এখনও বাংলাদেশ দলে খেলার স্বপ্ন নাসিরের, অভিযোগ আগের নির্বাচক কমিটি নিয়ে

আইসিসির দেওয়া নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরদিনই মাঠে নেমে পড়লেন নাসির হোসেন। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে রূপগঞ্জ টাইগার্স ক্রিকেট ক্লাবের জয়ে রাখলেন বল হাতে অবদান। সাত বছরের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশ জাতীয় দলের বাইরে থাকা অলরাউন্ডার ম্যাচের পর জানালেন, এখনও আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার স্বপ্ন দেখেন তিনি। তবে সুযোগ না পাওয়ার জন্য আগের নির্বাচক কমিটির দিকে অভিযোগের আঙুল তুললেন তিনি।
আইফোন উপহার নেওয়াসহ আইসিসির দুর্নীতি বিরোধী নীতিমালার তিনটি ধারা ভঙ্গের দায়ে গত বছরের জানুয়ারিতে নাসিরকে নিষিদ্ধ করে আইসিসি। দেড় বছরের মূল নিষেধাজ্ঞার সঙ্গে ছয় মাসের স্থগিত নিষেধাজ্ঞাসহ মোট দুই বছরের জন্য নিষিদ্ধ করা হয় তাকে। ২০২১ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতের টি-টেন লিগে দুর্নীতির কারণে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছিল ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে। তাই সাজার মেয়াদ ওই সময় থেকেই বিবেচনা করা হয়েছে। মূল নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে তিনি ক্রিকেট খেলার জন্য মুক্ত হয়েছেন সোমবার।
মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে নাসির খেলতে নামেন রূপগঞ্জ টাইগার্সের হয়ে। তার দল টস জিতে আগে ফিল্ডিং বেছে নেওয়ার পর বোলিং আক্রমণের সূচনা করেন তিনি। ১০ ওভারের কোটা পূরণ করে মাত্র ৩১ রান খরচায় নেন ১ উইকেট। এরপর ব্যাট হাতে অবশ্য সুবিধা করতে পারেননি। তিনে নেমে ১১ বল খেলে আউট হয়ে যান ৯ রানে। তাতে অবশ্য সমস্যা হয়নি রূপগঞ্জ টাইগার্সের। ১৬০ রানের মামুলি লক্ষ্য তাড়ায় ৯৯ বল হাতে রেখে ৮ উইকেটের বড় জয় পেয়েছে দলটি।

ম্যাচের পর ৩৩ বছর বয়সী নাসির গণমাধ্যমকে জানান লম্বা সময় পর মাঠে ফেরার সুখকর অনুভূতি, 'অবশ্যই ভালো লাগছে। যে জিনিসটা মিস করছিলাম— ক্রিকেট খেলা। তাই অবশ্যই খুব ভালো লাগছে অনেক দিন পর ক্রিকেট খেলে। এই তো!'
বাংলাদেশের হয়ে ১৯ টেস্ট, ৬৫ ওয়ানডে ও ৩১ টি-টোয়েন্টি খেলেছেন নাসির। শেষবার তাকে জাতীয় দলের জার্সিতে দেখা গেছে ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে, শেরে বাংলা স্টেডিয়ামেই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওয়ানডেতে। তবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরার আশা এখনও ছাড়েননি তিনি, 'যারা ক্রিকেট খেলে, জাতীয় দলে খেলার জন্যই খেলে। আমিও স্বপ্ন দেখি। এটা বিশ্বাস করি, এখনও সুযোগ আছে। যদি পারফর্ম করতে পারি, অবশ্যই জাতীয় দলে খেলতে পারব। আপনি পারফর্ম করলে সেটার মূল্যায়ন যদি ক্রিকেট বোর্ড করে, তাহলে আপনি পারফর্ম করতে পারবেন।'
জাতীয় দলে ফিরতে না পারার পেছনে মিনহাজুল আবেদিন নান্নুর নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ দলের আগের নির্বাচক কমিটিকে দায়ী করেন নাসির, 'যদি দেখেন, যেবার আমি বিপিএল ভালো খেললাম, এরপর কিন্তু "এ" দল বা বাংলা টাইগার্স বা প্রস্তুতি ম্যাচ— কোথাও আমাকে ডাকেনি। তো আপনি যদি পারফর্ম করার পর এসব জায়গায় না ডাকে, তাহলে জাতীয় দলে কীভাবে খেলবেন? অবশ্যই স্বপ্ন দেখি জাতীয় দলে খেলার। এটা বিশ্বাস করি, পারফর্ম করলে অবশ্যই সুযোগ আসবে।'

২০২৩ সালের বিপিএলে ঢাকা ডমিনেটর্সের হয়ে দারুণ পারফর্ম করেছিলেন নাসির। ১২ ম্যাচে ৪৫.৭৫ গড়ে ও ১২০ স্ট্রাইক রেটে ৩৬৬ রান নিয়ে তিনি ছিলেন টুর্নামেন্টের ষষ্ঠ সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। ১৪.০৬ গড়ে ও ৬.৮১ ইকোনমিতে ১৬ উইকেট পেয়ে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারিদের তালিকায় তার অবস্থান ছিল দুইয়ে।
সুযোগের ঘাটতি নিয়ে নাসির যোগ করেন, 'আপনি যখন নির্বাচক প্যানেলে থাকবেন... যদি বাইরের দেশে দেখেন, দুই বছর পরপর নির্বাচক প্যানেল বদলায়। ধরুন, আমি নির্বাচক হিসেবে আছি। আমার চোখে কিন্তু সবাইকে সমান ভালো লাগবে না। এটাই স্বাভাবিক। দুই বছর পরপর বদলালে, আমার চোখে যাকে ভালো লাগত না, অন্য কারও চোখে তাকে ভালো লাগতেও পারে। আপনি যদি এখন নয়-দশ বছর ধরে একই জায়গায় থাকেন, যাকে ভালো লাগবে না, তার তো ক্যারিয়ারই শেষ হয়ে গেল প্রায়! আমি মনে করি, আমার ক্ষেত্রে এই জিনিসটা হয়েছে। আমি যদি পাঁচটা সুযোগ পাই, বাকিদেরও পাঁচটা সুযোগই পাওয়া উচিত। এমন না হয় যেন, ওরা ২০টা সুযোগ পেল, আমি পাঁচটা সুযোগ পেলাম।'
Comments