিকের ব্যাপক ঘাটতি দেখা দেওয়ায় এখন যেনো নড়ে-চড়ে বসতে হচ্ছে দেশটির কর্তাব্যক্তিদের। এমন সম্ভাবনার আভাসকেই দেশটির অভিবাসন নীতিতে একটি বড় ধরনের পরিবর্তন হিসেবে মন্তব্য করেছে দৈনিকটি।

জাপানের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের সরকার আগামী এপ্রিলে নতুন একটি অভিবাসন ব্যবস্থা প্রচলন করতে যাচ্ছেন বলেও খবরটিতে উল্লেখ করা হয়। এর ফলে দেশটিতে ‘ব্লু কলার’ তথা সাধারণ শ্রমিকদের জন্যে দরজা খুলে দেওয়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি হতে পারে।

পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বিদেশি শ্রমিকরা যেনো জাপানে থাকতে পারেন সে জন্যে দুই ধরনের ‘আবাসিক ব্যবস্থা’-র কথা ভাবছে সরকার। কোনো একটি কাজে ১০ বছরের বেশি অভিজ্ঞতা রয়েছে এমন ব্যক্তিদের মধ্যে যারা সাবলীলভাবে জাপানি ভাষা ব্যবহার করতে পারবেন তাদের জন্যে থাকবে ‘প্রথম ব্যবস্থা’। নার্সিং কেয়ার, কৃষি এবং নির্মাণ শ্রমিকরা এই ব্যবস্থায় পড়বেন বলে একটি সূত্র সংবাদপত্রটিকে জানিয়েছে। সেসব বিদেশি শ্রমিকদের পাঁচ বছরের ভিসা দেওয়া হবে বলেও সূত্র উল্লেখ করে। তবে সেসব শ্রমিকরা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে করে আনতে পারবেন না।

‘দ্বিতীয় ব্যবস্থা’-য় থাকবেন বিশেষ দক্ষ বিদেশি শ্রমিকরা। তাদেরকে পরিবারসহ জাপানে থাকার অনুমতি দেওয়া হবে। তবে তাদের থাকতে হবে জাপানি ভাষায় কথা বলার দক্ষতা। এছাড়াও, যিনি যে মন্ত্রণালয়ের অধীনে কাজ করতে চান তাকে সেই মন্ত্রণালয়ের পরীক্ষায় পাশ করতে হবে।

যারা ‘প্রথম ব্যবস্থা’-য় জাপানে আসার অনুমতি পাবেন পরবর্তীতে তারা ‘দ্বিতীয় ব্যবস্থা’-র জন্যে আবেদন করার সুযোগ পাবেন। যদি সফল হোন তাহলে তারা জাপানে আরও ১০ বছর থাকার অনুমতি পাবেন।

বিদেশি শ্রমিক নিয়োগের বিষয়ে দেশটির বিচার মন্ত্রণালয় একটি সংস্থাকেই দায়িত্ব দেওয়ার কথা ভাবছে বলেও সংবাদমাধ্যমটি জানায়।

আরও জানায়, আগামী মাসে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া দেশটির জাতীয় গণপরিষদের বৈঠকে এ বিষয়ে আইন প্রণয়ন ও পুরনো আইনের পরিবর্তন করার বিষয়ে আলোচনা হতে পারে। নতুন ব্যবস্থার আওতায় বিদেশি শ্রমিকদের যাতে ভরণ-পোষণের খরচ যোগানো যায় সেই বিষয়টিও সরকারের পরিকল্পনায় রয়েছে।

জাপানের শ্রম মন্ত্রণালয়ের হিসাবে গত বছরের অক্টোবরে দেশটিতে বিদেশি শ্রমিকের সংখ্যা ছিলো ১০ লাখ ২৮ হাজার। যা ২০১২ সালে ছিলো ছয় লাখ ৮০ হাজার। অর্থাৎ, গত ছয় বছরে জাপানে বিদেশি শ্রমিকের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে। জাপানে পড়তে আসা শিক্ষার্থীদের মধ্যে যারা খণ্ডকালীন কাজের সুযোগ পাচ্ছেন তাদেরকেও এই হিসাবের মধ্যে রাখা হয়েছে।

এসব বিদেশি শ্রমিকদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রয়েছেন চীনের নাগরিকরা। তাদের সংখ্যা তিন লাখ ৭২ হাজার ২৬৩ জন। বাকিরা হলেন ভিয়েতনামী, ফিলিপিনো, ব্রাজিলীয় এবং নেপালি।

Comments