ঐতিহাসিক এলাহাবাদ শহরের নাম পাল্টে দিলো বিজেপি

ভারতের ঐতিহাসিক এলাহাবাদ শহরের নাম পাল্টে দিয়েছে দেশটির উত্তরপ্রদেশ রাজ্যের বিজেপি সরকার। এখন এর নাম রাখা হয়েছে প্রয়াগরাজ।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো জানায়, গতকাল (১৬ অক্টোবর) ভারতের সবচেয়ে জনবহুল রাজ্য উত্তরপ্রদেশের ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকারের রাজ্য মন্ত্রিসভা মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের প্রস্তাব অনুযায়ী মুসলিম নাম এলাহাবাদ পাল্টে হিন্দু নাম প্রয়াগরাজ রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।
১৬ শতকের শেষের দিকে ভারতে মোঘল শাসনামলে এই শহরের প্রাচীন নাম প্রয়াগ পাল্টে এলাহাবাদ (আল্লাহবাদ) রাখা হয়েছিলো। সংস্কৃত শব্দ প্রয়াগের অর্থ হলো উৎসর্গ বা নৈবেদ্য। হিন্দু বিশ্বাস মতে, গঙ্গা ও যমুনা নদীর এই মোহনায় সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মা প্রথম নৈবেদ্য নিবেদন করেছিলেন।
উত্তরপ্রদেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী সিদ্ধার্থ নাথ সিং স্থানীয় গণমাধ্যমকে বলেন, “এই শহরটিকে আগে প্রয়াগরাজ নামে ডাকা হতো। যারা এই সিদ্ধান্তের বিরোধীতা করছেন তাদের মা-বাবার দেওয়া নাম বদলে দিলে কেমন লাগবে?”
এই সিদ্ধান্তে মন্ত্রিসভার সব সদস্য খুশি উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, “আজ থেকে শহরটিকে এলাহাবাদের পরিবর্তে প্রয়াগরাজ নামে ডাকা হবে।”
গঙ্গা-যমুনার এই মিলনস্থলে প্রতিবছর বিখ্যাত কুম্ভমেলার আয়োজন করা হয়। গত ২০১৩ সালে এক কোটির বেশি হিন্দু পুণ্যার্থীরা এই মেলায় অংশ নিয়েছিলেন।
ঐতিহাসিক শহরটির নাম পাল্টে দেওয়ার সরকারি সিদ্ধান্তকে দুঃখজনক বলে আখ্যায়িত করেছে বিজেপিবিরোধীরা। দেশটির বিরোধী কংগ্রেসের দলের একজন মুখপাত্র ওঙ্কার সিং বলেন, এই নাম পরিবর্তনের ফলে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে শহরটির ঐতিহাসিক ভূমিকাকে খাটো করা হয়েছে।
অন্যেরা বলছেন, নরেন্দ্র মোদি সরকার যে ভারতের বহুমাত্রিক পরিচয় ও মুসলিম ঐতিহ্য মুছে দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছেন এই নাম পাল্টানোর মাধ্যমে তা আবারো প্রমাণিত হলো।
এর আগে ২০১৭ সালে উত্তরপ্রদেশ সরকার রাজ্যটির একটি গুরুত্বপূর্ণ রেল স্টেশন মুঘলসরাইয়ের নাম বদলে হিন্দুত্ববাদী নেতা দীন দয়াল উপাধ্যায়ার নামে রাখে। এরপর, বেরেলি, কানপুর এবং আগ্রা বিমানবন্দরগুলোর নামে হিন্দুত্ববাদের ছাপ রাখার প্রস্তাব করা হয়। অথচ এই রাজ্যের ২২ কোটি জনসংখ্যার মধ্যে প্রায় ২০ শতাংশ মুসলমান।
এদিকে, ভারতে ৮০ শতাংশ হিন্দু জনগোষ্ঠীর মধ্যে হিন্দু্ত্ববাদ জাগিয়ে দিয়ে বিজেপি আগামী নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে আবারও ক্ষমতায় আসার পরিকল্পনা আঁটছে বলে মনে করছেন দেশটির রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
Comments