পাকিস্তানের কাছে নিগারদের বিশাল হার
শুরুতেই উইকেট হারিয়ে বিপর্যয়ে পড়া বাংলাদেশের ব্যাটিং ধুঁকতে থাকল পুরোটা সময়। পাকিস্তানি বোলারদের তেমন কোন জবাব দিতে পারলেন না নিগার সুলতানা জ্যোতিরা। পরে মামুলি পুঁজি নিয়ে বোলাররাও দেখাতে পারলেন না ঝাঁজ। বাংলাদেশের মেয়েদের রীতিমতো উড়িয়ে দিল বিসমাহ মারুফের দল।
সোমবার সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে এশিয়া কাপের ম্যাচে কোন লড়াই জমাতে পারেনি বাংলাদেশ। ম্যাচ হেরেছে ৯ উইকেটে। থাইল্যান্ডকে উড়িয়ে আসর শুরু করা বাংলাদেশ দ্বিতীয় ম্যাচে নিজেরা উড়ে গেল পাকিস্তানের কাছে।
আগে ব্যাট করে চরম ব্যাটিং বিপর্যয়ের পর বাংলাদেশ জড়ো করে কেবল ৭০ রান। ওই রান টপকাতে ১২.২ ওভারের বেশি খেলতে হয়নি পাকিস্তানিদের। দলকে জিতিয়ে ৩৫ বলে ৩৬ রানে অপরাজিত থাকেন সিদ্রা আমিন। চার মেরে ম্যাচ শেষ করা বিসমাহ করেন ১২ রান।
অল্প রানের পুঁজিতে শুরুতেই উইকেট নিতে হতো, রান আটকে বাড়াতে হতো চাপ। কিন্তু দলের সেরা দুই বোলার সালমা খাতুন ও নাহিদা আক্তার নিজেদের প্রথম মোমেন্টাম দিয়ে দেন পাকিস্তানি ব্যাটারদের।
সালমার প্রথম ওভার থেকেই দুই চারে চলে আসে ১৩ রান। প্রথম চারটি অবশ্য ফিল্ডিং ব্যর্থতায়। পরেরটি লেগ স্টাম্পের বাইরে করে মার খান অভিজ্ঞ বোলার। তৃতীয় ওভারে বল করতে আসা নাহিদা জায়গায় বল রাখতে পারেননি। তার ওভার থেকে আসে ৯ রান। ৩ ওভার শেষে পাকিস্তানের স্কোর দাঁড়ায় বিনা উইকেটে ২৩। ৩ ওভার শেষে বাংলাদেশের অবস্থা ছিল ৩ রানে ২ উইকেট। রানের চাকা সচল রাখা পাকিস্তানি ওপেনাররা পাওয়ার প্লের ৬ ওভারেই নিয়ে নেন ৪০ রান। ম্যাচের ফল তখন কেবল আনুষ্ঠানিকতার বিষয়।
পাকিস্তানি ওপেনারদের বাংলাদেশ বিচ্ছিন্ন করতে পারে অষ্টম ওভারে। ১৯ বলে ১৪ রান করে মুনিবা আলি ফেরেন কট বিহাইন্ড হয়ে। ততক্ষণে স্কোরবোর্ডে এসে গেছে ৪৯ রান। ম্যাচ জিততে কেবল ২২ চাই তাদের।
আগ্রাসী খেলতে থাকা সিদ্রার সঙ্গে নেমে বাকি কাজ সারেন পাক অধিনায়ক বিসমাহ।
আগের রাতের বৃষ্টিতে সিলেটের ভেজা মাঠে আগে ব্যাটিং ছিল চ্যালেঞ্জিং। টস হেরে সেই কঠিন চ্যালেঞ্জে পড়ে খাবি খায় স্বাগতিকরা। শুরু থেকে একের পর এক উইকেট পতন, রানরেটের মন্থর গতিতে চরম বিপাকে পড়ে বাংলাদেশ।
প্রথম ওভারেই পেসার ডায়না বেগের বলে টেনে খেলতে গিয়ে বোল্ড হন শামিমা সুলতানা। আগের ম্যাচে ঝড় তুলা এই ব্যাটারের আউটে বড় ধাক্কা খায় স্বাগতিকরা। সাদিয়া ইকবালের বাঁহাতি স্পিনে পরের ওভারে বোল্ড হয়ে যান ফারজানা হক পিংকি। রুমানা আহমেদকে চারে নামিয়ে ফল আসেনি। ডায়নার সোজা বলে এলবিডব্লিউতে বিদায় তিনিও। পঞ্চম ওভারে মাত্র ৩ রান তুলে ৩ উইকেট হারিয়ে বসে বাংলাদেশ।
চরম বিব্রতকর পরিস্থিতি এড়াতে চেষ্টা চালান জ্যোতি। লতা মন্ডলকে নিয়ে চতুর্থ উইকেটে আনেন ২৪ রানের জুটি। এটিই পরে হয়ে থাকে ইনিংস সর্বোচ্চ জুটি। ডায়নাকে ফ্লিকে ও কাভার ড্রাইভে দুই চার মারার পর কিছুটা অক্সিজেন জুগিয়েছিলেন জ্যোতি। স্পিনারের বল এগিয়ে এসে চার পান লতাও। এই ধারা অব্যাহত থাকেনি। দশম ওভারে ফিরে যান লতাও।
দশ ওভারে শেষে দলের স্কোর দাঁড়ায় ৪ উইকেটে ২৭। অধিনায়ক জ্যোতি আরও কিছুটা লড়াই চালিয়ে থামেন। নিধা দারের অফ স্পিনে পেছনের পায়ে খেলতে গিয়ে এলবিডব্লিউতে কাটা পড়েন তিনি। ওমাইনা সোহাইলের বলে স্লগ সুইপে বেশ ভালো সংযোগ করেছিলেন সুবহানা মুশতারি। কিন্তু ডিপ স্কয়ার লেগে দাঁড়ানো ফিল্ডার বাউন্ডারি লাইনে লুফে নেন তার ক্যাচ। রিতু মনি নেমে দুই রানের চেষ্টায় কাটা পড়েন রান আউটে। ১৮তম ওভারে রিতুর রান আউটের বৃষ্টিতে বন্ধ হয়ে যায় খেলা। আবার খেলা শুরু হলে শেষ ১৫ বলে বাংলাদেশ যোগ করতে পারে আরও ১৩ রান। অভিজ্ঞ সালমা দলের হয়ে সর্বোচ্চ ২৯ বলে করেন ২৪।
এই মামুলি পুঁজি নিয়ে বিন্দুমাত্র লড়াই করতে পারেনি বাংলাদেশের মেয়েরা। টি-টোয়েন্টিতে এই নিয়ে পাকিস্তানের সঙ্গে ১৬ ম্যাচ খেলে ১৫টিতেই হারলেন সালমা, জ্যোতিরা।
Comments