রিচার্লিসনের জোড়া গোলে দাপট দেখিয়ে বিশ্বকাপ শুরু ব্রাজিলের

প্রথমার্ধে একাধিক সুযোগ পেয়েও নিশানা ভেদ করতে পারল না ব্রাজিল। সার্বিয়াও লড়াই করল চোখে চোখ রেখে। তবে দ্বিতীয়ার্ধে আর খুঁজে পাওয়া গেল না তাদের। মনোমুগ্ধকর ফুটবলের পসরা সাজিয়ে আক্রমণের বন্যা বইয়ে দিল তিতের শিষ্যরা। রিচার্লিসনের জোড়া গোলে তারা তুলে নিল অসাধারণ জয়। রেকর্ড পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন দলটি কাতার বিশ্বকাপে করল শুভ সূচনা।

প্রথমার্ধে একাধিক সুযোগ পেয়েও নিশানা ভেদ করতে পারল না ব্রাজিল। সার্বিয়াও লড়াই করল চোখে চোখ রেখে। তবে দ্বিতীয়ার্ধে আর খুঁজে পাওয়া গেল না তাদের। মনোমুগ্ধকর ফুটবলের পসরা সাজিয়ে আক্রমণের বন্যা বইয়ে দিল তিতের শিষ্যরা। রিচার্লিসনের জোড়া গোলে তারা তুলে নিল অসাধারণ জয়। রেকর্ড পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন দলটি কাতার বিশ্বকাপে করল শুভ সূচনা।

বৃহস্পতিবার 'জি' গ্রুপের ম্যাচে লুসাইল স্টেডিয়ামে দাপুটে পারফরম্যান্সে সার্বিয়াকে ২-০ গোলে হারিয়েছে ব্রাজিল। বিরতির পর ১২ মিনিটের মধ্যে দুবার লক্ষ্যভেদ করেন টটেনহ্যাম হটস্পারের স্ট্রাইকার রিচার্লিসন। দ্বিতীয় গোলটি ছিল চোখ ধাঁধানো বাইসাইকেল কিকে। আলেক্স সান্দ্রো ও কাসেমিরোর শট গোলপোস্টে বাধা না পেলে সেলেসাওদের জয়ের ব্যবধান হতে পারত আরও বড়।

বল দখলে অনুমিতভাবে প্রাধান্য দেখায় ব্রাজিল। গোলমুখে তাদের নেওয়া ২২টি শটের মধ্যে আটটি ছিল লক্ষ্যে। অন্যদিকে, সার্বিয়ার পাঁচটি শটের কোনোটিই লক্ষ্যে থাকেনি।

ম্যাচের নবম মিনিটে সার্বিয়ার রক্ষণে হানা দেয় ব্রাজিল। কাসেমিরো ডি-বক্সের ভেতরে দারুণ পাসে খুঁজে নেন নেইমারকে। তবে প্রতিপক্ষের ডিফেন্ডাররা তাকে ঘিরে ধরলে শট নিতে পারেননি তিনি। চার মিনিট পর কর্নার পায় সেলেসাওরা। পিএসজি ফরোয়ার্ড নেইমারের বাঁকানো কিক সরাসরি গোলপোস্টের দিকে যাচ্ছিল। শেষ মুহূর্তে আরেকটি কর্নারের বিনিময়ে তা রুখে দেন গোলরক্ষক ভানিয়া মিলিনকোভিচ-স্যাভিচ।

সুযোগ তৈরি করতে না পারলেও বল দখলে পাল্লা দিয়ে খেলতে থাকে সার্বিয়া। তবে তাদেরকে সচেতন থাকতে হয় প্রতিপক্ষের আক্রমণ ভেস্তে দেওয়াতে। ২০তম মিনিটে কাসেমিরোর দূরপাল্লার শটও আটকে দেন ভানিয়া। ২৫তম মিনিটে সার্বিয়া ভীতি ছড়ায় ব্রাজিলের রক্ষণে। বাঁ প্রান্ত দিয়ে আক্রমণে উঠে ডি-বক্সে বিপজ্জনক ক্রস করেন দুসান তাদিচ। আলেক্সান্দার মিত্রোভিচের চাপ সামলে তা লুফে নেন গোলরক্ষক আলিসন।

তিন মিনিট পর ভানিয়ার দৃঢ়তায় গোলপোস্ট অক্ষত থাকে ইউরোপের দলটির। চেলসি ডিফেন্ডার থিয়াগো সিলভা রক্ষণচেরা পাস বাড়ান ভিনিসিয়ুসের উদ্দেশ্যে। রিয়াল মাদ্রিদ ফরোয়ার্ড শট নেওয়ার আগেই সামনে এগিয়ে এসে ঝাঁপিয়ে বল ফিরিয়ে দেন ভানিয়া। ৩০তম লুকাস পাকেতার ব্যাক-হিলে বল পেয়ে রাফিনহা স্কয়ার পাস দেন ছয় গজের বক্সে। সিলভা চেষ্টা করেও বলে পা ছোঁয়াতে পারেননি।

পাঁচ মিনিট পর সুবর্ণ সুযোগ নষ্ট করেন রাফিনহা। পাকেতার সঙ্গে বল দেওয়া-নেওয়া করে ডি-বক্সে ঢুকে পড়েন তিনি। সামনে ছিলেন কেবল সার্বিয়া গোলরক্ষক। কিন্তু দুর্বল শটে তার পরীক্ষা নিতে পারেননি রাফিনহা।

৪১তম মিনিটে ফের হতাশ হতে হয় ব্রাজিলকে। প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়ের উঁচু করে বাড়ানো পাস নিকোলা মিলেনকোভিচ ঠিকমতো নিয়ন্ত্রণে নিতে ব্যর্থ হন। নিজের কিকই তার বুকে লাগার পর বল পেয়ে যান ভিনিসিয়ুস। ডি-বক্সে ঢুকে পড়েও তিনি কাজের কাজটা করতে পারেননি। তার শট ব্লক করে নিজের ভুল শুধরে নেন মিলেনকোভিচ। ফলে গোলশূন্য স্কোরলাইন নিয়ে বিরতিতে যায় দুই দল।

বিরতির পর পাল্টে যায় ম্যাচের চিত্র। শিরোপা প্রত্যাশী ব্রাজিল একচ্ছত্র আধিপত্য দেখায়। দ্বিতীয়ার্ধের প্রথম মিনিটেই গোল পেয়ে যেতে পারত তারা। তবে ভানিয়ার বাজে পাসের ফায়দা নিতে ব্যর্থ হন রাফিনহা। গোলরক্ষকের গায়ে মেরে বসে সুযোগ হাতছাড়া করেন তিনি।

নয় মিনিট পর বাঁ প্রান্ত থেকে ডি-বক্সে ক্রস করেন ভিনিসিয়ুস। ফাঁকায় ছিলেন নেইমার। কিন্তু ঠিকমতো শট নিতে না পারায় বল থাকেনি লক্ষ্যে। এর পাঁচ মিনিট পর সান্দ্রো ৩০ গজ দূর থেকে নেন শট। বল ফিরে আসে বার কাঁপিয়ে। তাতে গোল পাওয়া হয়নি ব্রাজিলের।

দুই মিনিট পর কাঙ্ক্ষিত গোলের দেখা পায় সেলেসাওরা। নেইমার পায়ের কারুকাজে বল নিয়ে ঢুকে পড়েন ডি-বক্সে। তিনি শট নেওয়ার আগেই কোণাকুণি শট নেন ভিনিসিয়ুস। সেটা ঝাঁপিয়ে ফেরালেও পুরোপুরি বিপদমুক্ত করতে পারেননি সার্বিয়া গোলরক্ষক। আলগা বল অনায়াসে জালে পাঠান অরক্ষিত রিচার্লিসন।

এরপর ব্রাজিলের মোহনীয় ফুটবল শৈলীতে দিশেহারা হয়ে পড়ে সার্বিয়া। আক্রমণে চাপ ধরে রেখে ৭৪তম মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন রিচার্লিসনই। ভিনিসিয়ুসের পাস প্রথম ছোঁয়ায় নিয়ন্ত্রণে নিয়ে ডান পায়ের অ্যাক্রোব্যাটিক শটে লক্ষ্যভেদ করেন তিনি।

সাত মিনিট পর ফের গোলবঞ্চিত হয় ব্রাজিল। এবারে রিয়াল মিডফিল্ডার কাসেমিরোর বাঁকানো শট ক্রসবারে বাধা পায়। ৮৭তম মিনিটে দুই বদলি আন্তোনি ও রদ্রিগোর যুগলবন্দিতে আবার গোল উৎসব করতে পারত তিতের দল। তবে রদ্রিগোর শট অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়।

এর আগে ম্যাচের ৭৯তম মিনিটে নেইমারকে মাঠ থেকে উঠিয়ে নেওয়া হয়। বদলি হিসেবে আক্রমণভাগের বাকি ফুটবলারদের পরখ করে নেন কোচ তিতে। আন্তোনি ও রদ্রিগোর পাশাপাশি বেশ কিছু সময় খেলার সুযোগ পান গ্যাব্রিয়েল জেসুস ও গ্যাব্রিয়েল মার্তিনেল্লি।

প্রত্যাশিত জয়ে দুর্দান্ত শুরু করা ব্রাজিলের পরের ম্যাচ আগামী সোমবার। বাংলাদেশ সময় রাত ১০টায় দোহার ৯৭৪ স্টেডিয়ামে তারা মুখোমুখি হবে সুইজারল্যান্ডের।

Comments

The Daily Star  | English
books on Bangladesh Liberation War

The war that we need to know so much more about

Our Liberation War is something we are proud to talk about, read about, and reminisce about but have not done much research on.

14h ago