ব্যাটিংয়ে লিটন, বোলিংয়ে মিরাজের বছর

সাফল্য-ব্যর্থতা আর আগামীর প্রত্যাশা নিয়ে শেষ হয়ে যাচ্ছে আরও একটি বছর। ২০২২ সাল বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য দলীয় পারফরম্যান্সে খুব আহামরি নয়। দ্বি-পাক্ষিক কিছু সিরিজে এসেছে দারুণ সাফল্য তবে বড় আসরে গিয়ে হতে হয়েছে হতাশ। ব্যক্তিগত নৈপুণ্যে অবশ্য বছর জুড়ে ধারাবাহিকতার ছাপ রেখে গেছেন লিটন দাস ও মেহেদী হাসান মিরাজ। সব সংস্করণেই ব্যাট হাতে লিটন টেনেছেন দলকে, ছড়িয়েছেন আলো। বল হাতে দলের দায়িত্ব নিয়েছেন মেহেদী হাসান মিরাজ।
তিন সংস্করণ মিলিয়ে ৪২ ম্যাচ খেলে ৪০.০২ গড়ে রেকর্ড ১৯২১ রান করেছেন লিটন। ১৩ ফিফটি আর তিন সেঞ্চুরি এসেছে তার ব্যাটে। এক বছরে রান করায় এটাই বাংলাদেশি কোন ব্যাটারের রেকর্ড। এই বছর বাংলাদেশের আর কোন ব্যাটারের নেই এক হাজার রানও।
দুইয়ে থাকা সাকিব আল হাসান ৩০ ম্যাচে ২৭.৯৩ গড়ে করেন ৯২২ রান। ৩৬ ম্যাচ খেলা আফিফ হোসেনের ব্যাট থেকে আসে ৮৪৯ রান।

আলাদা করে তিন সংস্করণের সবগুলোতেও লিটনই সবার উপরে। টেস্টেই করেছেন বছরের বেশিরভাগ রান। ১০ ম্যাচে ৪৪.৪৪ গড়ে এই ডানহাতি করেন ৮০০ রান। পাঁচ ফিফটি আর ২ সেঞ্চুরি করেছেন সাদা পোশাকে।
বাংলাদেশের আর কেউ পাঁচশো রানও করতে পারেননি। ৭ টেস্টে মুশফিকুর রহিমের রান ৪৬৫। নাজমুল হোসেন শান্ত ১০ টেস্টে করেছেন ৪১০ রান।
ওয়ানডেতে লিটনের বছরটা কেটেছে দারুণ। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের বছর হওয়ায় ওয়ানডের সংখ্যা ছিল কম। চোটের কারণে দুই ম্যাচ মিসও করেন লিটন। তবু ১৩ ওয়ানডে খেলে ৫২.৪৫ গড়ে ৫৭৭ রান করেন লিটন, স্ট্রাইকরেট ৮৩.১৪।
দুইয়ে থাকা মাহমুদউল্লাহ দুই ম্যাচ বেশি খেলে করেন ৪১০ রান। ওয়ানডে অধিনায়ক তামিম ইকবাল ১২ ম্যাচ খেলে করেন ৪০৮ রান।
রানসংখ্যা কিংবা স্ট্রাইকরেট। টি-টোয়েন্টিতে লিটন ছিলেন আলো ঝলমলে। বছরে ১৯টা টি-টোয়েন্টি খেলে ২৮.৬৩ গড় আর ১৪০.২০ স্ট্রাইকরেটে লিটন করেন ৫৪৪ রান। বাংলাদেশিদের মধ্যে সর্বোচ্চ চার ফিফটিও করেছেন তিনি।
এই বছর টি-টোয়েন্টিতে ১৩০ স্ট্রাইকরেটও ছাড়াতে পারেননি আর কোন বাংলাদেশি ব্যাটার। আফিফ হোসেন লিটনের চেয়ে দুই ম্যাচ বেশি খেলে করেন ৫০০ রান। গড় ২৯.৪১ থাকলেও তার স্ট্রাইকরেট স্রেফ ১২৩.৭৬। তিনে থাকা সাকিব ১৫ ম্যাচ খেলে ১২৯.২৫ স্ট্রাইকরেট আর ২৪.৯২ গড়ে করেছেন ৩৪৯ রান।

বোলিংয়ে বছরে সবচেয়ে উজ্জ্বল মিরাজ
এই বছর কিছু ম্যাচে ব্যাট হাতে জ্বলে উঠলেও মিরাজের মূল কাজ বোলিং। সেই দায়িত্ব তিনি সামলেছেন দারুণভাবে।
তিন সংস্করণে ২৯ ম্যাচ খেলে ৩০.৫৫ গড়ে সর্বোচ্চ ৫৯ উইকেট নিয়েছেন তিনি। তারচেয়ে এক ম্যাচ বেশি খেলে দুইয়ে থাকা সাকিব নেন ৪৪ উইকেট। ইবাদত হোসেন ১৬ ম্যাচ খেলেই নেন ৩৯ উইকেট।
তিন সংস্করণের মধ্যে টেস্ট ও ওয়ানডেতে মিরাজ ছিলেন দলে নিয়মিত, টি-টোয়েন্ট খেলার সুযোগ পেয়েছেন স্রেফ ৬ ম্যাচ। স্বাভাবিকভাবেই টেস্ট ও ওয়ানডেতে আলাদা করে উইকেট নেওয়ায় বছরে দেশের সেরা অবস্থানে তিনি।
৮ টেস্ট খেলে অফ স্পিনে মিরাজ নিয়েছেন ৩১ উইকেট। বছরের শেষ প্রান্তে এসে ভারতের বিপক্ষে নেওয়া ৬৩ রানে ৫ উইকেটই এই বছর তার একমাত্র ফাইফার।
দুইয়ে থাকা তাইজুল ৫ টেস্ট খেলে পেয়েছেন ২২ উইকেট। পেসার ইবাদত ৮ টেস্ট খেলে নেন ২১ উইকেট।
ওয়ানডেতেও মিরাজের দাপট। ১৫ ম্যাচ খেলে ২৮.২০ গড় আর ৫.৪৪ ইকোনমিতে ২৪ উইকেট নেন তিনি। এই সংস্করণে তার ঠিক পেছনে থাকা সাকিব ৯ ম্যাচেই ২২.৮৮ গড়ে পান ১৭ উইকেট। ম্যাচ বেশি খেললে সাকিব অবশ্য এখানে তাকে ছাড়িয়ে যেতে পারতেন।
টি-টোয়েন্টি বিবেচিত হয়েছিলেন বছরের পরের দিকে এসে। তবে নিজের জায়গা করা হয়নি। ৬ ম্যাচ খেলে মিরাজ নেন ৪ উইকেট। টি-টোয়েন্টিতে বছরের সবচেয়ে বেশি উইকেট বাংলাদেশকে এনে দিয়েছেন তরুণ পেসার হাসান মাহমুদ। ৯ ম্যাচ খেলেই তিনি পান ১৩ উইকেট। তার সমান ১৩ উইকেট পেলেও মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত খেলেন ১৭ ম্যাচ। তাসকিন ১৩ উইকেট পেতে খেলেন ১৩ ম্যাচ।
Comments