টাইব্রেকারে নেদারল্যান্ডসকে হারিয়ে সেমিতে আর্জেন্টিনা

শেষ দুটি ম্যাচে সহজ কিছু সহজ নষ্ট করে রীতিমতো আর্জেন্টাইনদের চক্ষুশূলে পরিণত হয়েছিলেন লাউতারো মার্তিনেজ। এদিন টাই-ব্রেকারের শেষ পেনাল্টি নেওয়ার দায়িত্ব পরে সেই লাউতারোর কাঁধে। তবে এদিন আর হতাশ করেননি এ ইন্টার মিলান ফরোয়ার্ড। লক্ষ্যভেদে উল্লাসে মাতিয়েছেন আর্জেন্টিনাকে। ডাচদের আরও একবার হতাশ করে সেমি-ফাইনালে জায়গা করে নেয় আর্জেন্টিনা।  

শেষ দুটি ম্যাচে সহজ কিছু সহজ নষ্ট করে রীতিমতো আর্জেন্টাইনদের চক্ষুশূলে পরিণত হয়েছিলেন লাউতারো মার্তিনেজ। এদিন টাই-ব্রেকারের শেষ পেনাল্টি নেওয়ার দায়িত্ব পরে সেই লাউতারোর কাঁধে। তবে এদিন আর হতাশ করেননি এ ইন্টার মিলান ফরোয়ার্ড। লক্ষ্যভেদে উল্লাসে মাতিয়েছেন আর্জেন্টিনাকে। ডাচদের আরও একবার হতাশ করে সেমি-ফাইনালে জায়গা করে নেয় আর্জেন্টিনা।  

শুক্রবার কাতারের লুসাইল স্টেডিয়ামে ফিফা বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালের ম্যাচে নেদারল্যান্ডসকে টাই-ব্রেকারে ৪-৩ ব্যবধানে হারায় আর্জেন্টিনা। নির্ধারিত সময়ের খেলা ২-২ গোলে ড্র হলে ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। সেখানে কোনো গোল না হলে টাই-ব্রেকারে নিষ্পত্তি হয় ম্যাচটি।

টাই-ব্রেকারে ডাচদের প্রথম দুটি শটই ঠেকান আর্জেন্টাইন গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্তিনেজ। অন্যদিকে ঠাণ্ডা মাথায় প্রথম তিনটি স্পটকিক জালে পাঠায় তার সতীর্থরা। কিন্তু চতুর্থ শটটি মিস করে ফেলেছিলেন এঞ্জো ফার্নান্দেজ। ফলাফল নিষ্পত্তি করতে নিতে হয় শেষ শটও। সে শটে কোনো ভুল করেননি লাউতারো।

তবে ম্যাচটা নির্ধারিত সময়েই জয়ের পথে ছিল আর্জেন্টিনা। বিজয় উল্লাসের প্রস্তুতি চলছিল তখন। ম্যাচের যোগ করা সময়ও তখন প্রায় শেষ। ঠিক তখন ভুলটি করে বসেন বদলি খেলোয়াড় জার্মেন পাজ্জেলা। বিপজ্জনক জায়গায় ফ্রিকিক পেয়ে বসে ডাচরা। সেই ফ্রিকিক থেকে সরাসরি শট না নিয়ে সামনে থাকা ভৌট ভেগহর্স্টকে পাস দেন টিউন কুপমেইনার্স। এরপর লক্ষ্যভেদ। জমে যায় ম্যাচ।

শেষের নায়ক এমিলিয়ানো মার্তিনেজ হলেও ম্যাচে দুর্দান্ত খেলেছেন অধিনায়ক লিওনেল মেসি। একটি গোল করেছেন। আরেকটি করিয়েছেন। পাঁচ ডিফেন্ডারের মাঝ দিয়ে নিখুঁত যে পাস দিয়েছেন তা রীতিমতো অবিশ্বাস্য। তাতে দুই গোলের লিড পেয়ে গিয়েছিল দলটি। কিন্তু শেষ দিকে ডাচদের বদলি খেলোয়াড়দের নৈপুণ্যে খেলতে হয় টাই-ব্রেকার পর্যন্ত।

তবে এদিন মাঝমাঠের দখল প্রায় সমানে সমান। তবে আক্রমণ বেশি শানায় আর্জেন্টাইনরা। ১৪টি শট নেয় দলটি। যার ৫টি ছিল লক্ষ্যে। অন্যদিকে ৬টি শটের মাত্র ২টি লক্ষ্যে রাখতে পারে নেদারল্যান্ডস। সেই দুইটি থেকেই গোল পায় তারা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ভাগ সঙ্গ দেয়নি তাদের।

ম্যাচের শুরুতে কোনো দলই পারেনি খেলা গোছাতে। ছিল ভুল পাসের ছড়াছড়িও।  ২২তম মিনিটে ডান প্রান্ত থেকে লিওনেল মেসির দূরপাল্লার শট ছিল বলার মতো প্রথম আক্রমণ। তাও লক্ষ্যভ্রষ্ট বারপোস্টের অনেক উপর দিয়ে। তবে গোল করার মতো ভীতি জাগানো সুযোগ প্রথম পায় নেদারল্যান্ডস। ২৪তম মিনিটে ডি-বক্সের সামান্য বাইরে থেকে নেওয়া স্টিভেন বার্গউইনের শট লক্ষ্যভ্রষ্ট হলে কোনো বিপদ হয়নি আর্জেন্টিনার।

৩৩তম মিনিটে ডি-বক্সের বাইরে থেকে ফাঁকায় শট নেওয়ার সুযোগ পান রদ্রিগো দি পল। তবে শটে জোর না থাকায় সহজেই লুফে নেন ডাচ গোলরক্ষক আন্ড্রেয়াস নোপার্ট। দুই মিনিট পরই কাঙ্ক্ষিত গোল পায় আর্জেন্টিনা। এক খেলোয়াড়কে কাটিয়ে পাঁচ খেলোয়াড়ের মাঝ দিয়ে মেসির দেওয়া নিখুঁত এক থ্রু-বলে গোলরক্ষককে একা পেয়ে যান নাহুয়েল মলিনা। আলতো টোকায় গোলরক্ষককে পরাস্ত করতে কোনো ভুল হয়নি এ অ্যাতলেতিকো মাদ্রিদ ডিফেন্ডারের।

৪০তম মিনিটে ভালো জায়গায় বল পেলেও নাথান আকের কড়া মার্কিংয়ে জোরালো শট নিতে পারেননি মেসি। অন্যথায় গোল পেতে পারতেন আর্জেন্টাইন অধিনায়ক। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই দুটি পরিবর্তন নিয়ে মাঠে নামে ডাচরা। বার্গউইন ও মার্টিন ডি রুনের বদলে মাঠে নামেন স্টিভেন বার্গহাউস ও কুপমেইনার্স। এরপর ৭৭তম মিনিটে মেমফিস ডিপাইয়ের জায়গায় নামেন ভৌট ভেগহর্স্ট। এই বদলি খেলোয়াড়রাই পরে ম্যাচে রাখে ডাচদের।

৫১তম মিনিটে ব্যবধান বাড়ানোর সুযোগ ছিল আর্জেন্টিনার। ফাঁকায় থাকা মেসিকে বল বাড়িয়েছিলেন দি পল। কিন্তু বলের গতি বেশি থাকায় ধরতে পারেন নি আর্জেন্টাইন অধিনায়ক। ৫৮তম আলেক্সিস ম্যাক আলিস্টারের পাস থেকে ফাঁকায় বল পেয়ে গিয়েছিলেন আলভারেজ। কিন্তু বল নিয়ন্ত্রণে নিতে দেরি করে ফেলায় নষ্ট হয় সে সুযোগ। পাঁচ মিনিট পর মেসির ফ্রিকিক একেবারে বারপোস্ট ঘেঁষে লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়।

৭৩তম মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করে আর্জেন্টিনা। ডি-বক্সের মধ্যে মার্কাস আকুনিয়াকে ডাচ ডিফেন্ডার ডাঞ্জেল ডামফ্রিস ফাউল করলে পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি। সফল স্পট কিক থেকে লক্ষ্যভেদ করেন মেসি। চলতি আসরে এটা তার চতুর্থ গোল। সবমিলিয়ে বিশ্বকাপে তার দশম গোল। ছুঁয়ে ফেলেন নিজ দেশের সর্বোচ্চ বিশ্বকাপ গোলদাতা গ্যাব্রিয়েল বাতিস্তুতাকে।

১০ মিনিট পর ব্যবধান কমায় নেদারল্যান্ডস। ডান প্রান্ত থেকে বার্গহাউসের ক্রস থেকে অসাধারণ এক হেডে লক্ষ্যভেদ করেন ভেগহর্স্ট। ৮৫তম মিনিটেই সমতায় ফিরতে পারতো ডাচরা। বার্গহাউসের জোরালো শট একেবারে বারপোস্ট ঘেঁষে লক্ষ্যভ্রষ্ট হলে বেঁচে যায় আর্জেন্টিনা। তবে ম্যাচের যোগ করা সময়ের শেষ মুহূর্তে সমতায় ফেরে নেদারল্যান্ডস। ফ্রিকিক থেকে শট না নিয়ে ভেগহর্স্টকে পাস দেন কুপমেইনার্স। বল নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিখুঁত শটে লক্ষ্যভেদ করেন এ বেসিকতাস ফরোয়ার্ড। ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে।

অতিরিক্ত সময়ের শুরুতে আক্রমণ দানা বাঁধেনি কোনো দলেরই। ১০৪তম মিনিট মেসির ফ্রিকিক থেকে পা ছোঁয়াতে পারলে গোল পেতে পারতেন নিকোলাস ওতামেন্দি। নয় মিনিট পর ফ্রিকিক থেকে আর্জেন্টিনা ডি-বক্সে জটলা সৃষ্টি হয়েছিল। তবে শেষ পর্যন্ত কোনো বিপদ হয়নি। পরের মিনিটে এগিয়ে যেতে পারতো আর্জেন্টিনা। লাউতারো মার্তিনেজের শট গোলমুখ থেকে কর্নারের বিনিময়ে ঠেকান ভ্যান ডাইক। পরের মিনিটে এঞ্জো ফার্নান্দেজের শট এক খেলোয়াড় গায়ে লেগে বারপোস্ট ঘেঁষে লক্ষ্যভ্রষ্ট হলে হতাশা বাড়ে আর্জেন্টাইনদের। কর্নার থেকে ফাঁকায় হেড দিয়েছিলেন পাজ্জেলা। তবে লক্ষ্যে রাখতে পারেনি।

১১৯তম মিনিটে লাউতারো মার্তিনেজের নেওয়া শট ঝাঁপিয়ে ঠেকান ডাচ গোলরক্ষক। পরের মিনিটে মেসির শট এক খেলোয়াড় পায়ে লেগে কর্নার না হলে এগিয়ে যেতে পারতো আলবিসেলেস্তেরা। এরপরের মিনিটে তো দুর্ভাগা এঞ্জো ফার্নান্দেজ। তার শট শট বারপোস্টে লেগে ফিরে আসলে টাই-ব্রেকারেই গড়ায় ম্যাচটি।

Comments

The Daily Star  | English

High Temperature Days: Barring miracle, record of 76yrs breaks today

At least 23 days of this month were heatwave days, which equals the record set in 2019 for the entire year.

11h ago