নেদারল্যান্ডসকে হারিয়ে ১৫ বছরের অপেক্ষার অবসান ঘটাল বাংলাদেশ

Bangladesh cricket team

মাঠে পারফরম্যান্সের ঘাটতি। তার ওপর সর্বমহলের কঠোর সমালোচনা। সব মিলিয়ে দেয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছিল বাংলাদেশের। সবাই বলছিল একটি জয়ই আমূল বদলে দিতে পারে দলটিকে। অবশেষে এল  প্রত্যাশিত জয়, ১৫ বছর পর বিশ্বকাপের মূল পর্বে জয় পেল লাল সবুজের প্রতিনিধিরা। 

সোমবার হোবার্টের বেলরিভ ওভালে বাংলাদেশ ম্যাচ জিতে নেয় ৯ রানে। বাংলাদেশের ১৪৪ রানের জবাবে ১৩৫ পর্যন্ত যেতে পারে ডাচরা। ২০০৭ বিশ্বকাপের ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। মূল পর্বে এতদিন ওই একটাই জয় ছিল। আরেকটি জয় পেতে পেরুতে হলো ১৫ বছর। 

বাংলাদেশের ম্যাচ জয়ের নায়ক তাসকিন আহমেদ। ৪ ওভার বল করে ২৫ রানে ৪ উইকেট পেয়েছেন তাসকিন। ক্যারিয়ার সেরা বল করে হয়েছেন ম্যাচ সেরা। দুই উইকেট শিকার করেছেন হাসান মাহমুদ, একটি করে উইকেট নিয়েছেন সাকিব আল হাসান ও সৌম্য সরকার। 

এর আগে ব্যাট হাতে লড়াইয়ের ভিত গড়ে দেন আফিফ হোসেন, নাজমুল হোসেন শান্ত আর মোসাদ্দেক হোসেন। শুরুতে শান্তর ২০ বলে ২৫। মাঝে আফিফের ২৭ বলে ৩৮ রানের পর মোসাদ্দেক ১২ বলে ২০ রানের ভীষণ কার্যকর এক ইনিংস খেলে রাখেন অবদান। 

ব্যাট হাতে নেদারল্যান্ডসকে খুব বড় লক্ষ্য দিতে না পারলেও বল হাতে শুরুতেই তাদের চেপে ধরে বাংলাদেশ। তাসকিনের জোড়া আঘাতে প্রথম ওভারেই ফিরে যান বিক্রমজিত সিং ও বাস ডে লিড। এরপর বিপদ পিছু ছাড়েনি ডাচদের, টাইগারদের দুর্দান্ত ফিল্ডিংয়ে মাত্র ১৫ রানে চার উইকেট হারিয়ে ফেলে তারা।

প্রথম দুই বলেই দারুণ গুড লেন্থ ডেলিভারিতে বিক্রমজিত ও লিডকে উইকেটের পিছনে ক্যাচ দিতে বাধ্য করেন তাসকিন। স্লিপে দারুণ ক্যাচ লুফে নেন ইয়াসির আলী রাব্বী, লিড ধরা পড়েন নুরুল হাসান সোহানের গ্লাভসে। দুজনই ফেরেন গোল্ডেন ডাক মেরে।

এরপর সাকিবের করা চতুর্থ ওভারে দারুণ ফিল্ডিংয়ে আরও দু'টি রান আউট আদায় করে নেয় বাংলাদেশ। ওভারের দ্বিতীয় বলে রান নিতে গিয়ে কলিন অ্যাকারম্যানের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে রান আউট হয়ে ফেরেন ম্যাক্স ও'ডাউড। দ্বিতীয় রান আউটের কৃতিত্বটা শান্তর।

দৌড়ে গিয়ে ডাইভ দিয়ে বাউন্ডারি লাইন থেকে ফেরান বল, পরক্ষণেই করেন দুর্দান্ত এক থ্রো। সোহানও দ্রুতগতিতে স্ট্যাম্প ভেঙে দেন। টিভি রিপ্লেতে দেখা যায় রান আউট হয়ে গেছে টপ কুপার। তবে এরপরই প্রতিরোধ গড়ে তোলেন অ্যাকারম্যান ও অধিনায়ক স্কট এডওয়ার্ডস।

এই দুজনের ৪৭ বলে ৪৪ রানের জুটি উইকেট পতন আটকালেও রান তোলার গতির বিবেচনায় সুবিধাজনক অবস্থানে ছিল না ডাচরা। অবশেষে খোলস ভেঙে বেরিয়ে আসার জন্য সাকিবের ১২তম ওভারকে বেছে নেন এডওয়ার্ডস। তবে সেটাই কাল হয়ে দাঁড়ায় তার জন্য, রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে হাসানের হাতে ধরা পড়েন নেদারল্যান্ডস অধিনায়ক। 

২৪ বলে ১৬ রান করে ফেরেন এডওয়ার্ডস। এদিকে উইকেট পতনের মিছিলে ঠিকই অবিচল ছিলেন অ্যাকারম্যান। সেই ওভারের শেষ বলে সাকিবকে ছক্কা হাঁকিয়ে জানান দেন, এখনও হাল ছাড়েননি তিনি।

হাসানের করা ১৩তম ওভারে আবারও সাফল্য পায় বাংলাদেশ। দ্বিতীয় বলেই অবশ্য উইকেট পেতে পারতেন উদীয়মান ডানহাতি পেসার, কিন্তু পয়েন্টে টিম প্রিঙ্গেলের ক্যাচ ফেলে দেন শান্ত। তবে ওভারের চতুর্থ বলেই সেই আক্ষেপ ঘুচান হাসান। সরাসরি বোল্ড করে দেন প্রিঙ্গেলকে।

সেই ওভার শেষে ম্যাচে দ্বিতীয়বারের মতো হানা দেয় বৃষ্টি। কয়েক মিনিট বন্ধ থাকে খেলা। ডার্কওয়ার্থ লুইস অনুযায়ী সেসময় ৩২ রানে পিছিয়ে ছিল নেদারল্যান্ডস। অর্থাৎ আর খেলা না হলেও জয় নিয়েই মাঠ ছাড়ত বাংলাদেশ।

আবারও খেলা শুরু হলে ভাগ্যকে পরখ করে দেখার আরেকটা সুযোগ পায় ডাচরা। বৃষ্টির পর খেলা শুরু হলে বল করতে আসেন মোসাদ্দেক। সেই ওভারে আগ্রাসী ভূমিকা নেন অ্যাকারম্যান, প্রথম বলই ছয় রানের জন্য পাঠান সীমানার বাইরে। চতুর্থ বল লং অনে ঠেলে দিয়ে দুই রান নিয়ে ডাচ অলরাউন্ডার পেয়ে যান ক্যারিয়ারের প্রথম টি-টোয়েন্টি ফিফটি।

তবে ইনিংসের ১৫তম ও নিজের শেষ ওভারে আবারও আঘাত হানেন হাসান। পুল করতে গিয়ে টপ এজের ফাঁদে পড়েন লোগান ভ্যান বিক। ডিপ ফাইন লেগে দৌড়ে এসে ডাইভ দিয়ে ক্যাচ লুফে নেন তাসকিন।

শেষ ৫ ওভারে জয়ের জন্য নেদারল্যান্ডসের দরকার পড়ে ৩০ বলে ৫৯ রান। কিন্তু তাসকিন ঝড় তখনও বাকি। ১৭তম ওভারে বল হাতে ফিরে আবারও জোড়া শিকার করেন ঢাকা এক্সপ্রেস। তুলে নেন শারিজ আহমেদ ও ৬২ রান করা অ্যাকারম্যানকে। এতেই মূলত শেষ হয়ে যায় ডাচদের জয়ের স্বপ্ন।

শেষ ওভারে জয়ের জন্য নেদারল্যান্ডসের দরকার ছিল ২৪ রান। সৌম্যর করা সেই ওভারের চতুর্থ বলে ছক্কা হাঁকিয়ে বাংলাদেশি ভক্তদের হৃদস্পন্দন বাড়িয়ে দেন ভন মেকারেন। প্রথম চার বলে ১২ রান এলে দুই বলে দরকার পড়ে ১২ রান। তবে পঞ্চম বলে স্নায়ুচাপ সামলে নেন সৌম্য, সেই বলে কেবল দুই রান নিতে সক্ষম হন মেকারেন।

শেষ বলে উড়িয়ে মেরে ডিপ মিডউইকেটে লিটন দাসকে খুঁজে নেন এই পেসার, ইতি ঘটে নেদারল্যান্ডস ইনিংসের। টানা হারের মধ্যে থাকা বাংলাদেশ অবশেষে মাতে জয়ের উল্লাসে।

এর আগে টসে হেরে ব্যাট করতে নেমে দুই ওপেনারের শুরুটা ছিল জুতসই। পাওয়ার প্লেও কাজে লাগিয়েছিল বাংলাদেশ। প্রথম ওভারে দুই চারে শুরু করেন সৌম্য।  শান্ত শুরুতে কয়েক বল সময় নিলেও পরে দ্রুতই সামলে নিয়ে পেয়ে যান বাউন্ডারির দেখা। রানিং বিট্যুইন দ্য উইকেটেও সচল থাকেন তারা।

বাস ডি লিডকে ওভারে দুই চার মারার পর ফ্রেড ক্লাসেনকেও দুই চার মারেন শান্ত। ৫ ওভারেই চলে আসে ৪৩ রান। তবে পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে বাংলাদেশ খায় ধাক্কা। পল ভ্যান মিক্রেনের বলের গতি বুঝতে না পেরে পুল করতে যান সৌম্য। মিড উইকেটে সহজ ক্যাচে বিদায় নেন ১৪ বলে ১৪ করা এই বাঁহাতি।

পাওয়ার প্লেতে ১ উইকেটে আসে ৪৭। কিন্তু পাওয়ার প্লের ঠিক পরেই বিদায় নেন উইকেটে সেট হয়ে যাওয়া শান্ত। টিম প্রিঙ্গলের বাঁহাতি স্পিনে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে সহজ ক্যাচে ফেরেন তিনি। ২০ বলে ২৫ রান আসে শান্তর ব্যাট থেকে।

ভ্যান বিকের বলের বাউন্স না বুঝে তুলে মারতে গিয়ে বিপদ ডেকে আনেন লিটন। ১১ বলে ৯ রান করে ফেরেন তিনি। পরের ওভারে অধিনায়ক সাকিবকে হারায় বাংলাদেশ। লেগ স্পিনার শারিজ আহমেদেকে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে বাউন্ডারি লাইনে ধরা পড়েন বাংলাদেশ অধিনায়ক। দারুণ দক্ষতায় লাফিয়ে সে ক্যাচ হাতে জমান ডি লিড।

ইয়াসির আলি ভরসা হতে পারেননি এই ম্যাচেও। ভ্যান মিক্রেনের বলে বোল্ড হয়ে থামে তার ৫ বলে ৩ রানের ইনিংস। হুট করে নেমে আসা বিপদে ত্রাতা হন আফিফ। লেগ স্পিনার শারিজকে ছক্কায় উড়িয়ে শুরু। আফিফও অবশ্য উইকেট নেবার সুযোগ দিয়েছিলেন ডাচদের। মিক্রেনের বলে তার ক্যাচ ফেলে দেন প্রিঙ্গল। ২৮ রানে জীবন পান এই তরুণ তুর্কি।

তার সঙ্গে ৪৪ রানের জুটিতে থাকা নুরুল হাসান ডানা মেলতে পারেননি। ডি লিডের বল ফাইন লেগের উপর দিয়ে উড়াতে গিয়ে পারেননি। সহজ ক্যাচে থামে তার ১৮ বলে ১৩ রানের ইনিংস। ওই ওভারে আফিফকেও হারায় বাংলাদেশ। ডি লিডের লেগ স্টাম্পের উপর করা শর্ট বলে ব্যাট ছোঁয়াতে গিয়ে কিপারের দারুণ ক্যাচে থামেন আফিফ। 

২৭ বলে দুটি করে ছয়-চারে ইনিংস সর্বোচ্চ ৩৮ রান আসে এই বাঁহাতির ব্যাট থেকে। পরের ওভারে তাসকিনকে থামান ক্লাসেন। শেষ এক ছক্কায় আরও ১০ রান যোগ করেন মোসাদ্দেক। শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকেন ১২ বলে ২০ রান করে।

ডাচদের হয়ে সেরা বোলিং ফিগার পল ভ্যান মিক্রেনের। ৪ ওভারের কোটা পূরণ করে এই পেসার ২১ রান দিয়ে তুলেছেন ২ উইকেট। ২ উইকেট পেয়েছেন আরেক পেসার বাস ডি লিডও।

Comments

The Daily Star  | English

Hasnat calls for mass rally at Jamuna demanding ban on Awami League

The announcement came during an ongoing protest programme that began last night in front of Jamuna.

9m ago