ফিফা বিশ্বকাপ ২০২২
তাদের শেষ বিশ্বকাপ

গ্যারেথ বেল: ২০২২-ই কি তবে প্রথম ও শেষ!

প্রতি চার বছরে একবার অনুষ্ঠিত হয় ফুটবল বিশ্বকাপ। মহা এই আসরকে কেন্দ্র করে উন্মাদনায় মাতেন ভক্ত, খেলোয়াড়, সাবেক থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষও। পছন্দের তারকাকে বিশ্বমঞ্চে দেখতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেন ভক্তরা। আবার প্রিয় তারকার শেষ বিশ্বকাপে অশ্রুসজল হয়ে ওঠে অনেকের চোখ। তেমনি ২০২২ বিশ্বকাপও হতে চলেছে অনেক তারকার শেষ, গ্যারেথ ফ্রাঙ্ক বেল আর কখনও নাও পেতে পারেন বিশ্বমঞ্চে ওয়েলসের প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ।

প্রতি চার বছরে একবার অনুষ্ঠিত হয় ফুটবল বিশ্বকাপ। মহা এই আসরকে কেন্দ্র করে উন্মাদনায় মাতেন ভক্ত, খেলোয়াড়, সাবেক থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষও। পছন্দের তারকাকে বিশ্বমঞ্চে দেখতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেন ভক্তরা। আবার প্রিয় তারকার শেষ বিশ্বকাপে অশ্রুসজল হয়ে ওঠে অনেকের চোখ। তেমনি ২০২২ বিশ্বকাপও হতে চলেছে অনেক তারকার শেষ, গ্যারেথ ফ্রাঙ্ক বেল আর কখনও নাও পেতে পারেন বিশ্বমঞ্চে ওয়েলসের প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ।

বেলের বর্তমান বয়স ৩৩। ২০২৬ বিশ্বকাপে যেটা গিয়ে ঠেকবে ৩৭ এ। গোটা ক্যারিয়ারেই ইনজুরি পিছু ছাড়েনি তার। ফর্মের তুঙ্গে থাকা অবস্থায় বারবারই চোটের ধাক্কায় খেই হারিয়েছেন বেল। এক সময় গতিদানব বলে বিবেচিত এই তারকা সময়ের পরিক্রমায় হারিয়েছেন অতীতের ধার। তবু ২০২২ বিশ্বকাপে ওয়েলস ভক্তদের স্বপ্ন টিকে রয়েছে বেলের ওপরই।

এবারের আসর ওয়েলসের জন্য হতে চলেছে ঐতিহাসিক এক বিশ্বকাপ। 'প্রাসাদের ভূমি' খ্যাত দেশটি এর আগে কেবল একবারই খেলেছে বিশ্বমঞ্চে, সেটাও ৬৪ বছর আগে। ১৯৫৮ সালে সেমিতে তাদের যাত্রা থামিয়ে দেয় সেই আসরের চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল। এরপর দীর্ঘদিন বাছাইপর্ব বাধা পেরোতে পারেনি ওয়েলস। ২০২২ বিশ্বকাপে তাই বেলের নেতৃত্বে স্মরণীয় কিছু করতে মুখিয়ে আছে তারা।

২০০৬ সালের এপ্রিল মাসে মাত্র ১৬ বছর বয়সে সাউদাম্পটনের হয়ে প্রথম সারির ক্লাব ফুটবলে অভিষেক হয় বেলের। জাতীয় দলের সুযোগ ধরা দেয় পরের মাসেই, ২৭ মে ত্রিনিদাদের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো নিজ দেশের প্রতিনিধিত্ব করতে মাঠে নামেন তিনি। নিজের তৃতীয় ম্যাচেই স্লোভাকিয়ার বিপক্ষে প্রথম আন্তর্জাতিক গোলের দেখা পান বেল।

সেবছরই জার্মানিতে বসেছিল বিশ্বকাপ। বাছাইপর্ব থেকে ছিটকে গিয়ে ওয়েলস অংশগ্রহণের শর্ত পূরণ করতে পারেনি সেই আসরে। অভিষেকের পর ২০১০ পর্যন্ত একরকম খোলসেই বন্দী ছিলেন বেল। ক্লাব কিংবা জাতীয় দল কোনখানেই ছিলেন না খুব একটা উজ্জ্বল। এই সময়কালে ২৩ ম্যাচ খেলে মাত্র দুই গোল করেন তিনি। অবশ্য এর জন্য দায় ছিল তার পজিশনেরও।

২০০৯ বেশ কঠিন এক বছর ছিল বেলের জন্য। হাঁটুর ইনজুরিতে সেবার খেলতে পারেননি বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের দুটি গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ। সেই দুটি খেলাতেই পরাজয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে ওয়েলস। ২০১০ বিশ্বকাপে দর্শক হয়ে থাকতে হয় বেল ও তার দলকে। তবে এরপরই শুরু হয় বেলের উত্থান।

বর্তমান প্রজন্মের কাছে উইঙ্গার হিসেবে পরিচিত বেল ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে ছিলেন একজন লেফট ব্যাক। দলের প্রয়োজনে কখনও কখনও খেলতেন লেফট মিডফিল্ডার হিসেবেও। ২০১০ সালের চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ইন্টার মিলানের বিপক্ষে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে হ্যাটট্রিক করে সাড়া ফেলে দেন 'ডিফেন্ডার বেল'। তার অবিশ্বাস্য গতি ও খালি জায়গা কাজে লাগানোর ক্ষমতা নজর কাড়ে সবার। সেই থেকে বেল বনে যান একজন ফরোয়ার্ড।

পজিশন বদলের সুফল দ্রুতই পান বেল। ২০১৮ পর্যন্ত ছিলেন নিজের ক্যারিয়ারের সেরা ফর্মে। ক্লাব ও জাতীয় দল দুই জায়গাতেই নিজের জাত চেনাতে থাকেন গতির জন্য খ্যাতি পাওয়া এই ফরোয়ার্ড। সেই সময়কালে ৫১ ম্যাচে জাতীয় দলের হয়ে মাঠে নেমে ২৯ গোল করেন তিনি। ২০১০ থেকে ২০১৩ পর্যন্ত টটেনহাম হটস্পারের হয়ে সমানে আলো ছড়ান বেল। ফলে নেইমার জুনিয়রকে কিনতে না পেরে তাকে লক্ষ্য বানায় রিয়াল মাদ্রিদ। তৎকালীন বিশ্বরেকর্ড ১০০ মিলিয়ন ইউরোতে ২০১৩ সালে পাড়ি দেন লস ব্লাঙ্কস শিবিরে।

রিয়ালে যোগ দেওয়াটা আশীর্বাদ হয়ে দেখা দেয় বেলের জাতীয় দলের পারফরম্যান্সেও। ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো ও করিম বেনজেমার সঙ্গে গড়ে তোলেন সেই সময়ের বিখ্যাত আক্রমণভাগ বিবিসি (বেল-বেনজেমা-ক্রিস্তিয়ানো)। তবে ফর্মের চূড়ায় থেকেও নিজ দেশ ওয়েলসকে ২০১৪ বিশ্বকাপে নিতে না পারার আক্ষেপ সঙ্গী হয় তার। ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপেও স্বপ্নভঙ্গ হয় ওয়েলসের, ততোদিনে অবশ্য একটু একটু করে বেল হারাতে শুরু করেছেন তার কার্যকারীতা।

সময়ের সঙ্গে ফুটবলেও আসতে থাকে একের পর এক পরিবর্তন। ডিফেন্ডারদের ক্রমাগত উন্নতি ও পজেশনিং ফুটবলের দৌরাত্মে বেলের মতো গতিনির্ভর ফুটবলারদের কাজটা হয়ে পড়ে কিছুটা কঠিন। তাছাড়া ইনজুরি ছিল তার নিত্যসঙ্গী, ২০০৯/১০ মৌসুম থেকে এখন পর্যন্ত একটি বছরও ইনজুরির হাত থেকে রেহাই পাননি বেল। এতে ক্রমেই গতি হারাতে থাকেন তিনি, ফলে তাকে রুখে দেওয়াটা ক্রমেই সহজ হয়ে পড়ে ডিফেন্ডারদের জন্য।

রোনালদো পরবর্তী সময়ে বেনজেমা জ্বলে উঠলেও নিজের ছায়া হয়ে থাকেন বেল। ২০১৯ সালে তার ক্যারিয়ারের একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা ছিল জাতীয় দলের অধিনায়কত্ব লাভ। তার নেতৃত্বে এখন পর্যন্ত বেশ সফলই বলা চলে ওয়েলসকে। এসময় ৩৪ ম্যাচ খেলে ১২টিতেই জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছে বেলের দল। তার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় সাফল্য ২০২২ বিশ্বকাপে ওয়েলসকে বাছাইপর্ব পার করানো।

সেই যাত্রায় গোল ও অ্যাসিস্ট করে যথেষ্ট অবদান রেখেছেন বেল। বাছাইপর্বের সাত ম্যাচে পাঁচ গোল ও চার অ্যাসিস্ট এসেছে তার পা থেকে। প্লে অফের ফাইনালে ইউক্রেনের বিপক্ষে বাঁচামরার লড়াইয়ে তার বাড়ানো বলেই গোল পায় ওয়েলস। ১-০ গোলের জয়ে সৃষ্টি হয় ইতিহাস, বিশ্বকাপ খেলার স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নেয় ওয়েলস ফুটবলের বর্তমান প্রজন্মের।

২০২২ বিশ্বকাপেও ওয়েলসকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেবেন বেল এমনটাই প্রত্যাশা থাকবে তার ভক্তদের। কারণ, এবার না হলে আর কখনোই নয়- এমন এক অবস্থানে দাঁড়িয়ে সান সিরোকে চমকে দেওয়া এই তারকা। বেল কি পারবেন নিজের প্রথম ও সম্ভাব্য শেষ বিশ্বকাপ রাঙাতে? এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে মরুর দেশ কাতারেই।

Comments

The Daily Star  | English
BNP office in Nayapaltan

Column by Mahfuz Anam: Has BNP served its supporters well?

The BNP failed to reap anything effective from the huge public support that it was able to garner late last year.

11h ago