পর্তুগাল: দেয়ালে পিঠ ঠেকা রোনালদো কি দিবেন শেষ হুঙ্কার?

ক্রিস্তিয়ানো রোনালদোকে কেউ যদি সর্বকালের সেরা নাও মানতে চান, সময়ের অন্যতম সেরার স্বীকৃতি দিতেই হবে পর্তুগিজ মহাতারকাকে। তবে সময়ের সঙ্গে যেন ক্রমেই অতীতের ধার হারাচ্ছেন পাঁচবারের ব্যালন ডি অর জয়ী। ২০২২ ফুটবল বিশ্বকাপে সুযোগ পাবেন আরও একবার নিজেকে প্রমাণের, এখনও যে ফুরিয়ে যাননি, তা সমালোচকদের দেখিয়ে দিতে চাইবেন সিআরসেভেন। 

ক্রিস্তিয়ানো রোনালদোকে কেউ যদি সর্বকালের সেরা নাও মানতে চান, সময়ের অন্যতম সেরার স্বীকৃতি দিতেই হবে পর্তুগিজ মহাতারকাকে। তবে সময়ের সঙ্গে যেন ক্রমেই অতীতের ধার হারাচ্ছেন পাঁচবারের ব্যালন ডি অর জয়ী। ২০২২ ফুটবল বিশ্বকাপে সুযোগ পাবেন আরও একবার নিজেকে প্রমাণের, এখনও যে ফুরিয়ে যাননি, তা সমালোচকদের দেখিয়ে দিতে চাইবেন সিআরসেভেন।  

২০২২-২৩ মৌসুমে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ও পর্তুগালের হয়ে যেন নিজেকে হারিয়ে খুঁজছেন ৩৭ বছর বয়সী রোনালদো। এতে শঙ্কা তৈরি হয়েছে, এতো বছরের বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারের  সমাপ্তি কি ঘটবে তবে তিক্ত অভিজ্ঞতা সঙ্গী করে? আন্তর্জাতিক ফুটবলের ইতিহাসের সর্বোচ্চ গোলদাতা তিনি। গ্রিসের বিপক্ষে ২০০৪ ইউরোতে করেছিলেন প্রথম গোল, শেষটি করেছেন সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে ২০২২ এর জুনে। এরপর আর গোলের দেখা পাননি পর্তুগিজ অধিনায়ক।

কেবল জাতীয় দল নয়, ক্লাব ফুটবলের সর্বোচ্চ গৌরবের আসর চ্যাম্পিয়ন্স লিগের রাজাও রোনালদো। ১৪০ গোল করে প্রতিযোগিতাটির ইতিহাসের সর্বোচ্চ গোলদাতাও তিনি। গোটা ক্যারিয়ারেই দাপিয়ে বেড়িয়েছেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, রিয়াল মাদ্রিদ, জুভেন্টাসের মতো ক্লাবের হয়ে। তবে ম্যানইউতে দ্বিতীয় মেয়াদের প্রথম মৌসুম ভালো কাটলেও দ্বিতীয় মৌসুমে কোচ এরিক টেন হাগের সঙ্গে দ্বন্দ্বে বারবারই হয়েছেন শিরোনাম।

নিজের পঞ্চম বিশ্বকাপে রোনালদো সতীর্থ হিসেবে পাচ্ছেন সাড়া জাগানো সব তারকাদের। তবে তাদের রয়েছে একটাই দুর্নাম, প্রতিভার অনুপাতে দেশকে সাফল্য এনে দিতে পারেননি তারা। এক ২০১৬ ইউরো ২০১৯ উয়েফা নেশন্স লিগ ছাড়া আর কোন মেজর শিরোপাই নেই পর্তুগিজদের। ২০১৮ বিশ্বকাপ ও ২০২০ ইউরোতে শক্তিশালী দল নিয়ে গিয়েও শেষ ষোল থেকে নিতে হয়েছে বিদায়। 

নিজের সেরা ফর্মে না থাকলেও কাতারে শেষ চেষ্টাটা ঠিকই চালাবেন রোনালদো। বিশ্বাস করেন এখনও ফুরিয়ে যায়নি তার জাদু। ২০২২ এর সেপ্টেম্বরে পর্তুগালে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেছিলেন, 'এখনও কিছুটা ক্রিস্তিয়ানো বাকি রয়েছে। আমি একটা তরুণ দলের অংশ, আমি বিশ্বকাপে অংশ নিতে চাই ও তার পরের ইউরোগুলোতেও।'

তর্কসাপেক্ষে বর্তমান দলটিই পর্তুগালের ইতিহাসের সেরা। রোনালদোর মতোই সামর্থ্য অনুযায়ী পারফর্ম করার চাপ থাকবে প্রত্যেক সদস্যের ওপরই। গত দুই দশকে বড় ধরণের পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে গেছে পর্তুগিজ ফুটবল। মধ্যম মানের দল থেকে ক্রমেই পর্তুগাল পরিণত হয়েছে সময়ের অন্যতম সেরা দলে। রোনালদোর পর ফুটবলকে তারা দিয়েছে ব্রুনো ফার্নান্দেজ, জোয়াও ফেলিক্স, বার্নার্দো সিলভাদের মতো প্রতিভা। মরুর বুকেও তারা হতে পারেন পর্তুগিজদের সাফল্যের কাণ্ডারি। আক্রমণভাগ ও মাঝমাঠ নিয়ে কিছুটা নিশ্চিন্ত থাকার সুযোগ পেলেও ডিফেন্সে অস্ত্রের অভাব কোচ ফার্নান্দো সান্তোসের।

জোয়াও কানসেলো ছাড়া হাল ধরার মতো তেমন কেউ নেই এবারের দলে। ৩৯ বছর বয়সী পেপে কতটা দেখাতে পারবেন অতীতের জৌলুস আছে সে প্রশ্নও। এদিকে দানিলো পেরেইরা, রুবেন ডিয়াসরাও গতিশীল ফরোয়ার্ডদের রুখতে কতটা সক্ষম হবেন তা সময়ই বলবে। এসবও যদি সান্তোসকে চিন্তায় ফেলতে যথেষ্ট না হয় তবে দিয়েগো জোতার ইনজুরি ও আতলেতিকো মাদ্রিদে ফেলিক্সের খারাপ ফর্ম নিশ্চিতভাবেই কুঁচকে দেবে তার ভুরু।

অতীত বিশ্বকাপগুলোতে পর্তুগাল

১৯৬৬ সালে প্রথম বিশ্বমঞ্চে জায়গা করে নেয় পর্তুগিজরা। তৎকালীন চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিলকে ছিটকে দিয়ে সেমিতে পৌঁছে সেই আসরেই চমকে দেয় তারা। সেটাই হয়ে রয়েছে বিশ্বকাপে তাদের সেরা সাফল্য। এরপর দীর্ঘ বিরতির পর ১৯৮৬ সালে আবারও এই প্রতিযোগিতায় ফেরে পর্তুগাল। তবে ২০০২ সাল থেকে আর কোন আসরে দর্শক হয়ে থাকতে হয়নি তাদের। এরপর ২০১০ ও ২০১৮ বিশ্বকাপের শেষ ষোলতে ম্যাচ খেলাই তাদের অর্জন, ২০১৪ সালে বাদ পড়েছিল গ্রুপ পর্ব থেকেই।

যেভাবে কাতার বিশ্বকাপে পর্তুগাল

ফিফা র‍্যাঙ্কিংয়ের নয় নম্বর দল পর্তুগাল বাছাইপর্বে পড়েছিল বিশ্বকাপ না খেলতে পারার শঙ্কায়। সার্বিয়ার বিপক্ষে ঘরের মাঠে ২-১ গোলে হেরে নিজেদের যাত্রা কঠিন করে ফেলেন রোনালদোরা। পরবর্তীতে তুরস্ক ও ম্যাসেডোনিয়াকে হারিয়ে মরুর টিকিট পায় পর্তুগাল।

কাতার বিশ্বকাপের পর্তুগাল দল

গোলরক্ষক: দিয়োগো কস্তা (পোর্তো), রুই প্যাত্রিসিও (রোমা), জোসে সা (উলভস);

ডিফেন্ডার: জোয়াও কানসেলো (ম্যানচেস্টার সিটি), দিয়োগো দালত (ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড), নুনো মেন্দেস (পিএসজি), রুবেন দিয়াস (ম্যানচেস্টার সিটি), তিয়াগো দিয়ালো (লিল), পেপে (পোর্তো), রাফায়েল গেরেরা (বরুশিয়া ডর্টমুন্ড), দানিলো পেরেইরা (পিএসজি);

মিডফিল্ডার: জোয়াও পালহিনহা (ফুলহ্যাম), মাথেউস নুনেস (উলভস), উইলিয়াম কারভালহো (রিয়াল বেতিস), রুবেন নেভেস (উলভস), ব্রুনো ফার্নান্দেস (ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড), জোয়াও মারিও (বেনফিকা), বার্নার্দো সিলভা (ম্যানচেস্টার সিটি), ভিতিনহা (পিএসজি);

ফরোয়ার্ড: জোয়াও ফেলিক্স (আতলেতিকো মাদ্রিদ), ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো (ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড), পেদ্রো নেতো (উলভস), রাফা সিলভা (বেনফিকা), রাফায়েল লেয়াও (এসি মিলান), রিকার্দো হোর্তা (ব্রাগা)।

 

 

 

 

 

Comments

The Daily Star  | English
Worker unrest in Bangladesh

Owners threaten to shut garment factories from tomorrow if unrest continues

The garment factory owners today decided to shut down their production units from tomorrow under “no work no pay” policy for an indefinite period if the labour unrest continues further

35m ago