ম্যাচ বাঁচানো নয়, জয়ের স্বপ্ন দেখেছিলেন টাইগাররা!

ছবি: ফিরোজ আহমেদ

সকালে ব্যাটিংয়ে নামার সময় প্রাথমিক লক্ষ্যটা কি ছিল? জয় না-কি ম্যাচ বাঁচানো? সংবাদ সম্মেলনে এমন প্রশ্নই করা হয়েছিল অভিজ্ঞ ব্যাটার মুমিনুল হককে, যিনি এক সময় ছিলেন বাংলাদেশ দলের অধিনায়কও। কিন্তু মুমিনুল গেলেন এড়িয়ে। বললেন, 'আমরা তো সেশন বাই সেশন খেলার চেষ্টা করেছি। একটা সেশনের উপর নির্ভর করে পরের সেশনের খেলা।'

অথচ লক্ষ্যটা ছিল ৫১০ রানের। যে লক্ষ্য তাড়া করে জিততে হলে ক্রিকেটের ইতিহাসই পাল্টে দিতে হতো। রান তাড়া করে চারশ রানের উপরে জয়ের রেকর্ড মাত্র চারটি। সর্বোচ্চ ৪১৮। সেখানে জয়ের লক্ষ্যে ব্যাটিং করা বিশাল বিলাসিতাই বটে। তাই আপাত দৃষ্টিতে দুটি বিকল্প থাকলেও আসলে একটা পথই খোলা ছিল বাংলাদেশের। কোনোমতে মাটি কামড়ে থেকে শেষ দুই দিন পার করে দেওয়া।

চট্টগ্রাম টেস্ট ড্র হলেও সিরিজ হার এড়াতে পারতো না বাংলাদেশ। তবে অন্তত হোয়াইটওয়াশ হওয়ার লজ্জা থেকে মুক্তি মিলত টাইগারদের। কিন্তু অবিশ্বাস্য লক্ষ্যেই ছুটে চলেন তারা। কেবল পঞ্চম দিনে টেস্ট গড়ানোর সান্ত্বনাই মিলছে তাদের। রূপকথার কোনো গল্প লিখে জয় তো দূরের কথা, ড্র করবেন এমন দিবাস্বপ্ন দেখার সাহসও নেই কেউর।

তবে শট নির্বাচনে যদি একটু সংযমী হতে পারতেন টাইগাররা, সেক্ষেত্রে আরও ভালো অবস্থানে থাকতে পারতো বাংলাদেশ। মুমিনুল-সাকিব-লিটনদের মতো অভিজ্ঞ ব্যাটাররাও যেখানে হতে পারেননি সংযমী হতে, সেখানে শেষ দিনে লেজের ব্যাটার তাইজুল ইসলামকে নিয়ে আর কতোটুকুই করতে পারবেন মেহেদী হাসান মিরাজ। আরও একটি বড় কেবল সময়ের ব্যাপার হয়েই দাঁড়িয়েছে বংলাদেশের জন্য। 

সকালে যখন লক্ষ্য তাড়ায় ব্যাটিংয়ে নামেন দুই ওপেনার মাহমুদুল হাসান জয় ও জাকির হাসান, তখন মনে হয়েছিল ম্যাচ বাঁচানোই মূল লক্ষ্য বাংলাদেশের। কিন্তু প্রথম সেশনের আট ওভার সাবধানতার সঙ্গে কাটিয়ে দিলেও দ্বিতীয় সেশনেই চিত্র গেল বদলে। রানের গতি বাড়াতে গিয়েছেন। মাঝেমধ্যে ঝুঁকি নিয়ে উইকেট ছেড়েও বাউন্ডারির আশায় ব্যাট করেছেন।

দ্রুত রান তোলার তাগিদেই আউট হয়েছেন জয়। প্রভাত জয়াসুরিয়ার মিডল স্টাম্পে রাখা বলে পেছনের পায়ে ভর করে দাঁড়িয়ে গেলেন কাট করতে। লাইন মিস করে হয়ে যান বোল্ড। ডিফেন্স করলে বেঁচে যেতে পারতেন নিশ্চিতভাবেই। আর বিশ্ব ফার্নান্ডোর যে বলে আউট হয়েছেন জাকির, তার ঠিক আগে একই ধরণের বলে এজ হয়েছিলেন। কিন্তু সাবধান হননি। প্রায় পঞ্চম স্টাম্পে রাখা বলে খোঁচা মারতে গিয়ে দুর্ভাগ্য ডেকে আনেন।

পরিস্থিতির কথা না ভেবে মুমিনুল হাত খুলেছেন শুরু থেকেই। দ্বিতীয় বলেই উইকেট ছেড়ে বেড়িয়ে মারেন বাউন্ডারি। পরে মেরেছেন আরও। একই কায়দায় ছক্কাও হাঁকান। টেস্ট ক্রিকেটে ৫৫ বলে ফিফটি তুলেও এটাকে আগ্রাসী ক্রিকেট বলতে নারাজ মুমিনুল। বাউন্ডারি মারতে গিয়ে আউট হন চা-বিরতিতে যাওয়ার ঠিক আগের ওভারে। যদিও এটাকে 'ক্যালকুলেটিভ রিস্ক' বলেই দায় এড়ালেন এই অভিজ্ঞ ক্রিকেটার, 'অ্যাগ্রেসিভ, আমার কাছে মনে হয় না যে অ্যাগ্রেসিভ... স্পিনে আমার যেসব জায়গায় আমার জোন সেসব জায়গায় আমি ক্যালকুলেটিভ রিস্ক নিয়েছি।'

পার্ট-টাইম বোলার কামিন্দু মেন্ডিস টেস্ট ক্রিকেটে এদিনই প্রথম বোলিং করেন। আর প্রথম দিনেই পেয়েছেন সাকিব আল হাসানের উইকেট। অফস্টাম্পের বেশ বাইরের বল খেয়ালি মনে খোঁচা মেরে ক্যাচ তুলে দেন দ্বিতীয় স্লিপে। আউট হওয়ার পর তার প্রতিক্রিয়াই বলে দেয়, ভুল শট খেলেছেন এই অলরাউন্ডার। তার মনোযোগের ঘাটতি ফতে ওঠে স্পষ্টভাবেই।

লিটন তো আউট হয়েছেন লিটনের মতো করেই। সিলেট টেস্টে প্রথম বলেই উইকেট ছেড়ে বেড়িয়ে আকাশে তুলে আউট হওয়ায় সমালোচনা কম হয়নি। তবে তাতে বদলায়নি ব্যাটিংয়ের ধরণ। চা-বিরতির আগে পাঁচটি বল খেলেছিলেন। ভালোভাবে ডিফেন্সও করেন। ম্যাচের বাকি সময়ও এমনটাই ছিল প্রত্যাশা। কিন্তু কিছুক্ষণ পরই ফেরেন তার চরিত্রে। কুমারার অফস্টাম্পের বেশ বাইরে রাখা শর্ট অব লেন্থের বলে মারতে গিয়ে ক্যাচ দেন উইকেটরক্ষকের হাতে। চাইলেই ছেড়ে বাঁচতে পারতেন বলটি। তাতে হয়তো বেঁচে থাকতো বাংলাদেশের ম্যাচ বাঁচানোর স্বপ্নও।

Comments

The Daily Star  | English

Govt to review media outlets owned by AL ministers, MPs

The adviser made these remarks during a stakeholders' meeting of the Department of Films and Publications

2h ago