আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০২৩

চার, ছক্কা, সেঞ্চুরি ও রানবন্যার বিশ্বকাপ

এত বেশি রান, ছক্কা, চার, সেঞ্চুরি— বিশ্বমঞ্চে আগের কোনো আসরেই দেখা যায়নি।

চার, ছক্কা, সেঞ্চুরি ও রানবন্যার বিশ্বকাপ

এত বেশি রান, ছক্কা, চার, সেঞ্চুরি— বিশ্বমঞ্চে আগের কোনো আসরেই দেখা যায়নি।
চার, ছক্কা, সেঞ্চুরি ও রানবন্যার বিশ্বকাপ
ছবি: আইসিসি টুইটার

রূপ বদলে যাওয়া ওয়ানডে ক্রিকেটের সাথে বিশ্বকাপও যেন হয়েছে রানে রঙিন। ব্যাটাররা একের পর এক রেকর্ড ভেঙে চলেছেন টুর্নামেন্টজুড়েই। ভারত বিশ্বকাপকে তাই রেকর্ডের বিশ্বকাপ বললেও ভুল হবে না!

ফাইনাল এখনও বাকি। তবুও এক আসরে ব্যাটিংয়ের অনেক রেকর্ডই বলতে গেলে গড়ে ফেলেছে ২০২৩ সালের এই বিশ্বকাপ। এত বেশি রান, ছক্কা, চার, সেঞ্চুরি— বিশ্বমঞ্চে আগের কোনো আসরেই দেখা যায়নি।

সেঞ্চুরিতে সবার উপরে কোন দল

বিশ্বকাপের শুরুতে যে হারে সেঞ্চুরি পাওয়া শুরু করেছিলেন ব্যাটাররা, তাতে মনে হচ্ছিল, সহজেই ভেঙে যাবে এক আসরে সবচেয়ে বেশি সেঞ্চুরির রেকর্ড। কিন্তু শুরুর মতো সেই হারে এগোতে পারেনি শতকের ধারা। বোলারদের দরদী কেউ থাকলে বলে উঠতে পারেন, আর কত চাই ভাই! ৩৯টি সেঞ্চুরি কি কম মনে হচ্ছে? এর আগের সর্বোচ্চ ৩৮ সেঞ্চুরির রেকর্ড শেষমেশ এই বিশ্বকাপ ভেঙেই দিয়েছে দ্বিতীয় সেমিফাইনালে এসে। ডেভিড মিলারের শতরানে চলতি বিশ্বকাপে এ পর্যন্ত হয়ে গেছে ৪৭ ম্যাচে ৩৯ সেঞ্চুরি।

এর আগে ২০১৫ বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ ৩৮ বার সেঞ্চুরির স্বাদ পেয়েছিলেন ব্যাটাররা। আর একটি মাত্র আসরেই ত্রিশটির বেশি সেঞ্চুরি হাঁকানোর দৃশ্য দেখা গিয়েছিল। সেটি ২০১৯ বিশ্বকাপে। ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত সে আসরে ৪৫ ম্যাচে যদিও ৩১টির বেশি সেঞ্চুরি হয়নি। উপমহাদেশে শেষ যেবার বিশ্বকাপ হয়েছিল, ২৪টি সেঞ্চুরি নিয়ে এই তালিকায় চতুর্থ স্থানে আছে ২০১১ সালের ওই আসর।

এবার আরেকটি আসর যখন বসল উপমহাদেশে, এক নেদারল্যান্ডস বাদে বাকি সব দলের কাছ থেকে পাওয়া গেছে সেঞ্চুরি। সবচেয়ে বেশি দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটাররা হাঁকিয়েছেন নয়টি সেঞ্চুরি। যৌথভাবে দ্বিতীয় স্থানে থাকা দুই ফাইনালিস্ট ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার আছে সাতটি করে সেঞ্চুরির সংখ্যা আরও বাড়িয়ে নেওয়ার সুযোগ। নিউজিল্যান্ডের ব্যাটাররা মিলে ছয়বার সেঞ্চুরির উদযাপনে মেতেছেন। পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা হাঁকিয়েছে তিনটি করে সেঞ্চুরি। গতবারের চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড পায়নি দুটির বেশি সেঞ্চুরি। আর বাংলাদেশ ও আফগানিস্তান পেয়েছে একটি করে সেঞ্চুরি। 

উড়িয়ে মারতে এগিয়ে কারা

ছক্কা মারায় সেই কবেই অন্য সব আসরকে ছাড়িয়ে গেছে এবারের বিশ্বকাপ! প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ ৫০০ ছক্কার মার দেখেছে এবারের আসরেই। ৪০তম ম্যাচেই ছক্কা সংখ্যা ছাড়িয়ে যায় ৫০০। ছক্কা সংখ্যায় নজর রাখা কেউ হয়তো বলতে পারেন যে, পাঁচশতেই পড়ে আছেন, ছয়শও যে ছাড়িয়ে গেল!

হ্যাঁ, ঠিক। ২০২৩ বিশ্বকাপ ইতোমধ্যে ছক্কা দেখে ফেলেছে ৬৩৬টি। এর আগে সর্বোচ্চ ৪৬৩টি ছক্কা হয়েছিল ২০১৫ সালের বিশ্বকাপে। আর কোনো আসরে যেখানে চারশটি ছক্কাই হয়নি, এবার চারশ ছক্কা কোনো ব্যাপারই মনে হয়নি!

এক আসরে কোনো দলের সবচেয়ে বেশি ছয়ের রেকর্ডও হয়েছে এবারই। দক্ষিণ আফ্রিকা টুর্নামেন্ট শেষ করেছে সর্বোচ্চ ছয়ের মালিক থেকেই। একটির জন্য ছক্কার সেঞ্চুরি করতে পারেননি প্রোটিয়া ব্যাটাররা, মেরেছেন ৯৯টি। তাদের ওই রেকর্ডে ৯২ ও ৮৯ ছক্কা মেরে যথাক্রমে অস্ট্রেলিয়া ও ভারতের আছে চোখ।

আর একমাত্র নিউজিল্যান্ড মেরেছে আশির অধিক ছক্কা। কিউইদের ৮২ ছক্কার পেছনে পাকিস্তান ও ইংল্যান্ড আছে যথাক্রমে ৬০ ও ৫১ ছক্কা নিয়ে। শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ ও আফগানিস্তান যথাক্রমে ৪৫, ৪৩ ও ৪২ ছক্কা নিয়ে কাছাকাছি অবস্থানেই আছে। সবচেয়ে কম ৩৩টি ছয় মেরেছেন নেদারল্যান্ডসের ব্যাটাররা। 

চারের লড়াই দুই দলের

রান উৎসব যেখানে হয়েছে, সেখানে ছক্কার সাথে চারের রেকর্ডও হবে স্বাভাবিক। এ পর্যন্ত হয়ে গেছে ২২০৪ চার। এর আগে সর্বোচ্চ ২১৭০টি চার হয়েছিল ২০১৫ বিশ্বকাপে। দুই হাজারের বেশি চার হয়নি আর কোনো আসরে। ২০১৯ বিশ্বকাপে ১৯৮২টি চার মেরেছিলেন সব দলের ব্যাটাররা মিলে। আর ২০১১ সালে চারের সংখ্যা ছিল ১৯০২।

ভারত বিশ্বকাপের ফাইনালে চ্যাম্পিয়ন নির্ধারণ তো হবেই, আরেকটি বিষয়েরও হয়তো সমাধান আসবে। ফাইনালিস্ট দুই দলই যে সমান সংখ্যক চারে দাঁড়িয়ে। ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার ২৬৫টি করে চারের সঙ্গে একই বিন্দুতে আছে নিউজিল্যান্ডও। সেঞ্চুরি ও ছক্কায় সবার উপরে থাকা দক্ষিণ আফ্রিকা এ তালিকায় আছে চতুর্থ স্থানে ২৪৩ চার নিয়ে। এখানে তালিকার মাঝামাঝি অবস্থানে নিজেদের খুঁজে পাচ্ছে পাকিস্তান, ইংল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কা। তাদের চারের সংখ্যা যথাক্রমে ২২০, ২১৬ ও ২০১। আফগানিস্তান ও নেদারল্যান্ডসের সঙ্গে দুইশের নিচে চার মারা শেষ তিন দলের মধ্যে আছে বাংলাদেশ। তবে বাংলাদেশের ১৮৮ চারের চেয়ে কম মেরেছে বাকি দুই দল। আফগানরা ১৭৮ চার মারলেও ডাচরা আটকে গেছে ১৬৩টি চারেই। 

রানবন্যায় ভাসাল কারা

রানের রেকর্ড তো করেই ফেলেছে চলমান বিশ্বকাপ, আহমেদাবাদে ফাইনালের প্রথম ইনিংসেই দেখা মিলবে আরেকটি 'প্রথম'। কোনো আসরে প্রথমবারের মতো হবে সব মিলিয়ে ২৩ হাজার রান। চলতি বিশ্বকাপে ইতোমধ্যেই রান হয়ে গেছে ২২ হাজার ৯৭৬। ২২ হাজারের উপরে রান হয়েছিল ২০১৫ বিশ্বকাপেও। এবারের মতো রানবন্যা হওয়া সে বিশ্বকাপে রান উঠেছিল মোট ২২ হাজার ২৯৩। মোট বিশ হাজারের উপরে রান দেখা গিয়েছিল আরেকটি আসরে মাত্র। বিশ্বকাপের আগের আসরে রান হয়েছিল ২১ হাজার ২৪১। 

ভারত বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি রান করেছে ভারতই। শুধু একটা অবস্থানে অদল-বদল করলে প্রতিটি দলের সম্মিলিত রান আর লিগ পর্বের পয়েন্ট তালিকার চিত্র একই। সবচেয়ে বেশি রান করা পাঁচটি দল একই ক্রমে আছে পয়েন্ট তালিকার প্রথম পাঁচে। শেষ তিনটি স্থানও হুবহু। কেবল একটি পরিবর্তন— রানের তালিকায় ছয়ে আছে ইংল্যান্ড, পয়েন্ট তালিকায় ছিল সপ্তম স্থানে; আফগানিস্তান রানের তালিকায় আছে সপ্তম স্থানে, পয়েন্ট তালিকায় ছিল ষষ্ঠ স্থানে।

ফাইনালের দুই দলের মোট রানের ব্যবধান মাত্র ৮৮। শীর্ষে থাকা ভারতের ২৮১০ রানের পেছনে ২৭৭৩ রান নিয়ে যদিও আছে দক্ষিণ আফ্রিকা। ২৭২২ রান নিয়ে তিনে থাকা অজিরা অবশ্য প্রোটিয়াদের সে রান টপকে যাবে, এমন আশা প্রায় সবারই। আর সেটাই কি আরও মানানসই হবে না? টুর্নামেন্টের সেরা দুই দল রানের তালিকাতেও থাকবে সেরা দুইয়ে। অন্যভাবে বলা যায়, যে দুই দল এবার সবচেয়ে বেশি রান করবে, তাদের মধ্য থেকেই নির্বাচিত হবে বিশ্বকাপের শিরোপাজয়ী।

চারে থাকা নিউজিল্যান্ড করেছে মোট ২৭১২ রান। বাকিরা বেশ পিছিয়ে। বাংলাদেশি ব্যাটাররা মিলে নয় ম্যাচে রান করেছেন মোট ১৯৪৪।

Comments