বৈঠক থেকে মাহবুব তালুকদারের বেরিয়ে যাওয়ার নেপথ্যে
নির্বাচন কমিশনের আরও একটি বৈঠক থেকে বেরিয়ে গিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার। আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে ঢাকায় নির্বাচন ভবনে এই বৈঠক চলছিলো। আজ (১৫ অক্টোবর) সকাল ১০টায় বৈঠক শুরু হওয়ার ১০ মিনিটের মাথায় তিনি ওয়াক আউট করেন।
পরে এক লিখিত বক্তব্যে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “গত বছরের আগস্ট থেকে অক্টোবর পর্যন্ত প্রায় তিন মাস নির্বাচন কমিশন অংশীজনের সঙ্গে সংলাপের আয়োজন করে। এতে একটি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল ছাড়াও সুশীল সমাজ, মিডিয়া, পর্যবেক্ষণকারী, নারীনেত্রী প্রমুখ আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন।”
ঐ সংলাপকে একপক্ষীয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, “নির্বাচন কমিশন তাদের বক্তব্য শোনা ছাড়া নিজেদের মতামত প্রদান করেনি। সবার সংলাপ সুদৃশ্য গ্রন্থাকারে প্রকাশ করা হলেও সংলাপের সুপারিশ বা প্রস্তাব সম্পর্কে এ পর্যন্ত কোনো আলোচনা হয়নি।”
সংলাপের কোনো কার্যকারিতা না দেখে তিনি ব্যক্তিগতভাবে উক্ত সংলাপ পর্যালোচনা করে কমিশন সভায় কয়েকটি প্রস্তাব পেশ করতে চেয়েছিলেন।
নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বলেন, “একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ও অংশীদারমূলক ও গ্রহণযোগ্য করার লক্ষ্যে ‘কতিপয় প্রস্তাবনা’ শিরোনামে আমি যা আলোচনা করতে চেয়েছিলাম আমাকে নির্বাচন কমিশন সভায় তা উপস্থাপনা করতে দেওয়া হয়নি।”
“অথচ বিগত ৮ অক্টোবর কমিশন সচিবালয় থেকে ইউ ও নোটের মাধ্যমে আমাকে আজকের সভায় তা উপস্থাপনার অনুরোধ জানানো হয়েছিলো। আমাকে আমার প্রস্তাবনা উপস্থাপনা করতে বলে তা উপস্থাপনা করতে না দেওয়ায় আমি অপমানিত বোধ করেছি,” যোগ করেন মাহবুব।
তার মতে, “বাক প্রকাশের স্বাধীনতা ও ভাব প্রকাশের স্বাধীনতা সংবিধান প্রদত্ত আমার মৌলিক অধিকার নির্বাচন কমিশন কোনোভাবেই আমার এই অধিকার খর্ব করতে পারে না। এমতাবস্থায় অনন্যোপায় হয়ে আমি নির্বাচন কমিশনের এ রকম সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ প্রদান করেছি এবং এর প্রতিবাদ স্বরূপ নির্বাচন কমিশন সভা বর্জন করেছি।”
যা ছিলো মাহবুব তালুকদারের পাঁচ দফায়?
নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদারের পাঁচ দফায় থাকা বিষয়গুলো নিচে হুবহু তুলে ধরা হলো:
১. জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সেনা মোতায়েন: আগের নির্বাচনগুলোতে সেনাবাহিনীর কার্যক্রম মূল্যায়ন করে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কীভাবে তাদের ব্যবহার করা যায় তা ঠিক করতে হবে।
২. অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন: অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হলে নির্বাচনে অনিয়মের পথ বন্ধ হয়। নির্বাচনে সকল দলের অংশগ্রহণ না হলে তা গণতন্ত্রের পূর্ণ বিকাশকে সমর্থন করে না। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কমিশন দ্বিপক্ষীয় ভিত্তিতে আলোচনা করতে পারে।
৩. নির্বাচনে নিরপেক্ষতা: নির্বাচনে নিরপেক্ষতা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের ওপর নির্ভর করে। নির্বাচনকালে সংসদ সদস্যদের নিষ্ক্রিয় রাখা নির্বাচন কমিশনের একার ওপর তা নির্ভর করে না। এতে সরকারের সহযোগিতা দরকার।
৪. নির্বাচন কমিশনের সক্ষমতা বৃদ্ধি: নির্বাচন কমিশনের যথেষ্ট ক্ষমতা আছে। কিন্তু, ক্ষমতা প্রয়োগে সীমাবদ্ধতাও আছে। সিটি করপোরেশন নির্বাচনগুলোতে দেখা গেছে রাজনৈতিক বাস্তবতায় কমিশন ক্ষমতা প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর ওপর খুব একটা নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে পারে না। ক্ষমতা প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে কীভাবে আরও নিয়ন্ত্রণাধীন করা যায়, তা দেখা উচিত।
৫. সরকারের সঙ্গে সংলাপ: জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সরকার নির্বাচন কমিশনের বড় অংশীজন। সংলাপে দেখা যায় কিছু বিষয় রাজনৈতিক বা সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভরশীল। এসব বিষয়ে সরকারের সঙ্গে সংলাপ আবশ্যক।
উল্লেখ্য, এর আগে গত ৩০ আগস্ট নির্বাচন কমিশনের বৈঠক থেকে ২০ মিনিট পরই বের হয়ে যান মাহবুব তালুকদার। জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের জন্য আরপিও সংশোধনের প্রস্তাব সংক্রান্ত আলোচনায় সেদিনও আপত্তি জানিয়েছিলেন তিনি।
আরও পড়ুন:
Comments