‘লিঙ্গ পরিচয় সরিয়ে নিজের ভূমিকাটাই দেখাতে চেয়েছি’

Gayathrii Venugopalan & GS Laxmi
আম্পায়ার গায়ত্রী ভেনুগোপালান ও ম্যাচ রেফারি জেএস লক্ষ্মী। ছবি: একুশ তাপাদার

এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল শুরুতেই জানিয়েছিল এবারের নারী এশিয়া কাপে ম্যাচ পরিচালনায় থাকবেন কেবল নারীরাই। ৯ আম্পায়ার ও ২ ম্যাচ রেফারির সবাই তাই নারী। ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা এমনকি কাতারেরও একজন আছেন। তবে এই তালিকায় নেই বাংলাদেশের কেউ। দায়িত্ব পালন করতে এসে ভারতের ম্যাচ রেফারি জিএস লক্ষ্মী ও আম্পায়ার গায়ত্রী ভেনুগোপালান জানিয়েছেন কীভাবে একজন বাংলাদেশি নারীও আসতে পারেন এই পেশায়, শুনিয়েছেন তাদের যাত্রা পথের গল্প।

২০১৯ সালে প্রথম নারী ম্যাচ রেফারি হয়ে ছেলেদের ওয়ানডে ম্যাচ পরিচালনা করে ইতিহাস গড়েন লক্ষ্মী। মেয়েদের আইসিসির বড় সব ইভেন্টেই নিয়মিত মুখ তিনি। তবে প্রথমবার পুরুষদের খেলা পরিচালনা করার পর তার আত্মবিশ্বাসের স্তর আরও বেড়ে যায়,  'আমার প্রথম অ্যাসাইনমেন্ট ছিল টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ বাছাই ২০১৯ সালে। তখন আমি কিছুটা স্নায়ুচাপে ভুগছিলাম। প্রথম ম্যাচ পরিচালনার পর মনে হয়েছে এটা নারী-পুরুষ ইস্যু না। এটা একটা পেশা যেখানে আসা যায়। অন্য সব কিছুর মতো এখানে একটা দায়িত্ব আছে, সেটা পালন করতে হবে। সাময়িক স্নায়ুচাপের পর একদম সব কিছু স্বাভাবিক ও সাবলীল হয়ে যায়।'

২০১৩ সালে আম্পায়ারিং শুরু করেন গায়ত্রী ভেনুগোপালান। ২০১৯ সালে আসেন বিসিসিআইর' আওতায়। এবার এশিয়া কাপে আম্পায়ার হিসেবে দায়িত্ব পালন করা গায়ত্রী কণ্ঠেও লিঙ্গ পরিচয়ের ঊর্ধ্বে থেকে দক্ষতা ও পেশাদারিত্বেরই প্রাধান্য। বাংলাদেশে কারো এই অবস্থায় আসতে হলে তাই কিছু মনোভাবের কথা মাথায় রাখতে বললেন তিনি,  'প্রতিটি দেশেরই নিজস্ব সেটআপ ও প্রক্রিয়া আছে। অবশ্যই সাংস্কৃতিক ভিত্তিটা একটা ভূমিকা রাখে। আমি যখন শুরু করি তখন মাঠে নেমে ভেবেছি আমি একজন আম্পায়ার। পুরুষ আম্পায়ার, নারী আম্পায়ার এরকম কোন চিন্তা আসেনি। আমি শুধুই আম্পায়ার। লিঙ্গ পরিচয় সরিয়ে রেখে ভূমিকাটাই দেখতে চেয়েছি। নিয়ম কানুন, প্রস্তুতি এসবের উপরই গুরুত্ব দিয়েছি। প্রতিনিয়ত শেখার জায়গা অবারিত রেখেছি।'

লক্ষ্মীর মতে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পা রাখার আগে স্থানীয় পর্যায়ে নারী অফিসিয়াল তুলে আনতে হবে বিসিবিকে। আগ্রহীদের জড়ো করে দিতে হবে প্রশিক্ষণ,   'আমার মনে হয় বিসিবি বেশি বেশি নারী অফিসিয়ালদের প্রোমোট করতে পারে। তাদেরকে ট্রেনিং করাতে পারে। এভাবে তারা সামনে এগুতে পারে, আন্তর্জাতিক প্যানেলে আসতে পারে। স্থানীয় পর্যায়ে তাদের কিছু ম্যাচ পরিচালনার ভার দেয়া যেতে পারে। এভাবে তারা র‍্যাঙ্কে আসতে পারে। বিসিবি খুঁজে দেখতে পারে কাদের আম্পায়ারিংয়ে আগ্রহ আছে। তাদের বের করে উপরে তুলতে সাহায্য করতে পারে, ট্রেনিং করাতে পারে।'

'পরামর্শ থাকবে প্রস্তুতি যেন থাকে (আগ্রহী নারীদের)। অনেক রকমের নিয়ম কানুন আছে। বিভিন্ন দিক থেকে প্রস্তুতি নিয়ে রাখলে সুযোগ এলে সেটা গ্রহণ করতে পারবে তারা। '

উপমহাদেশের নারীদের সাধারণ চাকরি সামলাতেও অনেক প্রতিবন্ধকতা সামলাতে হয়। সেখানে ক্রিকেট ম্যাচ পরিচালনার মতো কঠিন কাজ বেশ চ্যালেঞ্জের হওয়ার কথা। এই পেশায় কাজ করতে হলে বছরের বড় একটা সময় পরিবারের বাইরে কাটাতে হবে। এই অঞ্চলের নানাবিধ বাস্তবতায় ব্যাপারটা সামলানো কঠিন হয় অনেকের। তবে লক্ষ্মীর পর্যবেক্ষণ ক্রমাগত বদলাচ্ছে মানুষের মনোভাব, নারীরাও দুর্বার গতিতে ছুটছেন ক্রিকেট সম্পর্কিত বিভিন্ন পেশার দিকে,  'আমার মনে হয় এখন মানসিকতার বদল হয়েছে। এখন সবাই বিভিন্ন রকমের পেশার দিকে ছুটছে। এবং প্রতিটা বোর্ডই সাহায্য করছে। আমাদের (ভারত) যেমন দুজন আম্পায়ার ও একজন ম্যাচ রেফারি এখানে এসেছে। সবগুলো বোর্ডই খোলামনে নারীদের পেশায় আসতে দিচ্ছে। শুরু ম্যাচ অফিসিয়ালই না,  ভিডিও এনালিস্ট পেশাতেও নারীদের দেখছি, স্কোরার আছে। নানান দিকে এখন আসছে। আমি এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলকে ধন্যবাদ দেই তারা একটা উদ্যোগ নিয়েছে যে এই আসরে শতভাগ নারীদের দিয়ে ম্যাচ পরিচালনা করছে। আমি নিশ্চিত মেয়েরা এই ধরণের টুর্নামেন্টের দিকে তাকিয়ে থাকবে।'

Comments

The Daily Star  | English

Trump won't say if US will strike Iran, but says it's 'late to be talking'

Israel army says struck Iran centrifuge production, weapons manufacturing sites

1d ago