ব্যাটিং স্বর্গে দারুণ বোলিং আর সাহসী নেতৃত্বে জিতল ইংল্যান্ড 

Ollie Robinson
পাকিস্তানের উইকেট ফেলে অলি রবিনসনের বুনো উল্লাস। ছবি: টুইটার

রাওয়ালপিন্ডির উইকেটে বোলারদের জন্য ছিল না তেমন কিছুই। দুই দলের রান বন্যার পর ড্রই হতে পারত অনুমিত ফল। কিন্তু বেন স্টোকস ভাবলেন ভিন্ন কিছু। ঝুঁকি নিলেন, সাহস নিয়ে ইনিংস ঘোষণা করে চালালেন প্রবল চেষ্টা। তার বোলাররাও দেখালেন সেরাটা। দুর্দান্ত এক টেস্ট জিতে নিল ইংল্যান্ড। 

সোমবার রাওয়ালপিন্ডি টেস্টের একদম শেষ মুহূর্তে গিয়ে হয়েছে ফয়সালা। পাকিস্তানকে ৭৪ রানে হারিয়ে তিন টেস্ট সিরিজে এগিয়ে গেছে ইংল্যান্ড। 

৩৪৩ রানের লক্ষ্যে থাকা পাকিস্তানের দ্বিতীয় ইনিংস ২৬৮ রানে আটকে দিতে বড় অবদান দুই পেসার জেমস অ্যান্ডারসন ও অলি রবিনসনের। 

৫০ রানে ৪ উইকেট নেন রবিনসন। ৪০ পেরুনো অ্যান্ডারসন ৩৬ রানে পান ৪ উইকেট। অধিনায়ক স্টোকস নেন এক উইকেট। শেষ ব্যাটারকে আউট করার কাজ সারেন বাঁহাতি স্পিনার জ্যাক লিচ। 

টস জিতে ব্যাট করতে গিয়ে প্রথম ইনিংসে 'টি-টোয়েন্টি' ব্যাটিংয়ে ৬৫৭ রান তুলেছিল ইংল্যান্ড। টেস্টের প্রথম দিনে পাঁচশোর বেশি রান করে বিশ্ব রেকর্ডও গড়েছিল তারা। 

জবাবে পাকিস্তানও প্রথম ইনিংসে তুলে নেয় ৫৭৯ রান। দ্বিতীয় ইনিংসে ৭৮ রানের লিড নিয়ে চতুর্থ ইনিংসে স্রেফ ৩৫.৫ ওভার ব্যাট করে ইংল্যান্ড। আগ্রাসী মেজাজে ২৬৪ রান করে ইনিংস ছেড়ে দেয়। 

ম্যাচের তখনো অনেকটা সময় বাকি। পাটা উইকেটে ৩৪৩ রান তাড়া করে জিতেও যেতে পারত পাকিস্তান। কিন্তু স্টোকস নিশ্চিত ড্রয়ের নেতিবাচক চিন্তা করেননি, যথেষ্ট সময় নিয়ে বোলারদের ম্যাচ বের করতে দিয়েছেন। সেটাই করে দেখিয়েছেন তার বোলাররা। টেস্ট ক্রিকেটে আবারও ইতিবাচক অ্যাপ্রোচের বিজ্ঞাপন দিল ইংলিশরা। 

পঞ্চম ও শেষ দিনে ২ উইকেটে ৮০ রান নিয়ে নেমেছিল পাকিস্তান। ব্যাটিং স্বর্গে বাকি ২৬৩ রান করা অসম্ভব মনে হচ্ছিল না। কিন্তু দিনের শুরুতেই স্বাগতিকদের স্বপ্নে বাধা হয়ে দাঁড়ায় ইংল্যান্ড। ফিফটির কাছে থাকা ইমাম উল হককে উইকেটের পেছনে ক্যাচ বানিয়ে শুরুতেই উইকেট পান অ্যান্ডারসন। 

এরপরই সাউদ শাকিলকে নিয়ে দারুণ জুটি পেয়ে যান মোহাম্মদ রিজওয়ান। এই জুটিতে ফের স্বপ্ন দেখা শুরু পাকিস্তানের। দুজনের জুটি হতাশা বাড়াচ্ছিল স্টোকসদের। ম্যাচ বাঁচানো তো বটেই, ম্যাচ জেতাও খুব সম্ভব মনে হচ্ছিল পাকিস্তানের। 

অভিজ্ঞ অ্যান্ডারসনই ভাঙেন জুটি। ৯২ বলে ৪৬ করা রিজওয়ানও রিভার্স স্যুইংয়ে কাবু হয়ে ক্যাচ দেন কিপারের গ্লাভসে। ১৭৬ বলে ৮৭ রানের জুটি ভাঙার পর খেলায় প্রবলভাবে ফিরে আসে ইংল্যান্ড। তবে আজহার আলির সঙ্গে আরেক জুটি পেয়ে যাচ্ছিলেন সাউদ। রবিনসনের বলে ক্যাচ দিয়ে থামে তার ইনিংস। বাঁহাতি সাউদ ১৫৯ বলের লড়াইতে করে যান ৭৬। 

অভিজ্ঞ আজহার আগা সালমানকে নিয়ে আবার হতাশ করতে থাকেন ইংল্যান্ডকে। সপ্তম উইকেট জুটিতেও চলে আসে পঞ্চাশের বেশি রান। তবে বল রিভার্স করায় হাল ছাড়ছিল না ইংলিশরা। ফলও মিলে যায়।

সালমান ও আজহার দুজনকেই ফেরান রবিনসন। তার রিভার্স স্যুইংয়ে এলবিডব্লিউতে থামেন সালমান। লেগ স্লিপে আজহারের ক্যাচ যান জো রুটের হাতে। খানিক পর অ্যান্ডারসনের বলে জাহিদ মাসুদের ক্যাচ বা দিকে ঝাঁপিয়ে হাতে জমান কিপার অলি পোপ, অ্যান্ডারসন পরে হারিস রউফকে আউট করে তুলেন চতুর্থ উইকেট। 

শেষ উইকেট ফেলতে বেশ কিছুটা ঘাম ঝরে যায় ইংল্যান্ডের। নাসিম শাহ আর মোহাম্মদ আলি মিলে খেলে ফেলেন ৫৩ বল। একদম শেষ বিকেলের আলোয় নাসিমকে এলবিডব্লিউ করে লিচ মাতেন উল্লাসে। এই টেস্টে ইংল্যান্ডের জয় ছাড়া অন্য কোন ফল ঠিক মাননসই হতো না।
 

Comments