ফিফা বিশ্বকাপ ২০২২

মেসির হাতে গোল্ডেন বল ও বুট দুটোই দেখছেন মাশরাফি

ফুটবল বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার অন্ধভক্ত বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। যারা দেশের ক্রিকেটের অল্পস্বল্প খবরও রাখেন তারা সবাই জানেন বিষয়টি। অথচ ছোটবেলায় দেখেছেন তার পরিবারের বাকি সব সদস্যরাই করেন ব্রাজিলকে সমর্থন। বাবা-চাচা-মামা হতে শুরু করে আশেপাশের সবাই। সেখানে আর্জেন্টিনার সমর্থক হয়ে বড় হওয়া কিছুটা বিস্ময়করই।

ফুটবল বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার অন্ধভক্ত বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। যারা দেশের ক্রিকেটের অল্পস্বল্প খবরও রাখেন তারা সবাই জানেন বিষয়টি। অথচ ছোটবেলায় দেখেছেন তার পরিবারের বাকি সব সদস্যরাই করেন ব্রাজিলকে সমর্থন। বাবা-চাচা-মামা হতে শুরু করে আশেপাশের সবাই। সেখানে আর্জেন্টিনার সমর্থক হয়ে বড় হওয়া কিছুটা বিস্ময়করই।

মূলত দিয়াগো ম্যারাডোনার জাদুকরী ফুটবল শৈলীর কারণেই আর্জেন্টিনার সমর্থক মাশরাফি। ফুটবলটা তখন অবশ্য খুব একটা বুঝতেন না। ১৯৯০ সালের সেই বিশ্বকাপে বয়স তখন মাত্র আট। খেলা বলতে বুঝতেন, কে বেশি ড্রিবলিং করতে পারে। আর এ কাজে ম্যারাডোনার চেয়ে পটু আর কে? এই কিংবদন্তির অসাধারণ সব কারিকুরিতে মুগ্ধ হন মাশরাফি। সেই মুগ্ধতা থেকে ভালোবাসা। আর সেই ভালোবাসা আজও বহন করে চলেছেন দেশের ক্রিকেটের অন্যতম সেরা এ অধিনায়ক।

'১৯৯০ সালে আমার বয়স ছিল আট। খেলা আর কি বুঝতাম? দেখতাম কে বেশি কাটাতে পারে। ম্যারাডোনাকে দেখতাম কাটায়-কুটায় সবগুলোকে (সব খেলোয়াড়কে) ফালায় দিয়া বল নিয়ে ঢুকে যায়। মাথায় আমার এটাই কাজ কাজ করত। বাবা-চাচা সবাই করত ব্রাজিল। বলতও ব্রাজিলের কথা। কিন্তু আমার ভালো লাগত ওই ম্যারাডোনাকে,' ডেইলিস্টারের সঙ্গে একান্ত আলাপে এমনটাই বলেন মাশরাফি।

'কি দারুণ ফুটবলই না খেলত ম্যারাডোনা। সবগুলারে কাটাইয়া ক্যানিজিয়াকে মুখের সামনে দিয়ে আসতো। তারপরও ও মিস করত (রাগান্বিত কণ্ঠে)। ৮৬'র মতো ৯০'তেও দলটাকে ম্যারাডোনায় টানছে। ব্রাজিলের বিপক্ষে ওই গোলটা বলতে গেলে ম্যারাডোনারই। সবই ঠিক ছিল। কিন্তু ফাইনালে একটা উল্টা-পাল্টা পেনাল্টি দিয়া হারায় দিল রেফারি,' যোগ করেন নড়াইল এক্সপ্রেস।

তবে ম্যারাডোনাকে নিয়ে মাশরাফির স্মৃতিটা স্পষ্ট যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বকাপে। তাও শেষ হয়েছে আক্ষেপ দিয়েই। মাশরাফির ভাষায়, '১৯৯৪তেও দারুণ শুরু করেছিল। গ্রিসের বিপক্ষে রেকর্ড গোলটা। আহা! ডি-বক্সের বাইরে থেকে কি সুন্দর একটা চিপ দিয়ে গোল। চারটা গোল দিছিল ওই ম্যাচে। দ্বিতীয় রাউন্ডে রোমানিয়ার সঙ্গে কি হয়ে গেল। ম্যারাডোনা থাকলে ওইবারও ফলটা ভিন্ন হতো। অনেক কষ্ট পেয়েছিলাম।'

এই ম্যারাডোনার হাত ধরেই সবশেষ বিশ্বকাপটি জিতেছে আর্জেন্টিনা। এরপর অনেক অনেক তারকা খেলোয়াড় এলেও কেউ পারেনি ফের আরেকটি বিশ্বকাপ স্পর্শ করতে। ২০১৪ ব্রাজিল বিশ্বকাপে লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনা ফাইনাল খেলতে পেরেছিল। কিন্তু একের পর এক সহজ কিছু মিসে হয়নি সেবারও। সেই ফাইনালও আক্ষেপের মাশরাফির জন্য, 'মেসি সেদিন কি করল? ওই গোলটা (৪৭তম মিনিটে বাঁ প্রান্তে ফাঁকায় পাওয়া সুযোগ) মিস না করলে... ও এই সব গোল মিস করে, বলেন? অন্য সব ম্যাচে ১০টা মারলে ৯টা হবে। ওইদিনই মিস হল।'

এরপর ২০১৮ সালে রাশিয়াতেও হয়নি। তবে এবারের কাতার বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনাকে নিয়ে দারুণ আশাবাদী মাশরাফি। বর্তমান দল নিয়ে বেশ সন্তুষ্ট। সন্তুষ্ট কোচ নিয়েও। এখন অপেক্ষা মাঠের ফলাফলের, 'এবারের দলটা বেশ ভালো। ৩৫টা ম্যাচ টানা জিতেছে। সবচেয়ে বড় কথা এবার ডিফেন্সটাও ভালো। কোচও অনেক দিন থেকে এই দলকে প্রস্তুত করতেছে। আমার মন বলতেছে এবার হতে পারে।'

তবে আর্জেন্টিনার বড় বাধা হিসেবে দেখছেন ফ্রান্সকে। ফাইনালে আর্জেন্টিনার সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দেখছেন স্পেনকে। মাশরাফির ভাষায়, 'ফ্রান্সকে এড়াতে পারলে ভালো হয়। গ্রুপে মেক্সিকো আছে। ওরা কিন্তু কেফরা করে ফেলতে পারে। গ্রুপ পর্বটা ঠিকঠাক খেলতে হবে। ব্রাজিল-জার্মানি পড়লে মনে হয় এবার হারায় দিতে পারব। স্পেনও ভালো দল। ফাইনালে ওদের সঙ্গে দেখা হবে আমাদের।'

ম্যারাডোনার মতো না হলেও হালের মেসিকে বেশ পছন্দ করেন মাশরাফি। আশা করছেন এবার বিশ্বকাপ জিতেই কিংবদন্তির কাতারে পৌঁছবেন বর্তমান আর্জেন্টাইন অধিনায়ক। গোল্ডেন বল ও বুট দুটোই মেসির হাতে দেখছেন মাশরাফি, 'মেসি সবই জিতেছে। কিন্তু তারপরও ওকে একটা বিশ্বকাপ তো জিততেই হবে। যেটা পেলে-ম্যারাডোনারা করেছে। আমার মনে হয় মেসি এবার ৭টা গোল দিবে, সেরা খেলোয়াড়ও হবে।'

শেষ পর্যন্ত যদি মেসিরা বিশ্বকাপ জিততে পারেন তাহলে এবার তার উদযাপনটা বেশ বুনো হবে বলেও জানান এ পেসার, 'আর্জেন্টিনার জার্সি ফিফট পেয়েছি। অনলাইনে একটা আর্জেন্টিনার লুঙ্গির অর্ডার দিয়েছি। আর্জেন্টিনার পতাকার মতো। বাপ-বেটা দুইজনের জন্যই। মেসি গোল দিবে আর লুঙ্গি ড্যান্স হবে।'

Comments

The Daily Star  | English
Our rising foreign debt and financial worries

Our rising foreign debt and financial worries

The growth of debt exceeding the growth of GDP is a clear sign of vulnerability, the consequences of which are already present.

12h ago