কুদুস নৈপুণ্যে দ. কোরিয়াকে হারিয়ে টিকে রইল ঘানা

'সে আমার চেয়ে ভালো নয়। সে কেবল মাত্র একজন হাই প্রোফাইল খেলোয়াড়, এটাই।...' নেইমারের চেয়ে নিজেকে ভালো দাবি করে কদিন আগেই এ কথা বলেছিলেন মোহামেদ কুদুস। আর কেন বলেছিলেন তা বিশ্বকাপ মঞ্চেই বুঝিয়ে দিলেন এ আয়াক্স ফরোয়ার্ড। অসাধারণ নৈপুণ্যে জোড়া গোল করে জেতালেন ঘানাকে। তাতে দারুণ খেলেও হারতে হলো এশিয়ার দল দক্ষিণ কোরিয়াকে।

সোমবার আল রাইয়ানের এডুকেশন সিটি স্টেডিয়ামে ফিফা বিশ্বকাপের 'এইচ' গ্রুপের ম্যাচে দক্ষিণ কোরিয়াকে ৩-২ গোলের ব্যবধানে হারায় ঘানা। কুদুসের জোড়া গোলের সঙ্গে দলের হয়ে গোল পেয়েছেন মোহামেদ সালিসু। কোরিয়ার হয়ে গোল দুটি করেছেন গুই-সাং চো।

তবে লড়াইটা হয়েছে বেশ জমজমাট। শুরু থেকেই আক্রমণ ও পাল্টা আক্রমণে খেলতে থাকে দুই দল। প্রথমার্ধেই জোড়া গোলে এগিয়ে যায় ঘানা। দ্বিতীয়ার্ধে মাত্র চার মিনিটের ব্যবধানে গোল দুটি শোধ করে ম্যাচে ফিরেছিল কোরিয়া। কিন্তু এরপর কুদুসের গোল জয় নিশ্চিত করে ঘানা। তবে শেষ দিকে প্রবল চাপ সৃষ্টি করেছিল এশিয়ান দলটি। কিন্তু গোল মিলেনি।

এদিন হারলেই বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিত ঘানা। নকআউট পর্বের আশা টিকিয়ে রাখতে অন্তত ড্র করতেই হতো তাদের। আর জয় দিয়েই টিকে রইল দলটি। গ্রুপ পর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচে উরুগুয়ের বিপক্ষে ভালো কিছু করতে পারলে ২০১০ সালের পর দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠতে পারে দলটি।

অন্যদিকে বিশ্বকাপে টানা তৃতীয় হারে সমীকরণ কঠিন করে ফেলল দক্ষিণ কোরিয়া। তবে এখনও রয়েছে তাদের আশা। সেক্ষেত্রে পর্তুগালের বিপক্ষে জয়ের পাশাপাশি অন্য দলগুলো ফলাফলের দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে তাদের।

তবে ম্যাচের শুরুটা বেশ দারুণভাবে করেছিল কোরিয়া। মুহুর্মুহু আক্রমণে ব্যস্ত রাখে ঘানাইয়ান শিবির। প্রথম ১৫ মিনিটেই ৫টি শট নেয় দলটি। আদায় করে নেয় ৭টি কর্নার। কিন্তু গোল আদায় করে নিতে পারেনি এশিয়ান দলটি।

চতুর্থ মিনিটে কাউন্টার অ্যাটাক থেকে গোল করার মতো প্রথম সুযোগ ছিল তাদের। ডান প্রান্ত থেকে নেওয়া কউন চ্যাংহুনের কাটব্যাক থেকে বলে পায়ে সংযোগ করতে পারলে গোল পেতে পারতেন চো গুই-সাং। এর চার মিনিট পর কর্নার থেকে গোল মুখে সৃষ্ট জটলায় হুয়াং ইন-বেওমের শট এক ডিফেন্ডার ব্লক না করলে বিপদে পড়তে পারতো ঘানা।

তবে ধারার বিপদে উল্টো ২৪তম মিনিটে গোল আদায় করে নেয় আফ্রিকান দলটি। জর্ডান আইয়ুর ফ্রি কিক ঠিকভাবে বল ঠেকাতে পারেননি কোরিয়ান ডিফেন্ডার। আন্দ্রে আইয়ুর গায়ে লেগে গোলমুখে জটলায় বল পেয়ে বল জালে পাঠান সাউদাম্পটন ডিফেন্ডার সালিসু।

গোল পেয়ে উজ্জীবিত হয়ে ওঠে ঘানা। ম্যাচ গুছিয়ে নেয় দলটি। ১০ মিনিট না যেতে ব্যবধান দ্বিগুণও করে তারা। গিডেওন ম্যানসাহর কাছ থেকে বল পেয়ে জর্ডান আইয়ুর নিখুঁত এক ক্রসে অফসাইডের ফাঁদ ভেঙে দারুণ এক হেডে লক্ষ্যভেদ করেন আয়াক্স মিডফিল্ডার কুদুস।

দ্বিতীয়ার্ধেও দারুণ গতিতে খেলতে থাকে দুই দল। ৫০তম মিনিটে তারিক ল্যাম্পটির কোণাকোণি শট অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট না হলে ম্যাচে ফিরতে পারতো তারা।

৫৩তম মিনিটে কিম জিন-সূর দারুণ এক ক্রস দারুণ একটি হেড নিয়েছিলেন চো গুই-সাং। কিন্তু তার চেয়ে দারুণ দক্ষতায় ঝাঁপিয়ে ঠেকিয়ে দেন ঘানা গোলরক্ষক লরেন্স আটি-জিগি। তবে পাঁচ মিনিট পর চোকে আর আটকাতে পারেননি এ গোলরক্ষক। লি কাং-ইনের ক্রস থেকে দারুণ এক হেডে লক্ষ্যভেদ করেন এ ফরোয়ার্ড। ৬১তম মিনিটে সমতায় ফেরে কোরিয়া।

এবার কিম জিন-সূর কাটব্যাক থেকে লাফিয়ে উঠে আরও একটি দারুণ জোরালো এক হেডে লক্ষ্যভেদ করেন চো। তবে এর সাত মিনিট পর লিড পুনরুদ্ধার করে ঘানা। মেনসাহর ক্রস ইনাকি উইলিয়ামস মিস করে তবে ডান প্রান্তে ফাঁকায় পেয়ে যান কুদুস। জোরালো শটে বল জালে পাঠাতে কোনো ভুল হয়নি এ আয়াক্স ফরোয়ার্ডের।

পিছিয়ে পরে গোল শোধ করতে মরিয়া হয়ে ওঠে কোরিয়া। ৭৫তম মিনিটে ক্যাং-ইনের ফ্রিকিক ঝাঁপিয়ে কর্নারের বিনিময়ে ঠেকান ঘানা গোলরক্ষক। পরের মিনিটে একেবারে ফাঁকায় বল পেয়েছিলেন সন। কিন্তু প্রথম দফায় শট না নিয়ে বল নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে নষ্ট করেন সে সুবর্ণ সুযোগ।

এর পরের মিনিটে প্রায় একই জায়গা থেকে দারুণ এক কোণাকোণি শট নিয়েছিলেন ক্যাং-ইন। একেবারে গোল মুখে থেকে ঠেকান সালিসু। ৮৪তম মিনিটে কিম জিন-সূর শট অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। ম্যাচের যোগ করা সময়ে ফের ফাঁকায় পেয়ে শট নিতে দেরি করে সুযোগ নষ্ট করেন সন।

পঞ্চম মিনিটে হ্যাটট্রিক তুলেই দলকে সমতায় ফেরাতে পারতেন চো। কিন্তু তার নেওয়া শট দারুণ দক্ষতায় কর্নারের বিনিময়ে ঠেকান ঘানা গোলরক্ষক। এরপরও আরও কিছু সুযোগ পায় দলটি। কিন্তু গোল না পেলে হার নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয় এশিয়ান দলটিকে।

Comments

The Daily Star  | English

How is the economy doing?

The silver lining is that the economy isn’t falling apart

1h ago