তির্যক প্রশ্নের স্রোতের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে সৌম্যের স্মরণীয় সেঞ্চুরি
সৌম্য সরকার দলে কেন? এই প্রশ্নের স্রোত ধেয়ে আসছিলো তীব্রভাবে। ডানেডিনে ব্যাটে-বলে চরম ব্যর্থ হওয়ার পর বাঁহাতি ব্যাটারকেই যেন হারের জন্য দায় দিচ্ছিলেন বেশিরভাগ মানুষ। তার দলে থাকায় সমালোচনায় বিদ্ধ হচ্ছিলেন কোচ চণ্ডিকা হাথুরুসিংহে। খাদের কিনারে থেকে তাই নেলসনে নেমেছিলেন সৌম্য, এক প্রান্তে উইকেট পতনের মাঝে চাপ হলো তীব্র। তবে সব ছাপিয়ে দ্যুতিময় এক সেঞ্চুরিতে জবাব দিলেন এই বাঁহাতি।
বুধবার নেলসনে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে সৌম্যের ব্যাট থেকে এসেছে ১৫১ বলে ১৬৯ রানের ইনিংস। ওপেন করতে নেমে আউট হয়েছেন একদম শেষ ওভারে। দলের ২৯১ রানের অর্ধেকের বেশি রানই তার। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সেঞ্চুরির দেখা পেলেন পাঁচ বছর পর। ২০১৮ সালে সর্বশেষ জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে চট্টগ্রামে সেঞ্চুরি করেছিলেন ৩০ বছর বয়েসী ব্যাটার। এর মাঝে দলে ছিলেন আসা-যাওয়ার মাঝে। গত চার বছরে খেলেছেন কেবল ৭ ওয়ানডে। তাও একটানা না। তবে সেসবে ছিলেন পুরোপুরি ব্যর্থ। ঘরোয়া ক্রিকেটেও ধুঁকছিলেন তিনি। যদিও সর্বশেষ জাতীয় লিগে প্রায় পঞ্চাশ গড়ে তিনি করেন চারশো বেশি রান। সেটা লাল বলের সংস্করণে হওয়ায় প্রশ্ন তাই থামছিলো না।
২০১৫ সালে আলোড়ন তুলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আসা সৌম্য বাংলাদেশের ক্রিকেটে হয়ে গিয়েছিলেন এক হাহাকারের নাম। টিম ম্যানেজমেন্ট তবু বারবার তার দিকে ফিরে গিয়েছে, হতাশ করলে দ্রুতই আবার দলের আস্থা হারিয়েছেন। বিশ্বকাপের আগে ঘরের মাঠে কিউদের বিপক্ষে এক ম্যাচ খেলিয়েই বাদ দেওয়ার পর এবার তাকে দলে নেওয়ায় অনেক সমালোচনা হচ্ছিল, সেই সমালোচনার স্রোতও আপাতত থামল বলা যায় ।
রাজকীয় প্রত্যাবর্তনের দিনে রেকর্ডও হয়ে গেছে। ওয়ানডেতে নিউজিল্যান্ডের মাঠে এশিয়ান ব্যাটারদের মধ্যেও সর্বোচ্চ রানের ইনিংস এখন সৌম্যের। সৌম্য ছাড়িয়ে গেছেন কিংবদন্তি শচিন টেন্ডুলকারের ১৬৩ রানের রেকর্ড। সফরকারী ব্যাটারদের বিপক্ষে কিউইদের মাঠে সব মিলিয়ে সৌম্যের ইনিংস দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। সর্বোচ্চ হ্যামিল্টনে ২০০৭ সালে খেলা ম্যাথু হেইডেনের ১৮১ রান।
টস হেরে এনামুল হক বিজয়কে নিয়ে ওপেন করতে নামেন সৌম্য। অন ড্রাইভে দারুণ চারে পান শুরু। বিজয় ফিরে যান দ্রুত, টিকেননি অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। লিটন দাস চারে নেমে আলগা শটে হন কাবু।
৪৪ রানে পড়ে যায় ৩ উইকেট। তখন বেশ কয়েকটি ঝলমলে চারে দলের সিংহভাগ রানই আনেন তিনি। তাওহিদ হৃদয়কে নিয়ে নামেন ইনিংস গড়ায়। মাঝের ফেইজে কিছুটা মন্থর খেলতে হয় উইকেট পড়ার চাপে। সৌম্যের স্ট্রেট ড্রাইভ বোলারের হাত লেগে নন স্ট্রাইকিং প্রান্তের স্টাম্প ভাঙলে বাইরে থাকা হৃদয় থামেন রান আউটে।
এরপর অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিমকে নিয়ে আসে দারুণ জুটি। ৫৮ বলে ফিফটি স্পর্শ করে জীবন পান তিনি। তবে সেই জীবন কাজে লাগিয়েছেন, ৯২ রানে তার আরেক ক্যাচ পড়ে অ্যাডাম মিলনের হাত থেকে।
মুশফিকের সঙ্গে ১০৮ বলে ৯১ রানের জুটিতে সৌম্যের অবদান ৪৪। মুশফিক ফিরলে মেহেদী হাসান মিরাজের সঙ্গে ৫৩ বলে আসে ৬১ রানের আরেক জুটি। তাতে ২৭ বলেই ৪২ তুলেন বাঁহাতি আগ্রাসী ব্যাটার। ১১৬ বলে সেঞ্চুরি পেরুনোর পর তুলেন ঝড়। স্লগ। শেষের ৩৫ বলে যোগ করেন ৬৯ রান।
তানজিম হাসান সাকিবকে নিয়ে ২৬ বলে আনেন ৪০ রান, রিশাদ হোসেনকে নিয়ে যোগ করেন ৭ বলে ১৮। তীব্র গতির কাভার ড্রাইভ, মিড উইকেট দিয়ে উড়ানো ছক্কায় সৌম্য দেখান দাপট। তার ব্যাটের ঝাঁজে এক সময় হুমকির মুখে ছিলো লিটনের ১৭৮ রানের রেকর্ড। যদিও শেষ ওভারে আউট হয়ে সেটা আর পেরুনো হয়নি তার। তবে ২২ চার আর ২ ছক্কার ইনিংসটা অনেকদিন স্মরণীয় রাখবে সৌম্যকে। নিজের দিনে তিনি কি করতে পারেন সেই প্রমাণও মিলল আরেকবার।
Comments