‘সোহানের কিপিং টেকনিকে ভুল আছে’
উইকেটের পেছনে চনমনে উপস্থিতি আর ব্যাট হাতে দ্রুত রান আনতে পারার প্রত্যাশা থেকে নুরুল হাসান সোহানের উপর ভরসা করেছিল বাংলাদেশ দল। এবার বিশ্বকাপে দলের সহ-অধিনায়কও ছিলেন তিনি। তবে ব্যাট হাতে ব্যর্থতার পাশাপাশি এবার নিজের শক্তির জায়গায় কিপিংয়েও তালগোল পাকিয়েছেন এই তারকা। বিকেএসপির ক্রিকেট উপদেষ্টা ও কোচ নাজমুল আবেদিন ফাহিমের মতে সোহানের কিপিংয়ের টেকনিকে আছে কিছু গলদ, যা ঠিক না করলে দলকে পড়তে হতে পারে বিপদে।
দেশের এক নম্বর উইকেটকিপার হিসেবে একটা অলিখিত তকমা তাকে দেন সাবেক তারকাদের কেউ কেউ। দলও তাকে সেরা কিপার হিসেবেই মূল্যায়ন করে আসছে বেশ কিছুদিন যাবত। এই ভূমিকায় সংক্ষিপ্ত সংস্করণের ক্রিকেটে তিনি খেলছেন টানা। এবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকা ও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সাংঘাতিক দুটি ভুল করে বসেন ২৮ পেরুনো কিপার।
প্রোটিয়াদের বিপক্ষে বোলার বল ডেলিভারির মুহূর্তে নিজের পজিশন বদল করে ৫ রান পেনাল্টি গুনেছিলেন। ওই ম্যাচ বাংলাদেশ বিশাল ব্যবধানে হারায় সেই ভুল আর বেশি আলোচিত হয়নি। কিন্তু জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে পরের ম্যাচে তার আরেকটি মারাত্মক ভুলে হয়ে যাচ্ছিল বড় ক্ষতি। ম্যাচ জিততে জিম্বাবুয়ের যখন ১ বলে দরকার ৫ রান, তখন মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের বল ধরে ব্লেসিং মুজারাবানিকে স্টাম্পিং করেছিলেন তিনি। জয় উদযাপন করে মাঠ ছেড়ে বেরিয়েও যান ক্রিকেটাররা। খানিক পর দেখা যায় সোহান করেছেন দৃষ্টিকটু ভুল। স্টাম্পিং করার আগে বল ধরেছেন উইকেটের সামনে গ্লাভস এনে। নিয়ম অনুযায়ী নো বল আর ফ্রি হিটে আবার সুযোগ পায় জিম্বাবুয়ে। স্রেফ একজন বোলার স্ট্রাইকে থাকায় সেদিন পার পেয়ে যায় বাংলাদেশ।
গ্রুপের শেষ ম্যাচে তাসকিন আহমেদের বলে পাকিস্তানের বিপক্ষে শূন্য রানে মোহাম্মদ রিজওয়ানের ক্যাচ ছাড়েন সোহান। পরে রিজওয়ান করেন ৩২ রান।
দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে আলাপে নাজমুল জানান, সোহানের কিপিংয়ে একটি টেকনিক্যাল গলদ খোঁজে পেয়েছেন তিনি। যা ঠিক না করলে আগামীতে বড় সমস্যায় পড়তে পারে দল, 'সোহানের কিপিং নিয়ে কনসার্ন আছে। আমার মনে হয় ও প্রচুর অনুশীলন করে কিপিংটা। ওর আত্মবিশ্বাস দিয়ে কিপিং করে। কিন্তু ওর টেকনিকে ভুল আছে। সেটা আমি ওর সঙ্গে আলাপও করেছিলাম ও যখন বিপিএলে আমার দলে ছিল। আমার চোখে ওর কিপিংয়ে টেকনিক্যাল ভুল যেটা চোখে পড়েছে সেগুলো নিয়ে আলাপ করেছিলাম ওর সঙ্গে। আমি জানি না দলে ওর কিপিং নিয়ে কাজ করা হয় কিনা । ওর কিপিং যদি ঠিক না করা হয় আমার মনে হয় যেকোনো সময় এরকম দুর্ঘটনা হতে পারে শুধু টেকনিকের ঘাটতির জন্য। '
ছয় বা সাত নম্বরে ব্যাট করার ভূমিকা দেয়া হয়েছিল সোহানকে। ব্যাট হাতে আরেকটি বিশ্বকাপে ব্যর্থ তিনি। ৫ ম্যাচে ১০.২৫ গড় আর ৯৭.৬১ স্ট্রাইকরেটে করেছেন মোটে ৪১ রান। এর আগের বিশ্বকাপেও ছিল তার বেহাল দশা। গত বিশ্বকাপে ৫ ম্যাচ খেলে স্রেফ ৫.২৫ গড় আর ৮০.৭৬ স্ট্রাইকরেটে করেছিলেন ২১ রান।
তিনি বিশেষজ্ঞ কিপার হিসেবে খেলেছেন কিনা এই নিয়েও আছে প্রশ্ন। তবে লিটন দাসের মতো কিপার দলে থাকতে সোহানকে স্রেফ কিপিংয়ের খেলানো হচ্ছে বলে মনে করেন না নাজমুল, 'আমি জানি না সোহানকে স্পেশালিষ্ট কিপার হিসেবে খেলানো হয় কিনা, না তার ব্যাটিং গুরুত্ব দেওয়া হয় কিনা। আমি তো মনে করি ব্যাটিং গুরুত্ব দেয়া হয় বলেই ওকে খেলানো হয়। শুধু কিপিং হয় তবে তো লিটন কিপিং করতে পারে। লিটন তো খুব ভালো কিপার। লিটন মেইকশিফট কিপার না। খুব ভালো কিপার। লিটনের চেয়ে অনেক অর্ডিনারি কিপার আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলে গেছে, এমনকি রাহুল দ্রাবিড়ও বড় টুর্নামেন্টে কিপিং করেছে। আমার মনে হয় সোহানের ব্যাটিং গুরুত্ব দিয়ে খেলিয়েছে।'
Comments