খাশোগি ইস্যুতে চাপ বাড়ছে সৌদি আরবের

ইস্তান্বুলে সৌদি কনসুলেটে নিহত সাংবাদিক জামাল খাশোগি ইস্যুতে যেনো আরও বেশি চাপের মধ্যে পড়ে গেছে সৌদি আরব। বিশেষ করে নিহত সাংবাদিকের মরদেহের অংশবিশেষ পাওয়া যাওয়ার খবরটি প্রচারিত হওয়ার পর এই চাপ বেড়ে গেছে বহুগুণ। এ ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্য তাদের প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করায় ইমেজ সংকটে পড়েছে মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশটি।
Saudi consular car
ইস্তান্বুলের সুলতানগাজি জেলায় একটি পার্কিং প্লেসে সৌদি কনসুলেটের একটি গাড়ি থেকে একটি ট্রাঙ্ক নামানো হচ্ছে। ছবি: হুরিয়াত ডেইলি নিউজের সৌজন্যে

ইস্তান্বুলে সৌদি কনসুলেটে নিহত সাংবাদিক জামাল খাশোগি ইস্যুতে যেনো আরও বেশি চাপের মধ্যে পড়ে গেছে সৌদি আরব। বিশেষ করে নিহত সাংবাদিকের মরদেহের অংশবিশেষ পাওয়া যাওয়ার খবরটি প্রচারিত হওয়ার পর এই চাপ বেড়ে গেছে বহুগুণ। এ ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্য তাদের প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করায় ইমেজ সংকটে পড়েছে মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশটি।

খাশোগির মরদেহের অংশবিশেষ উদ্ধার

সাংবাদিক জামাল খাশোগির মরদেহের অংশবিশেষ কনসুলেটের আবাসিক ভবন এলাকায় পাওয়া গেছে বলে খবরে প্রকাশ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সূত্রের বরাত দিয়ে ব্রিটিশ গণমাধ্যম স্কাই নিউজ গতকাল (২৩ অক্টোবর) জানায়, সৌদি কনসুল জেনারেলের বাসভবনের বাগানে নিহত সাংবাদিকের মরদেহের অংশাবিশেষ পাওয়া গেছে। খবরে বলা হয়, খাশোগির দেহ ‘কেটে টুকরো টুকরো’ করা হয়েছে এবং মুখমণ্ডল ‘বিকৃত’ করে দেওয়া হয়েছে।

এর আগে তুরস্কের রাষ্ট্রপতি রেসিপ তাইয়েব এরদোয়ান বলেন যে খাশোগির লাশ এখনো খুঁজে পাওয়া যায়নি। সৌদি সরকার যদি তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারে তাহলে তার মরদেহের বিষয়টিও তাদেরকেই নিশ্চিত করতে হবে।

এরদোয়ানের এমন বক্তব্যের পর স্কাই নিউজ এই খবরটি প্রচার করে।

খবরটি প্রচারের পর ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মের মুখপাত্র বলেন, “আমি খবরগুলো জানি। এগুলো খুবই বিরক্তিকর।… আমরা তুরস্কের তদন্তের পুরো প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার জন্যে অপেক্ষা করছি।”

পরিত্যক্ত সুটকেসে জামা

এদিকে, তুরস্কের প্রভাবশালী দৈনিক হুরিয়াত ডেইলি নিউজ গতকাল জানায়, ইস্তান্বুলের সুলতানগাজি জেলায় একটি পার্কিং প্লেসে সৌদি কনসুলেটের ফেলে রাখা একটি গাড়ির ভেতরে একটি ট্রাঙ্ক পাওয়া গিয়েছে। সেই ট্রাঙ্কের মধ্যে পাওয়া গিয়েছে দুটি সুটকেস। আর সেই সুটকেসে মিলেছে কয়েকটি জামা।

কনসুলেটের একজন কর্মচারীর বরাত দিয়ে পত্রিকাটি জানায়, গত ৭ অক্টোবর ৩৪ সিসি ১৭৩৬ কূটনৈতিক নম্বর প্লেটের মার্সিডিজ গাড়িটি মোহাম্মদ নামের একজন সৌদি কর্মকর্তা চালিয়ে নিয়ে এই পার্কিং প্লেসে আসেন। পত্রিকাটি আরও জানায়, আগেও কয়েকবার দূতাবাসের চালক গাড়িটি চালিয়ে এখানে এসেছিলেন। তবে, সেদিন (৭ অক্টোবর) সেই কর্মকর্তা নিজেই গাড়িটি চালিয়েছিলেন।

এদিকে গত ১৮ অক্টোবর সেই কর্মকর্তা ৩৪ সিসি ২৬৬৫ কূটনৈতিক নম্বর প্লেটের একটি বিএমডব্লু চালিয়ে সেই স্থানে আসেন এবং গাড়িটি রাখেন আগের সেই মার্সিডিজ গাড়িটির সামনে। সেসময় তিনি তিনটি সুটকেস গাড়ি থেকে বের করে মার্সিডিজ গাড়িটির ভেতরে রাখেন। তিনটি সুটকেস মধ্যে দুটির আকৃতি বেশ বড় বলে উল্লেখ করা হয় হুরিয়াত প্রতিবেদনে।

সেই কর্মচারী সেই কর্মকর্তাকে রসিকতা করে প্রশ্ন করেন, “এর মধ্যে খাশোগির মরদেহ নেই তো?” আর সেই কর্মকর্তা হেসে উত্তর দেন, “না”।

খাশোগির পরিবারকে এরদোয়ানের সান্ত্বনা

রাষ্ট্রপতির দপ্তরের সূত্রের বরাত দিয়ে দৈনিক হুরিয়াত জানায়, গতকাল এরদোয়ান টেলিফোনে নিহত খাশোগির পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তার হত্যার রহস্য উদ্ঘাটনে তুরস্ক সব ধরনের চেষ্টা চালিয়ে যাবে বলেও তিনি তাদেরকে আশ্বাস দেন। সেসময় তিনি খাশোগির ছেলে আব্দুল্লাহর সঙ্গেও কথা বলেছেন বলে সূত্র জানায়।

যুক্তরাষ্ট্রের হুমকি

জামাল খাশোগির মরদেহের অংশবিশেষ কনসুলেটের আবাসিক ভবন এলাকায় পাওয়া গেছে বলে খবর প্রকাশিত হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র বেশ ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। দেশটির রাষ্ট্রপতি ও উপ-রাষ্ট্রপতি দুজনেই পৃথক বার্তায় তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএন জানায়, রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প এই ঘটনাটিকে ‘জঘন্যতম’ হিসেবে উল্লেখ করে একে ‘ধামাচাপা’ দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন।

খাশোগির হত্যাকাণ্ডের ফলে যে কূটনৈতিক সংকট সৃষ্টি হয়েছে তাতে ট্রাম্প খুব বিরক্ত হয়েছেন বলেও প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়।

শুধু দেশটির রাষ্ট্রপতিই নন, উপরাষ্ট্রপতি মাইক পেন্সও তার বিরক্তি প্রকাশ করেছেন। দ্য ওয়াশিংটন পোস্টকে তিনি বলেন, “এমন বর্বর হত্যাকাণ্ডের জন্যে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” তবে কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে তা তিনি উল্লেখ করেননি। পেন্স খাশোগির পরিবারের প্রতি সহমর্মিতাও প্রকাশ করেন।

এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে সৌদি রাজ পরিবারের সদস্যদের জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে কোনো নিষেধাজ্ঞা জারি করা হবে কী না এমন প্রশ্নের জবাবে উপরাষ্ট্রপতি বলেন, “বিষয়টি ট্রাম্পের ওপর নির্ভর করবে।”

আরও পড়ুন:

খাশোগি হত্যার নির্দেশ গিয়েছিল স্কাইপে!

নকল খাশোগি, জুতা দেখে যায় চেনা

Comments

The Daily Star  | English

Abu sayed’s death in police firing: Cops’ FIR runs counter to known facts

Video footage shows police shooting at Begum Rokeya University student Abu Sayed, who posed no physical threat to the law enforcers, during the quota reform protest near the campus on July 16. He died soon afterwards.

5h ago