ব্রাজিল: তুখোড় আক্রমণভাগে 'মিশন হেক্সা'র হাতছানি

ছবি: এএফপি

প্রতি বিশ্বকাপেই অন্যতম ফেভারিট হিসেবে যাত্রা শুরু করে ব্রাজিল। ফুটবলের সর্বোচ্চ মর্যাদার এই আসরের সবচেয়ে সফল দল তারাই। সর্বাধিক পাঁচটি শিরোপা আছে সেলেসাওদের অর্জনে। একমাত্র এই দলটিই অংশ নিতে পেরেছে বিশ্বকাপের সবকটি আসরে। কাতার বিশ্বকাপেও যথারীতি নেইমার-রাফিনহা-ভিনিসিয়ুস জুনিয়রদের ঘিরে অনেক প্রত্যাশা থাকবে ভক্তদের। কাতারে মরুর বুকে আরও একবার 'মিশন হেক্সা'য় অর্থাৎ ষষ্ঠ শিরোপার খোঁজে নামবে ব্রাজিল।

কোচ তিতের দলে এবারও দারুণ প্রতিভাবান সব তরুণ ফুটবলারের ছড়াছড়ি। তুরুপের তাস হতে পারেন ভিনিসিয়ুস, রদ্রিগোর মতো তরুণ তুর্কিরা। এবারই প্রথমবারের মতো বিশ্বমঞ্চে খেলবেন দলে ডাক পাওয়া অধিকাংশ ফরোয়ার্ড। পাশাপাশি মিডফিল্ড ও ডিফেন্সেও তারকার কোনো অভাব নেই ব্রাজিলের। তার ওপর দলের সবচেয়ে বড় তারকা নেইমারের সাম্প্রতিক ফর্ম ভয় ধরাতে বাধ্য যেকোনো দলের রক্ষণভাগকে।

এবারের বিশ্বকাপ দলে তারুণ্যের সঙ্গে অভিজ্ঞতার দারুণ মিশেল গড়েছেন কোচ তিতে। দানি আলভেস, থিয়াগো সিলভা, কাসেমিরোদের অভিজ্ঞতা কাজে আসতে পারে গ্যাব্রিয়েল মার্তিনেল্লি, আন্তোনিদেরও। স্কোয়াডের অধিকাংশ খেলোয়াড়ই আছেন দারুণ ছন্দে। তাই ষষ্ঠ বিশ্বকাপ জয়ের ব্যাপারে যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী ব্রাজিল। নিজেদের প্রথম বিশ্বকাপে সুযোগ পাওয়া এই তরুণদের আগমন পিএসজি তারকা নেইমারের জন্যও দারুণ কিছু বয়ে আনবে বলেই বিশ্বাস তিতের।

গত অগাস্টে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিতে বলেছিলেন, 'আমার মনে হয়, এই তরুণ খেলোয়াড়দের আগমন মাঠ ও মাঠের বাইরে নেইমারের জন্য ভালো হবে। যখন আপনার দারুণ কৌশলগত প্রতিভার আরও খেলোয়াড় থাকবে, আপনি চাপ ও প্রতিপক্ষের মনোযোগ ভাগাভাগি করে নিতে পারবেন। তাদের (প্রতিপক্ষ) এখন বেছে নিতে হবে রক্ষণের সময় তারা কোথায় ফোকাস করবে।'

দুইবারের বিশ্বকাপজয়ী কিংবদন্তি ব্রাজিল ফরোয়ার্ড রোনালদোও আশাবাদী এবারের দল নিয়ে, 'যত যাই হোক, নেইমারের ওপর চাপ থাকবেই। সে ব্রাজিলের সুপারস্টার এবং এতে কিছু যায় আসে না যে কে তার পাশে খেলছে। তবু আমি মনে করি, এখন পর্যন্ত ব্রাজিল দলে যাদের সঙ্গী হিসেবে পেয়েছে নেইমার, তাদের তুলনায় নতুন প্রজন্মের প্রতিভারা তাকে সেরা সমর্থনই যোগাবে। শেষ তিন বিশ্বকাপে ব্রাজিল যেসব দল নিয়ে গেছে, সেগুলোর চেয়ে এই দলটা নিশ্চিতভাবেই ভালো। তবে দায়িত্ব সব সময়ই সবচেয়ে বড় তারকার কাঁধেই থাকে, আর সে হলো নেইমার।'

কাতারে অনুমিতভাবে নেইমারকে কেন্দ্র করেই আক্রমণভাগ সাজাবেন তিতে। ফলে তাকে ঘিরে গতির ঝড় তুলতে পারেন ভিনিসিয়ুস, রদ্রিগো, রাফিনহারা। আক্রমণভাগে তারকার কোনো অভাব না থাকায় পাঁচ ফরোয়ার্ডও খেলিয়ে দিতে পারেন তিতে, যেমনটা তিনি করেছিলেন বিশ্বকাপের প্রস্তুতি ম্যাচে। তিউনিশিয়াকে ৫-১ ও ঘানাকে ৩-০ গোলে উড়িয়ে দিয়ে এই কৌশলকে দারুণভাবে কাজে লাগিয়েছিলেন তার শিষ্যরা।

বিশ্বকাপ দলে নয় জন ফরোয়ার্ডকে সুযোগ দিয়েছেন তিতে। ডিফেন্সেও বেশ শক্তিশালী ব্রাজিল। মার্কুইনহোস-থিয়াগো সিলভা-এদার মিলিতাওরা সবাই প্রতিষ্ঠিত নাম ক্লাব ফুটবলে। জুভেন্তাসের ডিফেন্ডার ব্রেমারও আছেন। গত ২০২১-২২ মৌসুমে ইতালিয়ান সিরি আর সেরা ডিফেন্ডারের পুরস্কার পেয়েছিলেন তিনি। গোলরক্ষক নিয়েও দুশ্চিন্তা নেই সেলেসাওদের। এই পজিশনে সময়ের অন্যতম সেরা দুই ফুটবলার এদারসন ও অ্যালিসন আছেন। একমাত্র ফুলব্যাক পজিশন নিয়েই কিছুটা দুশ্চিন্তা রয়েছে তিতের। যার ফলে মিলিতাওকে দেখা যেতে পারে রাইট-ব্যাক হিসেবেও।

২০২২ বিশ্বকাপের ব্রাজিল দল:

গোলরক্ষক: আলিসন (লিভারপুল), এদারসন (ম্যানচেস্টার সিটি), ওয়েভারতন (পামস);

ডিফেন্ডার: দানি আলভেস (পুমাস), দানিলো (জুভেন্তাস), অ্যালেক্স তেলেস (সেভিয়া), আলেক্স সান্দ্রো (জুভেন্তাস), ব্রেমার (জুভেন্তাস), এদার মিলিতাও (রিয়াল মাদ্রিদ), মারকুইনহোস (পিএসজি), থিয়াগো সিলভা (চেলসি);

মিডফিল্ডার: কাসেমিরো (ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড), এভারতন রিবেইরো (ফ্ল্যামেঙ্গো), ব্রুনো গিমারেস (নিউক্যাসল ইউনাইটেড), ফাবিনহো (লিভারপুল), ফ্রেদ (ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড), লুকাস পাকেতা (ওয়েস্ট হ্যাম);

ফরোয়ার্ড: আন্তোনি (ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড), গ্যাব্রিয়েল জেসুস (আর্সেনাল), গ্যাব্রিয়েল মার্তিনেল্লি (আর্সেনাল), নেইমার (পিএসজি), পেদ্রো (ফ্লেমিশ), রাফিনহা (বার্সেলোনা), রিচার্লিসন (টটেনহ্যাম হটস্পার), রদ্রিগো (রিয়াল মাদ্রিদ), ভিনিসিয়ুস জুনিয়র (রিয়াল মাদ্রিদ)।

বিগত আসরগুলোতে ব্রাজিল:

২০০৬, ২০১০ ও ২০১৪ সালের বিশ্বকাপে ভালো দল নিয়ে গিয়েও নিজেদের লক্ষ্য পূরণ করতে পারেনি ব্রাজিল। এর আগে ১৯৫৮ সালে কিংবদন্তি পেলের উত্থানের বছরে সুইডেনকে হারিয়ে তারা জিতে নেয় প্রথম শিরোপা। পরের আসরে গারিঞ্চার নৈপুণ্যে পায় দ্বিতীয় বিশ্বকাপ। এক আসর পর আবার তারা চ্যম্পিয়ন হয় ১৯৭০ সালে। চতুর্থ শিরোপার জন্য সেলেসাওদের অপেক্ষায় থাকতে হয়েছিল ২৪ বছর। ১৯৯৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত আসরের ফাইনালে ইতালিকে টাইব্রেকারে হারিয়ে হয় তারা চ্যাম্পিয়ন। সবশেষ ২০০২ সালে জার্মানদের কাঁদিয়ে রেকর্ড পঞ্চম শিরোপায় চুমু খায় ব্রাজিল।

যেভাবে ২০২২ বিশ্বকাপে এলো ব্রাজিল:

দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চলের বাছাইপর্বে ১৭ ম্যাচের ১৪টি জিতে পয়েন্ট তালিকায় সেরা হয়েই বিশ্বমঞ্চে জায়গা করে নিয়েছে ফিফা র‍্যাঙ্কিংয়ের এক নম্বর দল ব্রাজিল। দ্বিতীয় স্থান লাভ করা আর্জেন্টিনার চেয়ে ৬ পয়েন্টে এগিয়ে থেকে বাছাই শেষ করে তারা। বিশ্বকাপে জায়গা পাকা করার পথে ৪০ গোল করেছে ব্রাজিল, বিপরীতে হজম করেছে মাত্র ৫ গোল। সাম্প্রতিক ফর্মটাও দারুণ তাদের। ২০১৮ বিশ্বকাপের পর তিতের অধীনে এখন পর্যন্ত মাত্র একটি প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ হেরেছে ব্রাজিল। ২০২১ কোপা আমেরিকার ফাইনালে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আর্জেন্টিনার বিপক্ষে হারই এই সময়কালে নেইমারদের একমাত্র খারাপ স্মৃতি।

Comments

The Daily Star  | English

No price too high for mass deportations

US President-elect Donald Trump has doubled down on his campaign promise of the mass deportation of illegal immigrants, saying the cost of doing so will not be a deterrent.

5h ago