ছাত্র রাজনীতির বিরুদ্ধে ফের সোচ্চার বুয়েট, কয়েকশ শিক্ষার্থীর শপথ
বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সাংগঠনিক ছাত্ররাজনীতির বিরুদ্ধে ফের সোচ্চার বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থীরা।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে ক্যাফেটেরিয়ার সামনে 'নৈতিকতার সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ বৈষম্যমূলক অপসংস্কৃতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারকে সমূলে উৎপাটিত' করার প্রতিশ্রুতি নিয়ে শপথবাক্য পাঠ করেন তারা।
পাশাপাশি 'আবরার হত্যার তদন্তে অসহযোগিতা ও অন্যান্য র্যাগিং ঘটনা'র ইস্যুতে বুয়েটের আজীবন বহিস্কৃত শিক্ষার্থী আশিকুল ইসলাম বিটুর ক্লাসের ফেরার বিষয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
বুয়েটের কয়েকশ শিক্ষার্থী সমস্বরে শপথে বলেন, 'আমি প্রতিজ্ঞা করছি যে এ মুহূর্ত থেকে বুয়েট পরিবারের একজন সদস্য হিসেবে আমি এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সবার কল্যাণ ও নিরাপত্তার জন্য আমার ওপর অর্পিত ব্যক্তিগত ও সামষ্টিক, নৈতিক ও মানবিক সব ধরনের দায়িত্ব সর্বোচ্চ সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করব। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের আঙিনায় যেকোনো অন্যায়-অবিচার ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে সর্বদা সোচ্চার থাকব। আমরা আরও প্রতিজ্ঞা করছি যে বুয়েট ক্যাম্পাসে সব ধরনের সন্ত্রাস ও সাম্প্রদায়িক অপশক্তির উত্থানকে আমরা সম্মিলিতভাবে রুখে দেব। নৈতিকতার সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ বৈষম্যমূলক অপসংস্কৃতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারকে আমরা সমূলে উৎপাটিত করব। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের আঙিনায় যেন আর কোনো নিষ্পাপ প্রাণ ঝরে না যায়, কোনো নিরপরাধ যেন অত্যাচারের শিকার না হয়, তা আমরা সবাই মিলে নিশ্চিত করব।'
এর আগে ২০১৯ সালে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের নির্যাতনে আবরার ফাহাদের মৃত্যুর পর বুয়েট ক্যাম্পাস ছাত্রলীগসহ সব ছাত্রসংগঠনের রাজনীতিমুক্ত রাখার জন্য শপথ গ্রহণ করেন শিক্ষার্থীরা।
গণমাধ্যমকে দেওয়া এক বিজ্ঞপ্তিতে শিক্ষার্থীরা জানান, 'লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতির চরমতম রূপ বারবার আঘাত হেনেছে আমাদের বুয়েট ক্যাম্পাসে। ২০০২ থেকে শুরু করে ২০১৯ সাল ছাত্ররাজনীতির অন্ধকার অধ্যায় তার ভয়ংকর দাগ রেখে গেছে আমাদের এ ক্যাম্পাসে। কালের পরিক্রমায় নিজেরা আন্দোলন করে দাবি আদায় নিশ্চিত করে সব বাধা ডিঙিয়ে শিক্ষার্থীরা একতাবদ্ধ হয়ে যখন সুস্থ সুন্দর একটি পড়াশোনার পরিবেশ নিশ্চিত করেছেন, তখনই আবারও বুয়েট শিক্ষার্থীদের নিরপেক্ষ মনোভাবকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে অপপ্রচার চালাচ্ছে বিভিন্ন স্বার্থান্বেষী মহল।'
গত ৩০ জুলাই সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওরে নাশকতার পরিকল্পনাকারী সন্দেহে বুয়েটের ২৪ জন শিক্ষার্থীসহ ৩৪ জন শিক্ষার্থীকে আটকের বিষয়টি উল্লেখ করে শিক্ষার্থীরা বলেন, 'এ বিষয়ে আমরা রাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থার ওপর আস্থা রেখে একটি সুষ্ঠু ও দ্রুত বিচার আশা করছি। যদি তারা প্রত্যেকেই দোষী প্রমাণিত হন, সাধারণ শিক্ষার্থীরা অবশ্যই তাদের বিপক্ষে থাকবেন। একইভাবে যদি তাদের মধ্যে কেউ নির্দোষ প্রমাণ হয়, তবে নির্দোষরা যেন কোনো হয়রানির শিকার না হন, সে ব্যাপারে আমরা সচেষ্ট থাকব এবং বুয়েট প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করব।'
কোনো শিক্ষার্থী বুয়েট ক্যাম্পাসে কোনো সাংগঠনিক ছাত্ররাজনীতির সঙ্গে জড়িত কি না এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে আবেদন জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। তারা বলেন, 'যদি কোনো শিক্ষার্থীর রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া যায় তবে ভার্সিটির অধ্যাদেশ অনুযায়ী তাদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে এবং এ বিষয়ে শিক্ষার্থীদের সর্বোচ্চ সহযোগিতা থাকবে। এবং যদি তারা নির্দোষ হন, তাহলে তারা যেন সুস্থ একাডেমিক কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারে তার দাবি জানানো হচ্ছে।'
শিক্ষার্থীরা বলেন, 'সব ধরনের লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি ও মৌলবাদের বিরুদ্ধে, আমরা বুয়েট শিক্ষার্থীদের যে দৃঢ় অবস্থান তা থেকে কোনো অবস্থায়ই সরে আসবো না। যে কোনো ছাত্ররাজনীতি এবং মৌলবাদ চর্চা বুয়েট ক্যাম্পাসে কখনোই গ্রহণযোগ্য হবে না, তা সে যে দলেরই হোক না কেন।'
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, 'আবরার ভাই হত্যার তদন্তে অসহযোগিতা এবং অন্যান্য র্যাগিং ঘটনার ইস্যুতে বুয়েটের আজীবন বহিস্কৃত ছাত্র আশিকুল ইসলাম বিটুর ক্লাসে ফেরার বিপরীতে আমরা আমাদের অবস্থান জানিয়েছি। এরকম কুখ্যাত একজন ব্যক্তির সঙ্গে ক্লাস এবং ক্যাম্পাস শেয়ার করতে আমরা কোনোভাবেই রাজি নই এবং কর্তৃপক্ষকে আজকে এ বিষয়ে অবগত করা হয়েছে। দ্রুত পদক্ষেপ না আসলে আমরা একাডেমিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ না করার মতো সিদ্ধান্তে পৌছাতে দ্বিধা করব না।'
এসব বিষয়ে জানতে বুয়েটের ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমানের মোবাইলে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
জানতে চাইলে বুয়েটের এক শিক্ষার্থী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, '২০১৯ এর পরে আবারও আজ আমরা শপথ নিয়েছি। সাম্প্রতিক কিছু ঘটনার কারণেই আমাদের এই কর্মসূচি পালন করতে হলো।'
Comments