সেরা একাদশ খুঁজে পেতেই হিমশিম
বিশ্বকাপের আগে সবগুলো দলকেই দুটি ওয়ার্মআপ ম্যাচ খেলার সুযোগ দিয়েছে আইসিসি। উদ্দেশ্য হলো বিশ্বকাপের মূল মঞ্চে নামার আগে যেন সেরা একাদশের খেলোয়াড়রা নিজেদের ঝালিয়ে নিতে পারেন। কিন্তু বাংলাদেশের পরিস্থিতি সম্পূর্ণ আলাদা। ওয়ার্মআপ ম্যাচ বরং সাকিব আল হাসানদের জন্য সেরা একাদশ খুঁজে নেওয়ার মিশন। অথচ একদম শেষ মুহূর্তেও সেই জায়গায় টিম ম্যানেজমেন্টের মধ্যে কাজ করছে সংশয়, খুঁজতে হচ্ছে অনেক প্রশ্নের উত্তর।
সোমবার প্রথম প্রস্তুতি ম্যাচে বোলিং ঠিকঠাক হলেও ব্যাটিংয়ে কঙ্কাল ফের বেরিয়ে গেছে। আফগানিস্তানকে ১৬০ রানে থামিয়ে নিজেরা ব্যাট করতে নেমে তিন অঙ্কেও যেতে পারেনি বাংলাদেশ। একের পর এক উইকেট হারানো, মন্থর গতি মিলিয়ে কুড়ি ওভারের ক্রিকেটের অচেনা ছবি দেখিয়ে সাকিবরা টেনেটুনে করতে পারেন স্রেফ ৯৮ রান।
আজ (বুধবার) দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে আরেকটি প্রস্তুতি ম্যাচ। এই ম্যাচই সেরা সমন্বয় খুঁজে বের করার শেষ সুযোগ। কোন দুজন ওপেন করবেন, ব্যাটিং অর্ডার কি হবে। মোস্তাফিজুর রহমানকে একাদশে রাখা হবে কিনা। এমন অনেকগুলো প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হবে টেকনিক্যাল ডিরেক্টর শ্রীধরণ শ্রীরামকে।
পেশিতে হালকা ব্যথা থাকায় লিটন দাস আগের দিন খেলেননি। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষেও তাকে বিশ্রামে রাখা হবে নাকি খেলানো হবে তা জানা যায়নি। টিম ম্যানেজমেন্ট চাইছে শতভাগ ফিট লিটনকেই বিশ্বকাপে নামাতে। সেক্ষেত্রে প্রস্তুতি ম্যাচে নামা তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ নয়। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার মাঠে এর আগে কখনো কোন ম্যাচ না খেলা লিটনের কন্ডিশনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতেও খেলা দরকার।
লিটন না খেলায় সেদিন নাজমুল হোসেন শান্তর সঙ্গে ওপেন করতে দেওয়া হয়েছিল মেহেদী হাসান মিরাজকে। মিরাজ যথারীতি চরম অস্বস্তিতে হাবুডুবু খেয়েছেন। ৩১ বলে খুইয়ে করতে পেরেছেন কেবল ১৬ রান। দু'একবার ফাটকা লেগে গেলেও নতুন বল সামলানো যে তার কাজ নয় সেটা এরমধ্যে ধরা পড়ে গেছে তার খেলার ধরণে। মিরাজকে একাদশে রেখে কোন কাজ হবে কিনা এই প্রশ্ন জোরালো হতে শুরু করেছে।
বিস্ময়করভাবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ঢুকে যাওয়া শান্ত নিউজিল্যান্ডে এক ইনিংসে কিছুটা ঝাঁজ দেখিয়েছিলেন। এরপর তিনি গর্তে ঢুকে গেছেন। দু'একটা বাউন্ডারি মারলেও ডট বলের চাপ মেটাতে পারছেন না। শান্তর জায়গাও তাই প্রশ্নবিদ্ধ।
স্ট্যান্ডবাই থেকে মূল দলে আসা সৌম্য সরকার নিউজিল্যান্ডে এক ইনিংসে শুরুটা পেয়েছিলেন। তার ব্যাটে দেখা যাচ্ছিল ইতিবাচক সুর। তবে এরপর দুই ইনিংসে আবার তড়িঘড়ি বিদায় নিয়ে অধারাবাহিকতার পুরনো ছবি দেখিয়েছেন। তবে ইন্টেন্টের কারণে মূল পর্বে তাকে খেলানোর জোর সম্ভাবনা। সৌম্য খেললে তিনি ওপেন করবেন নাকি তিনে খেলবেন এই দ্বিধাও দূর হয়নি।
একই অবস্থা লিটনের ব্যাটিং পজিশন নিয়ে। এই মুহূর্তে দলের সেরা ব্যাটার তিনি। আছেন চেনা ছন্দেও। ওপেনিংয়েই লিটনের রেকর্ড বেশ যুতসই। গত দুই বছরে একমাত্র ওপেনার যিনি দলের চাহিদা পূরণ করতে পারছেন। কিন্তু তাকেই নিয়মিত ওপেনিংয়ে রাখছে না বাংলাদেশ দল। একবার তিনে, একবার চারে তো একবার খেলেছেন ওপেনে। বিশ্বকাপে লিটনের পজিশন কি হবে তাও চূড়ান্ত করতে হবে টিম ম্যানেজমেন্টকে।
মিডল অর্ডারে সাকিব, আফিফ হোসেন, ইয়াসির আলি, নুরুল হাসান সোহান পর পর নামবেন। তাদের পজিশন মোটামুটি ঠিকঠাকই। অফ স্পিনিং অলরাউন্ডার অপশনে মিরাজকে ছাপিয়ে নিজের দাবি জোরালো করেছেন মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত।
অস্ট্রেলিয়ার মাঠে তিন পেসার নিয়ে খেলবে বাংলাদেশ। এরমধ্যে তাসকিন আহমেদ ও হাসান মাহমুদের জায়গা পাকা ধরা যায়। তৃতীয় পেসার হিসেবে কে খেলবেন? এক সময় নির্দ্বিধায় দলের সেরা পেসার থাকা মোস্তাফিজের আগের অবস্থা আর নেই। সেরা একাদশেই অনিশ্চিত তিনি। প্রথম প্রস্তুতি ম্যাচেও ছিলেন গড়পড়তা। অস্ট্রেলিয়ায় বল গ্রিপ না করলে তার বোলিং হতে পারে নির্বিষ।
মোস্তাফিজকে একাদশের বাইরে রাখা হবে নাকি অভিজ্ঞতা বিবেচনায় বাজি ধরা হবে আরেকটি, এই প্রশ্নের সমাধান হয়নি। মোস্তাফিজের সঙ্গে সেরা একাদশে জায়গা পাওয়ার লড়াইয়ে আছেন শরিফুল ইসলাম ও ইবাদত হোসেন। এই দুজনও এমন কিছু করেননি যাতে তাদের কথা ভাবতে হয় আলাদাভাবে।
ব্রিসবেনের অ্যালান বোর্ডার মাঠে বাংলাদেশ সময় দুপুর ২টায় দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে এরকম অনেক প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে নামবে বাংলাদেশ দল।
Comments