রোমাঞ্চকর ফাইনালে আবাহনীকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন মোহামেডান

সেই উত্তেজনা। সেই রোমাঞ্চ। সেই শিহরণ। পরতে পরতে বদলালো ম্যাচের রঙ। ঠিক যেমনটা আশি-নব্বই দশকে দেখত দেশের ফুটবল সমর্থকরা। তার ষোলোআনায় ফিরে এলো কুমিল্লায়। হয়তো একটু বেশিই। সেই মোহামেডান-আবাহনীর ম্যাচে। দুই দুইবার পিছিয়ে পড়ে মোহামেডান। প্রথমবার তো দুই গোলের ব্যবধানে। ঘুরে দাঁড়িয়ে উল্টো লিড পেল তারা। এরপর ঘুরে দাঁড়ায় আবাহনী। তাতে ম্যাচ গড়ায় টাই-ব্রেকারে। আর শেষ গল্পটা লিখল মোহামেডান।

মঙ্গলবার কুমিল্লার শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামে ফেডারেশন কাপের ফাইনালে টাই-ব্রেকারে ৪-২ গোলের ব্যবধানে আবাহনীকে হারিয়ে শিরোপা জিতে নেয় মোহামেডান। নির্ধারিত সময়ের পর অতিরিক্ত সময়ে গড়ানো ম্যাচে ৪-৪ ব্যবধানে সমতা ছিল। মোহামেডানের হয়ে একাই চারটি গোল করেন অধিনায়ক সুলেমান দিয়াবাতে। আবাহনীর হয়ে একটি করে গোল করেন ফয়সাল আহমেদ ফাহিম, দানিয়েল কলিন্দ্রেস, এমেকা ওগবাহ ও রহমত মিয়া।

সবশেষ ২০১৩ সালে সুপার কাপে ফাইনালে শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রকে হারিয়ে কোনো শিরোপা জিতেছিল মোহামেডান। এর আগের পাঁচ লড়াইয়ে আবাহনীকে হারাতেও পারেনি তারা। ২০১৯ সালে লিগ ম্যাচে পর আবার এলো জয়। আর সেই জয়টি যেন নিজেদের ইতিহাসের অন্যতম সেরা জয়। কারণ ফাইনালে আট গোল এর আগে দেখেনি দেশের ফুটবল। একই সঙ্গে ১০ বছর পর আবার কোনো শিরোপার মুখ দেখল সাদাকালোরা। আর ফেডারেশন কাপ জিতল ১৪ বছর পর।

এদিন মাঠের লড়াইয়ে যেমন উত্তেজনা ছড়িয়েছে তেমনি ছড়িয়েছে দর্শকদের মধ্যেও। গ্যালারীতে হাতাহাতিতে লিপ্ত হয়ে পড়েছিলেন দুই দলের সমর্থকরা। যা সামাল দিতে হিমশিম খেতে হয়েছে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারিদের। ম্যাচের শেষ পর্যন্ত এক মুহূর্তের জন্য ও থামেনি উত্তেজনা। এমনকি মাঠের প্রান্তে খেলোয়াড়দের দিকে বোতল ছুঁড়তেও দেখা গেছে উত্তেজিত সমর্থকদের।

তবে গল্পটা এদিন ভিন্ন হতেও পারতো। দিয়াবাতে জয়ের মূলনায়ক হলেও নিঃসন্দেহে এই ম্যাচের পার্শ্বনায়ক মোহামেডান গোলরক্ষক হোসেন সুজন। তিনটি গোল হজম করলেও এই গোলরক্ষক ঠেকিয়ে আরও তিনটি নিশ্চিত গোল। সেই গোলরক্ষক ম্যাচের শেষ দিকে চোট পেয়ে মাঠ ছেড়েছেন কাঁদতে কাঁদতে। এর ঠিক দুই মিনিট পর যখন মোহামেডান গোল হজম করে তখন মুষড়ে পড়েছিল দলটি। মনে হয়েছিল মোমেন্টাম হারিয়ে ফেলেছে দলটি। তবে টাই-ব্রেকারে স্নায়ুচাপ ধরে রাখতে পারে তারা। 

টাই-ব্রেকারে মোহামেডানের দিয়াবাতে, আলমগীর কবির রানা, রজার দুরাতে দি অলিভিয়েরা, কামরুল ইসলাম জালের দেখা পেলেও মিস করেন শাহরিয়ান ইমন। আবাহনীর হয়ে এমেকা, মোহাম্মদ ইউসুফ লক্ষ্যভেদ করেন। তবে মিস করেছেন দলের সেরা দুই তারকা অধিনায়ক রাফায়েল আগুস্তো দি সিলভা ও কলিন্দ্রেস। তাদের দুর্বল শট ঠেকান মোহামেডানের বদলি গোলরক্ষক আহসান হাবিব বিপু।

এদিন ম্যাচের ১৬তম মিনিটেই আবাহনীকে এগিয়ে দেন ফাহিম। এমেকার অসাধারণ থ্রু পাস ধরে বাঁ পায়ের কোনোকুনি শটে লক্ষ্যভেদ করেন তিনি। এরপর বিরতিতে যাওয়ার আগে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন কলিন্দ্রেস। হৃদয়ের লং পাস মোহমেডানের ডিফেন্ডার হাসান মুরাদকে এড়িয়ে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে দারুণ এক ভলিতে বল জালে পাঠান কোস্টারিকার হয়ে বিশ্বকাপ খেলা এ তারকা।

দ্বিতীয়ার্ধে তিনটি পরিবর্তন নিয়ে মাঠে নামে মোহামেডান। তাতে আক্রমণে ধার বাড়ে সাদাকালো শিবিরে। তার সুফল ১৫ মিনিটের মধ্যেই পায় দলটি। ৫৬তম মিনিটে কামরুলের ক্রস আবাহনীর আলমগীর ঠিকভাবে ক্লিয়ার করতে না পারলে চলে যায় দিয়াবাতের কাছে। লেগে থাকা ডিফেন্ডারকে এড়িয়ে জায়গা করে দারুণ ভলিতে ব্যবধান কমান তিনি।

এর চার মিনিট পর সমতা ফেরান মোহামেডান অধিনায়ক। মুজাফ্ফর মুজাফ্ফরভের দূরপাল্লার শট আবাহনী শহীদুল আলম সোহেল ঝাঁপিয়ে ঠেকালে বাঁ প্রান্তে পেয়ে যান জাফর ইকবাল। তার কাটব্যাক থেকে লাফিয়ে হেড দিয়ে বল জালে পাঠান দিয়াবাতে।

চার মিনিটের ব্যবধানে দুই গোল হজম করা আবাহনী এরপর আক্রমণের ধার বাড়ায়। ৬৬তম মিনিটে রহমতের ক্রসে হেডে লক্ষ্যভেদ করেন এমেকা। ফের এগিয়ে যায় আবাহনী। ৮৩তম মিনিটে আবারও মোহামেডানের ত্রাতা অধিনায়ক দিয়াবাতে। কামরুলের কর্নার থেকে লাফিয়ে উঠে আরও একটি দুর্দান্ত হেডে নিজের হ্যাটট্রিক পূরণের পাশাপাশি দলকে সমতায় ফেরান মালির এই ফরোয়ার্ড।

অতিরিক্ত সময়েও আক্রমণ পাল্টা আক্রমণে খেলতে থাকে দুই দল। তবে প্রথমার্ধের অন্তিম মুহূর্তে লিড নেয় মোহামেডান। সফল স্পটকিক থেকে প্রথমবারের মতো সাদাকালো শিবিরকে লিড এনে দেন দিয়াবাতে। ডি-বক্সের মধ্যে তাকে আবাহনী গোলরক্ষক শহীদুল ফাউল করলে পেনাল্টি পায় মোহামেডান।

তবে ম্যাচের রঙ বদলের তখনই ঢের বাকি। ১১১তম মিনিটে বড় ধাক্কা খায় মোহামেডান। রাফায়েলের ভলি ঠেকাতে গিয়ে চোট পান গোলরক্ষক সুজন। মাঠ ছাড়েন কাঁদতে কাঁদতে। তার বদলি নামেন আহসান হাবিব বিপু। মাঠের নামার দুই মিনিটের মধ্যেই গোল হজম করতে হয় তাকে। ডি-বক্সের বাইরে থেকে রহমতের বুলেট গতির শট ঝাঁপিয়ে হাত লাগালেও শেষ রক্ষা করতে পারেননি। তবে টাই-ব্রেকারে দুটি পেনাল্টি ঠেকিয়ে শেষে নায়ক এই বদলি গোলরক্ষকই।

Comments

The Daily Star  | English

No price too high for mass deportations

US President-elect Donald Trump has doubled down on his campaign promise of the mass deportation of illegal immigrants, saying the cost of doing so will not be a deterrent.

4h ago