বোলারদের দৃঢ়তায় লড়াইয়ে বাংলাদেশ

ছবি: ফিরোজ আহমেদ

স্বীকৃত সব ব্যাটার মিলে যা করতে না পেরেছেন তার চেয়ে ঢের বেশি রান করেছেন বাংলাদেশের বোলাররা। লেজের এই ব্যাটারদের দৃঢ়তায় লিডটা বিশাল হয়নি শ্রীলঙ্কার। এরপর দারুণ নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে লঙ্কানদের দ্বিতীয় ইনিংসে আঘাত হানছেন নিয়মিতই। তাতে প্রথম ইনিংসে বড় ব্যবধানে পিছিয়ে থেকেও লড়াই করছে বাংলাদেশ। 

শনিবার সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে প্রথম টেস্টের দ্বিতীয় দিন শেষে ২১১ রানের লিড নিয়েছে শ্রীলঙ্কা। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমে দিন শেষ হওয়ার আগে ৫ উইকেটে ১১৯ রান করেছে সফরকারী দলটি। এর আগে নিজেদের প্রথম ইনিংসে ১৮৮ রানে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ। ফলে প্রথম ইনিংসে ৯২ রানের লিড পায় লঙ্কানরা।

দ্বিতীয় ইনিংসে বল করতে নেমে শুরুটা ভালো করতে পারেনি বাংলাদেশ। চার ওভার না যেতেই দুটি রিভিউ হারিয়ে ফেলে তারা। দুইবারই বোলার ছিলেন সৈয়দ খালেদ আহমেদ। দুইবারই ব্যাটার ছিলেন নিশান মাদুশকা। কিন্তু প্রতিবারই রিপ্লেতে দেখা যায় বাড়তি বাউন্সে উইকেটের উপর দিয়ে যায় বল। তাতে নষ্ট হয় দুটি রিভিউ।

তবে লাঞ্চের আগেই সেই মাদুশকাকে বিদায় করতে পারে বাংলাদেশ। চা-বিরতিতে যাওয়ার আগে বল হাতে নিয়ে চতুর্থ বলে ওপেনিং জুটি ভাঙেন নাহিদ রানা। তার লেন্থ বলে ব্যাটের কানায় লেগে চলে যায় উইকেটরক্ষক লিটন দাসের হাতে। ২০ বলে ১০ রান করেন এই ওপেনার।

এরপর কুশল মেন্ডিসকেও তুলে নেন রানা। তার বাউন্সারে ধরা পড়েন এই উইকেটরক্ষক-ব্যাটার। লেগ স্টাম্পে রাখা বাউন্সারে পুল করতে গিয়েও শেষ মুহূর্তে ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ব্যাট নামানোর আগেই কানা ছুঁয়ে বল চলে যায় উইকেটরক্ষক লিটন দাসের গ্লাভসে। ১০ বলে ৩ রান করেন মেন্ডিস।

১৮তম ওভারে স্পিনার আনেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। বল হাতে নিয়ে প্রথম ওভারেই অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউসকে ফেরান তাইজুল ইসলাম। তার বলে কিছুটা টার্ন ও বাউন্স করায় ব্যাটের কানা ছুঁয়ে চলে যায় উইকেটরক্ষক লিটনের গ্লাভসে। প্রথম দফায় ধরতে না পারলেও দ্বিতীয় দফায় ক্যাচ লুফে নেন এই উইকেটরক্ষক। ২৪ বলে ২২ রান করেন ম্যাথিউস।

এরপর আরেক স্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজও বল হাতে নিয়ে উইকেট তুলে নেন। প্রথম বলেই দিনেশ চান্দিমালকে ফেলেন এলবিডাব্লিউর ফাঁদে। মিরাজের বলে লেগে ঘোরাতে চেয়েছিলেন চান্দিমাল। লাইন মিস করে প্যাডে লাগতেই আবেদন করেন মিরাজ। আম্পায়ার সাড়া না দিলে রিভিউ নেন। রিপ্লেতে দেখা যায়, লেগ স্টাম্পে আঘাত করত বল। ফলে খালি হাতেই বিদায় নেন চান্দিমাল।

৬৪ রানে চার উইকেট হারানো দলটির হাল দিমুথ করুনারত্নের সঙ্গে ধরেন বর্তমান অধিনায়ক ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা। দুই ব্যাটার মিলে চাপ সামলে নেওয়ার চেষ্টায় গড়েন ৪৯ রানের জুটি। তবে করুনারত্নেকে ফিরিয়ে এ জুটি ভাঙেন শরিফুল। তার বাউন্সারে পুল করতে গেলে ফাইন লেগে ধরা পড়েন নাহিদ রানার হাতে। আউট হওয়ার আগে ১০১ বলে ৭টি চার ও ১টি ছক্কায় ৫২ রান করেন এই ওপেনার।

এরপর নাইটওয়াচম্যান হিসেবে নামা বিশ্ব ফার্নান্ডোকে নিয়ে দিনের বাকি সময় কাটিয়ে দেন ধনাঞ্জয়া। শেষ পর্যন্ত ৪১ বল খেলে ২৩ রানে অপরাজিত রয়েছেন লঙ্কান অধিনায়ক। তারসঙ্গে নাইটওয়াচম্যান ফার্নান্ডো অপরাজিত রয়েছেন ২ রানে। বাংলাদেশের হয়ে দুটি ৪২ রানের খরচায় ২টি উইকেট নেন নাহিদ রানা।

এর আগে সকালে আগের দিনের ৩ উইকেটে ৩২ রান নিয়ে ব্যাটিংয়ে নেমে প্রথম ঘণ্টাতেই দুই উইকেট হারিয়ে বসে বাংলাদেশ। এরপর লাঞ্চে যাওয়ার আগের হারায় আরও একটি। এই তিনটি উইকেটই তুলে নেন লাহিরু কুমারা। মাহমুদুল ইসলাম জয়, শাহাদাত হোসেন দিপু ও লিটন দাসকে ফেরান তিনি।

লাঞ্চের পর টাইগার শিবিরে তোপ দাগান কাসুন রাজিথা। শুরুতেই তাইজুলকে ফিরিয়ে বড় ধাক্কা দেন এই পেসার। ধারা বিপরীতে এই ব্যাটারই প্রতিরোধ গড়েছিলেন। তার অফস্টাম্পের বেশ বাইরের বল ড্রাইভ করতে গিয়ে বিপদ ডেকে আনেন তিনি। ৮০ বলে দলের পক্ষে খেলেন সর্বোচ্চ ৪৭ রানের ইনিংস। এরপর টাইগারদের শেষ স্বীকৃত ব্যাটার মেহেদী হাসান মিরাজকেও তুলে নেন রাজিথা।

এরপর শরিফুল ইসলামের সঙ্গে সৈয়দ খালেদ আহমেদ গড়ে তোলেন মূল্যবান এক জুটি। নবম উইকেটে ৪০ রান যোগ করেন এ দুই ব্যাটার। প্রভাত জয়াসুরিয়ার এক ওভারে তো তিনটি ছক্কায় ১৯ রান তুলে নেন এ দুই ব্যাটার। তাতেই লঙ্কানদের লিড একশ রানের নিচে নামিয়ে আনেন তারা।

তবে পানি পানের বিরতির পরপরই এ জুটি ভাঙেন বিশ্ব ফার্নান্ডো। শরিফুলকে ফেরানোর পর খালেদকেও তুলে নেন এই পেসার। খালেদ ২২ ও শরিফুল ১৫ রান করেন। শ্রীলঙ্কার পক্ষে ৪৮ রানের খরচায় ৪টি উইকেট তুলে নেন ফার্নান্ডো। ৩১ রানের বিনিময়ে ৩টি উইকেট পান কুমারা। এছাড়া ৫৬ রানে ৩টি শিকার রাজিথার।

Comments

The Daily Star  | English

Sheikh clan’s lust for duty-free cars

With an almost decimated opposition and farcical elections, a party nomination from the ruling Awami League was as good as a seat in the parliament.

7h ago