জাফরুল্লাহ চৌধুরীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর বিরুদ্ধে দায়েরকৃত সাধারণ ডাইরিটি (জিডি) রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে। মামলাটি ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) তদন্ত করছে।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী। ছবি: ফাইল ফটো

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর বিরুদ্ধে দায়েরকৃত সাধারণ ডাইরিটি (জিডি) রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে। মামলাটি ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) তদন্ত করছে।

গত ৯ অক্টোবর একটি বেসরকারি টেলিভিশনের টকশো অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধানের বিরুদ্ধে মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর বিরুদ্ধে গত বৃহস্পতিবার সেনা সদরের পক্ষ থেকে ক্যান্টনমেন্ট থানায় একটি সাধারণ ডাইরি (জিডি) করা হয়।

এই জিডিটি গত রোববার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হলে এটি রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হিসেবে গ্রহণ করে তদন্তের জন্য গোয়েন্দা(ডিবি) পুলিশকে স্থানান্তর করা হয়। সোমবার ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মো. আব্দুল বাতেন বাসসকে এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) ফজলুর রহমানকে এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নিযুক্ত করা হয়েছে।

এদিকে জিডির বিষয়ে জানতে চাইলে রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার(এসি) তাপস কুমার দাস বাসসকে জানান, সেনা সদর দফতরের আইন বিষয়ক উইংয়ের মেজর এম রকিবুল আলম বৃহস্পতিবার ডা. জাফরুল্লা চৌধুরীর বিরুদ্ধে ক্যান্টনমেন্ট থানায় একটি সাধারণ ডাইরি করেন।

টেলিভিশনে দেওয়া জাফরুল্লাহ চৌধুরীর বক্তব্যকে ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ ও ‘অসত্য’ বলে আখ্যায়িত করে গত শনিবার আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) পক্ষ থেকে প্রতিবাদ জানিয়ে বক্তব্য দেওয়া হয়। আইএসপিআর বলেছে, ডা. জাফরুল্লাহর দায়িত্বজ্ঞানহীন অসত্য বক্তব্য কেবল সেনাবাহিনীর প্রধান হিসেবে জেনারেল আজিজ আহমেদের সুনাম ও সামাজিক অবস্থানকে ক্ষুণ্ন করেনি, বরং তা সেনাবাহিনীর প্রধানের পদকে চরমভাবে হেয়প্রতিপন্ন করেছে।

সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ সম্পর্কে ডা. জাফরুল্লাহর বক্তব্য নিয়ে আইএসপিআরের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘বর্তমান সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ সম্পর্কে জনাব ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর বক্তব্য ছিল একটি দায়িত্বজ্ঞানহীন অসত্য বক্তব্য। কারণ, বর্তমান সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ চাকরিজীবনে কখনোই চট্টগ্রামের জিওসি বা কমান্ড্যান্ট হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন না। তিনি ২০১০ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০১১ সালের জুন পর্যন্ত কুমিল্লায় ৩৩ আর্টিলারি ব্রিগেডের ব্রিগেড কমান্ডার, ২০১১ সালের জুন থেকে ২০১২ সালের মে পর্যন্ত ঢাকার মিরপুরে ৬ স্বতন্ত্র এডিএ ব্রিগেডের ব্রিগেড কমান্ডার এবং ২০১২ সালের মে থেকে ২০১২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত কুমিল্লায় ৩৩ পদাতিক ডিভিশনের জিএসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বর্ণিত সময়ে চট্টগ্রাম বা কুমিল্লা সেনানিবাসে কোনো সমরাস্ত্র বা গোলাবারুদ চুরি বা হারানোর কোনো ঘটনা ঘটেনি। এখানে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, বর্তমান সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ তাঁর দীর্ঘ, বর্ণাঢ্য সামরিক চাকরিজীবনে কখনোই কোর্ট মার্শালের সম্মুখীন হননি।’

আইএসপিআর থেকে এই বক্তব্য আসার পর সংবাদ সম্মেলন করে জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘জেনারেল আজিজকে অসাবধানতাবশত কোনো মনঃকষ্ট দিয়ে থাকলে সে জন্য আমি পুনরায় আন্তরিক দুঃখ প্রকাশ করছি। উল্লেখ্য, আমি ইতিমধ্যে বিগত দুদিন কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে আমার বক্তব্যে ভুল শব্দচয়ন ও শব্দবিভ্রাটের বিষয়টি প্রকাশ করে সেনাপ্রধানের নিকট দুঃখ প্রকাশ করেছি।’ তিনি বলেন, সময় টেলিভিশনের বিশেষ অনুরোধে শারীরিক দুর্বলতা নিয়েই আমি ৯ অক্টোবর রাত ১০টায় তাদের একটি টক শোতে অংশ নিই। ওই টক শোতে অপর অতিথিরা ছিলেন সম্পাদক নাঈমুল ইসলাম খান এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য নূহ আলম লেলিন। আলোচনাকালে আমি দেশের বর্তমান সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ সম্পর্কে অসাবধানতাবশত একটি ভুল তথ্য উল্লেখ করেছিলাম। জেনারেল আজিজ একজন দক্ষ আর্টিলারি সেনা কর্মকর্তা। তিনি চট্টগ্রাম সেনানিবাসের ‘জিওসি’ ছিলেন না, ‘কমান্ড্যান্ট’ও ছিলেন না। কর্মজীবনের তিনি চট্টগ্রাম সেনাছাউনিতে আর্টিলারি প্রশিক্ষক ছিলেন। তার বিরুদ্ধে ‘কোর্ট মার্শাল’ হয়নি একবার ‘কোর্ট অব এনকোয়ারি’ হয়েছিল। ভুল বক্তব্য ও শব্দবিভ্রাটের জন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত এবং মর্মাহত। সেনাবাহিনী বা জেনারেল আজিজের সম্মানহানি করা আমার উদ্দেশ্য ছিল না এবং এরূপ কোনো অভিপ্রায়ও আমার নেই। আমাদের সেনাবাহিনীর গৌরবে আমি গর্বিত।’

Comments