ওয়েস্ট ইন্ডিজকে বিদায় করে দিল আয়ারল্যান্ড
বিশ্বকাপটা যখন টি-টোয়েন্টি সংস্করণে, তখন ওয়েস্ট ইন্ডিজকে রাখা হয় আলাদা কাতারে। আসরের সবচেয়ে সফল দল তারা। দুইবার বিশ্বকাপ জিতেছে দলটি। এমনকি পুরো বিশ্বের যে কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে দাপট থাকে ক্যারিবিয়ানদেরই। অথচ সেই দলটিই কি-না এবার খেলতে পারবে না টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মূল পর্বে। বাঁচা-মরার লড়াইয়ে আইরিশদের কাছে হেরে বিদায় নিয়েছে দলটি।
শুক্রবার হোবার্টের বেলেরিভ ওভালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে প্রথম রাউন্ডের 'বি' গ্রুপের ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৯ উইকেটে হারিয়ে সুপার টুয়েলভে জায়গা করে নিয়েছে আয়ারল্যান্ড। প্রথমে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৫ উইকেটে ১৪৬ রান সংগ্রহ করে ক্যারিবীয়রা। জবাবে ১৫ বল হাতে রেখেই জয়ের বন্দরে নোঙ্গর করে আইরিশরা।
রূপকথার গল্প না হলেও এ জয় কম প্রাপ্তির নয় টেস্ট পরিবারের নবীন দল আয়ারল্যান্ডের জন্য। ২০০৯ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দ্বিতীয় আসরে প্রথমবার অংশ নিয়েই সুপার এইটে খেলতে পারলেও এরপর আর তাদের দৌড় ছিল প্রথম রাউন্ড পর্যন্তই। ১৩ বছর পর ফের মূল পর্বে খেলবে তারা।
মাঠে নামার আগে এদিন দুই দলের জন্যই সমীকরণ ছিল এক। জিততেই হতো। আগের দুই ম্যাচে দুই দলেরই একটি করে জয় থাকায় সুপার টুয়েলভে যেতে জয়ের কোনো বিকল্প ছিল না তাদের। কিন্তু এমন ম্যাচে কি-না প্রতিরোধও গড়তে পারলো না দুইবারের চ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজ। আগে ব্যাট করে লড়াই করার মতো পর্যাপ্ত পুঁজিই সংগ্রহ করতে পারেনি তারা। এরপর সাদামাটা বোলিং।
অথচ এদিন টস জিতেছিল ক্যারিবিয়ানরাই। ব্যাটিংয়ে নেমে ভুগেছেন দুই ওপেনারই। ৫ বল খেলে ১ রান করে প্রথমে বিদায় নেন কাইল মেয়ার্স। তিন নম্বরে নামা এভিন লুইস ১৩ রান করেন ১৮ বল মোকাবেলা করে। আরেক ওপেনার জনসন চার্লস ২৪ রান করলেও খেলতে হয় ১৮টি বল। ফলে পাওয়ার প্লেতে আসে ৪১ রান।
মিডল অর্ডার ব্যাটাররাও রানের গতি বাড়াতে পারেননি। ব্রান্ডন কিং উইকেটে সেট হয়ে গিয়েছিলেন। পেয়েছেন ফিফটিও। ৩৯ বলে হাফসেঞ্চুরি পেলেও এরপর আগ্রাসী হতে পারেননি। গ্যারেথ ডিলানির ঘূর্ণিতে পড়ে নিকোলাস পুরান, রভমান পাওয়েলরাও রানের গতি বাড়াতে হন ব্যর্থ। ফলে মাঝারী পুঁজি নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয় তাদের।
দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৬২ রানের ইনিংস খেলেন ব্রান্ডন। ৪৮ বলে ৬টি চার ও ১টি ছক্কায় এ রান করেন তিনি। শেষ দিকে ১২ বলে ১টি চার ও ২টি ছক্কায় ১৯ রান করেন ওডেয়ান স্মিথ। আইরিশদের পক্ষে ৪ ওভার বল করে মাত্র ১৬ রানের খরচায় ৩টি উইকেট পান ডিলানি।
এরপর বল হাতে পারেননি বোলাররাও কোনো পার্থক্য গড়ে দিতে। ধারহীন বোলিংয়ের কারণে শুরু থেকেই ক্যারিবিয়ানদের উপর চড়াও হন দুই আইরিশ ওপেনার পল স্টার্লিং ও অধিনায়ক অ্যান্ডি বালবির্নি। মাত্র ২৬ বলেই মিলে দলীয় হাফসেঞ্চুরি। পাওয়ার প্লেতে আসে বিনা উইকেটে ৬৪ রান। তখন থেকেই জয় দেখতে শুরু করে দলটি।
দলীয় ৭৩ রানে অবশ্য ওপেনিং জুটি ভাঙতে পারে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। বালবির্নিকে ফিরলেও ক্যারিবীয়দের হতাশা লরকান টাকারকে নিয়ে বাড়াতে থাকেন আরেক ওপেনার স্টার্লিং। অবিচ্ছিন্ন ৭৭ রানের জুটি গড়ে দলকে জিতিয়েই মাঠ ছাড়েন এ দুই ব্যাটার।
টাকার অবশ্য ব্যক্তিগত ১৭ রানে সুযোগ দিয়েছিলেন। বোলারের ওডেয়ান স্মিথের হাতে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরের দিকেই রওনা দিয়েছিলেন। কিন্তু নো-বল হওয়ায় ফিরে আসেন উইকেটে। তাতে বড় ব্যবধানে হার যেন নিশ্চিত হয়ে যায় দুইবারের চ্যাম্পিয়নদের।
আগের দুই ম্যাচে দুই অঙ্ক স্পর্শ করতে না পারলেও গুরুত্বপূর্ণ এ ম্যাচে ঠিকই জ্বলে ওঠেন অভিজ্ঞ ওপেনার স্টার্লিং। খেলেন হার না মানা ৬৬ রানের ইনিংস। ৪৮ বলে ৬টি চার ও ২টি ছক্কায় এ রান করেন। শুরুতে দেখে শুনে খেললেও জীবন পেয়ে আক্রমণাত্মক হওয়া টাকার করে অপরাজিত ৪৫ রান। ৩৫ বলে সমান ২টি করে চার ও ছক্কায় এ রান করেন তিনি। ৩৭ রানের ইনিংস খেলেন অধিনায়ক বালবির্নি। ২৩ বলে সমান ৩টি করে চার ও ছক্কায় নিজের ইনিংস সাজান এ ওপেনার।
Comments