স্পেনের হারে জিতেও বিদায় নিল জার্মানি
দ্বিতীয়ার্ধের প্রায় শুরুতেই জার্মানরা জেনে যায় বদলে গেছে সমীকরণ। কারণ অপর ম্যাচে পিছিয়ে পড়েছে স্পেন। অর্থাৎ কাজটা করতে হবে নিজেদেরই। কিন্তু সাত গোলের পার্থক্য ঘোচানো আদতে বেশ কঠিন। তবে ম্যাচে যে পরিমাণ সুযোগ পেয়েছিল তারা, তাতে অসম্ভবও ছিল না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পেরে ওঠেনি দলটি। জয় পেলেও গোলের সংখ্যা বাড়াতে পারেনি সে হারে। ফলে আরও একবার গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নিতে হলো জার্মানিকে। রাশিয়ায় গত আসরেও গ্রুপ পর্ব পার হতে পারেনি চারবারের চ্যাম্পিয়নরা।
বৃহস্পতিবার রাতে কাতারের আল খোরের আল বায়েত স্টেডিয়ামে ফিফা বিশ্বকাপে 'ই' গ্রুপের ম্যাচে কোস্টারিকাকে ৪-২ গোলের ব্যবধানে হারিয়েছে জার্মানি। বদলি নেমে দলের হয়ে জোড়া গোল করেছেন কাই হাভার্টজ। একটি করে গোল করেছেন সার্জ নাব্রি ও নিকলাস ফুলক্রুগ। ক্রোয়েশিয়ার হয়ে একটি গোল দেন ইয়ালতসিন তাহেদা। অপর গোলটি আসে আত্মঘাতী থেকে।
দিনের অপর ম্যাচে স্পেনকে ২-১ গোলের ব্যবধানে হারিয়ে নক আউট পর্বে উঠেছে জাপান। তাও গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে। এশিয়ান দলটির জয়ে জিতেও বিদায় নিতে হলো জার্মানিকে। গোল ব্যবধানে এগিয়ে থেকে দ্বিতীয় হয়ে নকআউট পর্বে নাম লেখায় স্পেন। প্রথম ম্যাচে এই কোস্টারিকাকে ৭-০ গোলে বিধ্বস্ত করাতেই এগিয়ে যায় দলটি।
তিন ম্যাচে দুই জয়ে জাপানের পয়েন্ট ৬। সমান ম্যাচে একটি করে জয় ও ড্রয়ে ৪ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ রানার্সআপ হয় স্পেন। জার্মানির পয়েন্টও সমান ৪, তবে গোল ব্যবধানে অনেক পিছিয়ে বাদ পড়ে দলটি। কোস্টারিকার সংগ্রহ ৩ পয়েন্ট।
তবে এদিন শুরু থেকেই মুহুর্মুহু আক্রমণ করে খেলতে থাকে জার্মানি। ৬৮ শতাংশ সময় বল দখলে রেখে শট নিয়েছিল ৩২টি। যার মধ্যে ১১টি ছিল লক্ষ্যে। কিন্তু কেইলর নাভাসের দারুণ কিছু সেভে এবং ফরোয়ার্ডদের ব্যর্থতায় ব্যবধানটা বড় করতে পারেনি তারা। অন্যথায় পরিস্থিতি পাল্টে যেতেও পারতো। কোস্টারিকা মোট ৭টি শট নিয়ে ৫টি লক্ষ্যে রাখতে পারে।
তবে ম্যাচের ৭০তম মিনিটে যখন হুয়ান পাবলো ভার্গেসের বল নিয়ন্ত্রণের চেষ্টায় জার্মান গোলরক্ষক ম্যানুয়েল নয়ারের পায়ে বল জালে জড়ায় তখন শঙ্কা ছিল স্পেনেরও বাদ পড়ার। কারণ সরাসরি দুটি করে জয়ে তখন এগিয়ে জাপান ও কোস্টারিকা। কিন্তু পরে জার্মানি এগিয়ে গেলে ভাগ্যের শিকে খোলে স্পেনের। অথচ এই স্প্যানিশদের দিকে তাকিয়ে থেকেই মাঠে নেমেছিল দলটি। কিন্তু তারা স্পেনকে উদ্ধার করতে পারলেও পারেনি স্প্যানিশরা।
শুরু থেকে একের পর এক আক্রমণে ম্যাচের দশম মিনিটেই এগিয়ে যায় জার্মানি। বাঁ প্রান্ত থেকে নেওয়া ডেভিড রামের কাটব্যাক থেকে থেকে দারুণ এক হেডে লক্ষ্যভেদ করেন নাব্রি। প্রথমার্ধে এই গোলের লিড নিয়েই বিরতিতে যায় জার্মানি। তবে দ্বিতীয়ার্ধে আক্রমণের ধারা বাড়াতে অলআউট খেলতে গিয়ে ১২ মিনিটের ব্যবধানে পাল্টা আক্রমণ থেকে দুটি গোল হজম করে দলটি।
৫৮তম মিনিটে দারুণ এক পাল্টা আক্রমণে কেন্ডাল ওয়াস্টনের হেডে ঠিকভাবে ঠেকাতে পারেননি গোলরক্ষক নয়ার। আলগা বল পেয়ে সহজেই লক্ষ্যভেদ করেন তাহেদা। এর ১২ মিনিট পর আরেকটি আচমকা আক্রমণে এগিয়ে যায় কোস্টারিকা। ফ্রিকিক থেকে উড়ে আসা বলে ভার্গাস বল ভলি করতে গিয়েছিলেন। তার পায়ে লেগে গোলমুখের জটলায় নয়ারের পায়ে লেগে বল জালে জড়ায়।
৭৩তম মিনিটে সমতায় ফেরে জার্মানি। আরেক বদলি খেলোয়াড় ফুলক্রুগের কাছ থেকে বল পেয়ে নিখুঁত শটে লক্ষ্যভেদ করেন হাভার্টজ। ১২ মিনিট পর ফের এগিয়ে যায় জার্মানরা। ডান প্রান্ত থেকে নাব্রির ক্রস থেকে ফাঁকায় বল পেয়ে আলতো এক টোকায় হাভার্টজ। ৮৯তম মিনিটে লেরয় সানের বাড়ানো বলে ফাঁকায় পেয়ে স্কোরলাইন ৪-০ করেন ফুলক্রুগ।
এদিন গোল করার বেশ কিছু সুবর্ণ সুযোগ পেয়েছিল জার্মানি। সুযোগ ছিল কোস্টারিকারও। ম্যাচের দ্বিতীয় মিনিটেই এগিয়ে যেতে পারত জার্মানি। জামাল মুসিয়ালার শট ঠেকিয়ে দেন কোস্টারিকা গোলরক্ষক নাভাস। পাঁচ মিনিট পর লেয়ন গোরেটস্কার শট লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। নবম মিনিটে টমাস মুলারের অসাধারণ হেড একেবারে বার পোস্ট ঘেঁষে লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। ১৪তম মিনিটে গোরেটস্কার হেডও ঝাঁপিয়ে ঠেকান নাভাস।
২৯তম মিনিটে সুযোগ ছিল কোস্টারিকারও। একেবারে ফাঁকায় বল পেয়েও শট নিতে পারেননি ক্যাম্বেল। ছয় মিনিট পর কিমিখের দূরপাল্লার শট ধরতে গিয়ে হাত থেকে ছুটে গেলে বিপদ হওয়ার আগেই দ্বিতীয় দফায় ধরেন নাভাস। ৩৯তম এক খেলোয়াড়কে কাটিয়ে দারুণ এক কোণাকোণি শট নেন নাব্রি। কিন্তু একেবারে বার পোস্ট ঘেঁষে গেলে বাড়ে হতাশা।
৪২তম ডিফেন্ডারের ভুল গোলরক্ষককে একা পেয়ে গিয়েছিলেন কেইসার ফুয়ের। অসাধারণ দক্ষতায় অসাধারণ সেভে সে যাত্রা দলকে রক্ষা করেন নয়ার। পরের মিনিটে ফের ডিফেন্ডারদের ভুলে বল পেয়ে গিয়েছিলেন ভেনেগাস। কিন্তু বল নিয়ন্ত্রণে নিতে পারেননি তিনি।
৬১তম মিনিটে মুসিয়ালার শট বারপোস্টে লেগে ফিরে আসে। পরের মিনিটে লক্ষ্যভ্রষ্ট হয় মুলারের শট। ৬২তম মিনিটে রুডিগারের শট একেবারে বারপোস্ট ঘেঁষে লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। ৬৭তম মিনিটে ফের মুসিয়ালার আরেকটি শট বারপোস্টে বাধা পায়। ৭৬তম মিনিটে তো অবিশ্বাস্য নাভাস। একেবারে ফাঁকায় থেকে নেওয়া ফুল ক্রুগের শট ঠেকান দারুণ দক্ষতায়। ৮৬তম মিনিটে হাভার্টজকে হতাশ করেন নাভাস। যোগ করা সময়ের পঞ্চম মিনিটে ফুলক্রুগের হেড অল্পের জন্য লক্ষ্যে থাকেনি।
Comments