বিলুপ্ত দল থেকে উগান্ডার প্রথম বিশ্বকাপের সারথি ৪৩ বছর বয়সী এনসুবুগা

১৯৯৭ সালের আইসিসি ট্রফিতে যখন খেলতে নামেন তখন ফ্র্যাঙ্ক এনসুবুগার বয়স সবে ১৬। যে দলের হয়ে খেলেছিলেন, সেই দল পর্যন্ত বিলুপ্ত হয়ে গেছে। আর তিনি কিনা প্রায় তিন দশক পরে বিশ্বকাপের মঞ্চে খেলার স্বপ্ন পূরণ করতে যাচ্ছেন। বিশ্বকাপের নবম আসরে তার চেয়ে বেশি বয়সের আর কোন খেলোয়াড়ই থাকবেন না। ৪৩ বছর বয়সী এই অলরাউন্ডারের সঙ্গে উগান্ডারও প্রথম বিশ্বকাপের অভিজ্ঞতা হতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে ও ক্যারিবিয়ানে।
বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে ১৯৯৭ সালের আইসিসি ট্রফির মাহাত্ম্য অনেক। ওই টুর্নামেন্টেই শিরোপা জিতে বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো পা রেখেছিল বিশ্বকাপের মঞ্চে। মালয়েশিয়ায় আয়োজিত প্রতিযোগিতায় কৈশোর না পেরুনো এনসুবুগাও ছিলেন। পূর্ব ও কেন্দ্রীয় আফ্রিকা নামের একটা দল অংশ নিয়েছিল সে আসরে। যে দলটি গড়া হয়েছিল উগান্ডা, তানজানিয়া, মালাউয়ি, জম্বিয়ার ক্রিকেটারদের নিয়ে। সেসময় দলটির আইসিসির সহযোগী সদস্যর স্বীকৃতি ছিল। এনসুবুগার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয়েছিল এখন হারিয়ে যাওয়া সেই দলের হয়েই।
ওই টুর্নামেন্টে যারা ক্রিকেট খেলেছেন, তাদের ক্রিকেট ছাড়ার হয়তো কতকাল পেরিয়ে গেছে! বাংলাদেশের আকরাম খান, খালেদ মাসুদরা খেলোয়াড়ি জীবন ছেড়ে এসেছেন কম দিন হয়নি। এনসুবুগা আছেন এখনও দৃশ্যপটে। আলাদা একটা দল নিয়ে যখন তার দেশ খেলতে পারতো না, সেই সময় দেখেছেন তিনি। ছেলেদের ক্রিকেটে প্রথম বিশ্বকাপ খেলবে উগান্ডা, এই সময়েও আছেন তিনি। আফ্রিকান অঞ্চলের বাছাইপর্বে জিম্বাবুয়েকে টপকে তারা জায়গা করে নিয়েছে আসন্ন বিশ্বকাপে। আজও নাকি বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় এনসুবুগার, 'এই বিশ্বকাপে সুযোগ পাওয়ার ব্যাপারটা এখনও ধাক্কার মতো লাগে। জিম্বাবুয়েকে হারানোর পর আরেকবার খেলতে আমাদের আর তর সইছে না। ছেলেরা অনেক রোমাঞ্চিত ও সামনের অভিজ্ঞতা কী হতে যাচ্ছে তা দেখার জন্য অপেক্ষায়।'
'আমি এটার জন্য শেষ ২৭ বছর ধরে চেষ্টা করে গেছি। স্বপ্ন সত্যি হওয়ার অপেক্ষায় ছিলাম, অবশেষে তা হলো। উগান্ডায় লোকেরা বেশ রোমাঞ্চিত ছিল আমাদেরকে বিশ্বকাপে জায়গা করে নিতে দেখার জন্য, আমরা ছেলেদের প্রথম দল যারা তা করতে পারলাম এবং সবাই জানতে চায় আমরা কখন খেলবো যাতে তারা দেখতে পারে।'
ক্রিকেটেই অবশ্য এনসুবুগার বিচরণ নয় শুধু। এই বাঁহাতি স্পিনার বলেন, 'আমি হকি, ব্যাডমিন্টন, টেবিল টেনিস, ভলিবল খেলেছি। আমি বেশ ভালো ছিলাম টেনিসে। আমি হ্যান্ডবলও খেলেছিলাম এবং আমি ফুটবলও ভালোবাসি। সবশেষে ক্রিকেট শিখেছি কারণ ক্রিকেট বলটাকে ভয় পেতাম। আমরা টেনিস বলে শুরু করেছিলাম এবং কোচের আমাকে অনেক সাহায্য করেছে।'
কাম্পালার লুগুগো ক্রিকেট ওভালে তার বাবা কাজ করতেন। সেখানকার ক্লাবগুলোর জন্য দুপুরের খাবার রান্না করতেন তার মা। সেখান থেকেই ক্রিকেটে ঝোঁক আসে এনসুবুগার। উগান্ডার ক্রিকেটাঙ্গনে বাকি ভাইদেরও উপস্থিতি আছে ভালোই, 'আমার ভাইয়েরাও ক্রিকেট খেলেছেন। এবং তাদের একজন (রজার মুকাসা) এখনও জাতীয় দলে আমার সঙ্গে খেলেন।' ২০২৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দুই ভাই একসাথে নামবেন উগান্ডার জার্সি গায়ে দিয়ে। তাদের আরেক ভাই লরেন্স সেমাতিম্বাও জাতীয় দলে খেলেছেন একটা সময়।
আসন্ন বিশ্বকাপে এনসুবুগা সবচেয়ে বয়স্ক ট্যাগ নিয়েই খেলবেন। তবে এত বেশি বয়সেও খেলা চালিয়ে যাওয়াটাকেও তো কৃতিত্ব দিতে হয়। সেটা সম্ভব হয়েছে এনসুবুগার শৃঙ্খলায়, '৪৩ বছর বয়সেও খেলতে পেরে আমি অনেক গর্ববোধ করি। আমি এখনও শক্তিশালী এবং আমি এটার জন্য বেশ কৃতজ্ঞ। আমার একটা রুটিন আছে। আমি সকালে বেশ আগেভাগেই ঘুম থেকে উঠি, ছয়টার কাছাকাছি সময়ে, এবং ৭-৮ কিলোমিটার জগিং করি। এরপর ক্লাবে আসি এবং ট্রেনিং করি।'
গ্রুপ সিতে উগান্ডা মুখোমুখি হবে আফগানিস্তান, নিউজিল্যান্ড ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের মতো দলের। ক্যারিবিয়ান এক দানবের উইকেটেই চোখ এনসুবুগার, 'আন্দ্রে রাসেলের সামনে বোলিং করার জন্য আর অপেক্ষা করতে পারছি না এবং কেইন উইলিয়ামসনের সামনে। যদি তার উইকেট নিতে পারি, তাহলে দুনিয়ার সবচেয়ে খুশি মানুষ হব আমি।'
উগান্ডার ক্রিকেট এগিয়ে যাওয়া আর তার ক্যারিয়ারের পথচলাও একই। দেশটির ক্রিকেটের শূন্য থেকে এ পর্যন্ত থাকা এনসুবুগা দিনবদলের আশায় আছেন, 'এই মুহূর্তে উগান্ডায় ক্রিকেটে অত বড় না। আমরা খেলাটাকে গ্রামেগঞ্জে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টায় আছি। অনেক কিছু বদলে গেছে আমার সময়েই। আমরা একটা সময় এস্টোটার্ফের উইকেটে খেলতাম কিন্তু এখন আমাদের চারটি গ্রাসের উইকেট আছে। আমরা প্রায় সারাদিন ট্রেনিং করি এবং আমাদের চুক্তিও আছে যাতে পরিবারের দেখভাল করতে পারি।'
Comments