বাংলাদেশ দলের টাইটেল স্পন্সরের মূল্য কমল কেন?
সময়ের সঙ্গে যখন সব কিছুই বাড়ছে, বিসিবি তখন বাংলাদেশ জাতীয় দলের টাইটেল স্পন্সরের দাম বাড়াতে পারল না। মোবাইল ফোন অপারেটের রবি আজিয়াটা লিমিটেড পাঁচ বছর আগে শেষ হওয়া চুক্তিতে যা দিয়েছিল, এবার দিচ্ছে তারচেয়েও কম।
টানা দুই সিরিজ স্পন্সরহীন থাকার পর শুক্রবার বেশ ঘটা করে মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে দেখা গেল জাতীয় দলের নতুন স্পন্সরের। নতুন হলেও তারা পুরনোই। ২০১৫ সালে শুরুতে রবির সঙ্গে দুই বছরের চুক্তি করে বিসিবি, চুক্তি নবায়ন করে ২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপ পর্যন্ত বাড়ানো হয়। তবে দুই পক্ষের মধ্যে সম্পর্কের টানাপড়েনে ১০ মাস আগেই সরে যায় রবি। সাড়ে তিন বছরের কিছু বেশি সময়ের চুক্তিতে সেবার ৬১ কোটি টাকা পেয়েছিল বিসিবি। এবার সাড়ে তিন বছরের জন্য পাচ্ছে ৫০ কোটি। অর্থাৎ ১১ কোটি কম।
সর্বশেষ স্পন্সর দারাজ থেকে আড়াই বছরের জন্য ৪০ কোটি ১০ লাখ পেয়েছিল বিসিবি। তুলনামূলক বিচারে টাকার অঙ্ক বছর প্রতি সামান্য কিছুটা বাড়লেও সময়ের হিসাবে তা বাড়া বলা যায় না। বিসিবির মিডিয়া কমিটির চেয়ারম্যান তানভীর আহমেদ টিটোর মতে অবশ্য, 'পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিবেচনায় টাকার অঙ্ক কমেছে বলা যাবে না।'
বিসিবি সংশ্লিষ্টরা বলার চেষ্টা করছেন অর্থনৈতিক মন্দা পরিস্থিতির শিকার তারা। স্পন্সরদের আগ্রহ সে কারণে ছিলো কম।
সেসময় বিসিবির সঙ্গে রবির সম্পর্কের ইতি হওয়ার পেছনে খেলোয়াড়দের ব্যক্তিগত স্পন্সরের সাংঘর্ষিক অবস্থান তৈরি হওয়ার কারণ আলোচনায় আসে। শীর্ষ অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানসহ কয়েকজন ক্রিকেটার অন্য মোবাইল অপারেটরের সঙ্গে চুক্তি করলে জটিলতায় পড়ে বিসিবি। সেবার চুক্তিতেও ছিলো না এই ধারাগুলো।
এবারও যখন রবির সঙ্গে নতুন চুক্তিতে গেল বিসিবি, সাকিবের চুক্তি তখন চলছে গ্রামীনফোনের সঙ্গে। নতুন চুক্তিতে অবশ্য কিছু ধারা রাখা হয়েছে। বিসিবির কেন্দ্রীয় চুক্তিতে থাকা খেলোয়াড়রা রবির সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয় এমন কোন ব্র্যান্ডের সঙ্গে যেতে পারবেন না। তবে আগেই যারা চুক্তি করে বসে আছেন তাদের সেসব চুক্তি মেয়াদ শেষ হওয়া অবধি চলবে। অর্থাৎ সাকিবের সঙ্গে গ্রামীনফোনে চুক্তি চালাতে সমস্যা হচ্ছে না।
ব্যক্তিগত এসব স্পন্সর যে দলীয় স্পন্সরের ভেল্যুতে প্রভাব রাখে তার কারণ পাওয়া গেল বিজ্ঞাপনী সংস্থার নীতি নির্ধারকদের কথায়।
মিডিয়াকম লিমিটেডের ক্লায়েন্ট রিলেশন পরিচালক সাইমন ইসলাম শাওন কয়েকদিন আগে দ্য ডেইলি স্টারকে বলেছিলেন তারকা কিছু খেলোয়াড়কে এককভাবে পাওয়ার সুবিধা থেকেই দলীয় স্পন্সরে আগ্রহী থাকে কম, 'দলের স্পন্সর হতে অনেক টাকা বিনিয়োগ করতে হয়। ওইটার একটা ইস্যু সব সময় থাকে যে রিটার্ন কি আসতেছে। একটা সময় ভালো পারফর্ম থাকলে একটা জাস্টিফিকেশনও দাঁড় করানো যেত। যখনই পারফরম্যান্স খারাপ হয় তখন মনে হয় এখানে যাওয়া আমাদের ঠিক হবে না। আমি যে টাকা দিয়ে এটা নিচ্ছি এর রিটার্ন পাব না। তারচেয়ে বরং এক, দুজন ক্রিকেটারের পেছনে খরচ করলে কম ইনভেস্টে কাজ সারা যায়।'
এশিয়াটিক মার্কেটিং কমিউনিকেশন্স লিমিটেডের প্রধান গ্রোথ কর্মকর্তা সাদিদ এহসানের বক্তব্যই একইরকম, 'ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স অনেক সময় দেখা যায় দলের চেয়ে ভালো। কারণ আমি জানি সাকিব পারফর্ম করবে, এক ম্যাচ না হলে দুই ম্যাচ পর হলেও করবে। সব মিলিয়ে দলের ত সেই ধারাবাহিকতা নাই।'
বিজ্ঞাপন বিপণনে যুক্ত থাকা এই দুই কর্মকর্তাই মনে করেন, সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ দলের পড়তে পারফরম্যান্সও স্পন্সরদের মোটা অঙ্ক বিনিয়োগ করতে উৎসাহিত করছে না, 'পারফরম্যান্সেও ঘাটতি গেছে, আবার দুই তিন বছরে অর্থনৈতিক দিক থেকেও একটা খারাপ অবস্থা গেছে দেশের।'- বলেন সাইমন।
এই টাইটেল স্পন্সরের অধীনে থাকছে পুরুষ ও নারী দুই জাতীয় দলই। ২০২৭ সালের জুলাই পর্যন্ত দুটি দলেরই আছে ব্যস্ত সূচি। বিশেষ করে পুরুষ দলের ব্যস্ততা অনেক বেশি। চলতি বছর দেশের ইতিহাসের সর্বোচ্চ ১৪ টেস্ট খেলারও সূচি আছে। এছাড়া ভারত, পাকিস্তানের মতন দেশে গিয়ে দ্বি-পাক্ষিক সিরিজ খেলার সূচি আছে নাজমুল হোসেন শান্তদের। হাইপের দিক থেকে যা বেশ চড়া। টাইটেল স্পন্সর এই সময়ে বিশাল প্রচার পাওয়ারই কথা কারণ জার্সির সামনেই থাকবে তাদের নাম ও লোগো। সেই তুলনায় বিসিবি বেশ কম মূল্যই পাচ্ছে।
Comments