‘১৫ সেকেন্ডেই দেহগুলো ছিন্নভিন্ন করে দিয়ে গেল ট্রেন’
ভারতের পাঞ্জাবের অমৃতসরের জৌরা ফটক এলাকায় গতকাল শুক্রবার রাতে দশেরার রাবণের কুশপুতুল পোড়ানোর উৎসব দেখতে আসা মানুষের ওপর দিয়ে চলে যায় দ্রুতগতির যাত্রীবাহী ট্রেন। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৬১ জনে দাঁড়িয়েছে। প্রচণ্ড ভিড়ে সৃষ্ট হইচই আর বাজি পোড়ানোর কারণে ট্রেন আসার শব্দ শুনতে না পেয়েই এই দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে জানাচ্ছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।
মিন্টো নামের এক অভিবাসী শ্রমিক জানিয়েছেন, ‘আমরা ট্রেন আসার শব্দ শুনতে পাইনি। এ সময় অন্ধকার ছিল এবং প্রত্যেকের মনোযোগ ছিল রাবণের কুশপুতুল পোড়ানোর দিকে। হঠাৎ করেই ট্রেন চলে আসে।’
হতাহতদের বেশিরভাগই অভিবাসী শ্রমিক বলে জানান ওই প্রত্যক্ষদর্শী। তিনি বলেন, ‘পরিবারগুলো নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে।’
এ ঘটনার পর রেললাইনের আশপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা মৃতদেহ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন পরিচিতরা। অনেক শিশুসহ নিহতদের লাশ কয়েক ঘণ্টা ধরে সেখানেই পড়ে থাকে। স্থানীয়দের ক্ষোভের কারণে সেগুলোকে সরিয়ে নিতে বেশ বেগ পোহাতে হয় কর্তৃপক্ষের।
অপর এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, ‘মাত্র ১৫ সেকেন্ড সময়ের মধ্যেই মানুষের ওপর দিয়ে চলে যায় ট্রেন। রেললাইনের আশপাশে পড়ে থাকে ছিন্ন বিচ্ছিন্ন লাশ।’
জালান্ধর হয়ে অমৃতসরের দিকে ডিজেল মাল্টিপল ইউনিট (ডিএমইউ) ট্রেনটি সন্ধ্যা ৭টার দিকে হোশিয়ারপুর থেকে ছেড়ে আসে। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, দশেরার রাবন পোড়ানোর উৎসবটি এই সময়ের আগে শুরু হওয়ার কথা থাকলেও প্রধান অতিথি দেরিতে আসায় তা পিছিয়ে যায়।
পাদাম সিং ধিংগ্রা নামের এক ব্যবসায়ী জানান, ‘উৎসবটি শুরুর সময় নির্ধারিত হয়েছিল সোয়া ৬টায়। কিন্তু পাঞ্জাবের মন্ত্রী নভজ্যোত সিং সিধুর স্ত্রী নভজ্যোত কৌর দেরি করে আসায় অনুষ্ঠানের সময়সূচিতে হেরফের হয়। তার ভাষণ শেষ হওয়ার পরেই শুরু হয় রাবণের কুশপুতুল পোড়ানোর কাজ।
অপর এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেছেন, ‘এখানে রেললাইনের দুই পাশে কোনো নিরাপত্তা বেষ্টনী ছিল না। এমনকি উৎসবের আয়োজকেরা ট্রেন আসার কোনো সতর্কবার্তাও দেননি।’
ভিকি ঠাকুর নামে আরেক ব্যক্তি বলেন, এর আগে ওই এলাকায় কখনও রাবণ পোড়ানোর অনুষ্ঠান হয়নি। এতো বেশি সংখ্যক মানুষকে ঠাঁই দেওয়ার মতো জায়গা সেখানে ছিল না।
Comments