পুলিশ বাহিনীতে আরও প্রদীপ-লিয়াকত আছে?

কক্সবাজার আদালত প্রাঙ্গণে লিয়াকত আলী ও প্রদীপ কুমার দাশ। ছবি: স্টার

বহুল আলোচিত সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যাকাণ্ডের মামলায় রায় দিয়েছেন আদালত। আদালত বলেছেন, হত্যাকাণ্ডটি পূর্বপরিকল্পিত ছিল।

রায়ের মাধ্যমে এটা প্রমাণিত যে পুলিশের হাতে বিনা বিচারে হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। কথিত বন্দুকযুদ্ধের যেসব ঘটনা দিনের পর দিন ঘটে আসছিল এবং সাধারণ নাগরিকেরা যে সন্দেহের চোখে এসব ঘটনা দেখত এতদিন, এখন বিশ্বাস করার জন্য একটা প্রমাণ পাওয়া গেল। প্রমাণ হলো টেকনাফের বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের বরখাস্ত হওয়া পরিদর্শক লিয়াকত আলী এবং টেকনাফ থানার বরখাস্ত হওয়া ওসি প্রদীপ কুমার দাশ খুনি।

সিনহা হত্যা মামলায় পুলিশ কর্মকর্তাদের সাজা পাওয়ার ঘটনায় আরেকটি প্রশ্ন সামনে আসে। এত বড় পুলিশ বাহিনীতে কি এরকম আরও প্রদীপ বা লিয়াকত আছে?

বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা হয়ত বহু দেশের চেয়ে অনেক ভালো। বাংলাদেশ পুলিশের সক্ষমতা বহু দেশের পুলিশের চেয়ে উঁচু মানের। উন্নত বাংলাদেশ গঠনে পুলিশের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা কেউ অস্বীকার করতে পারবে না।

কিন্তু তারপরেও কিছু কথা থেকে যায়। পুলিশের মতো একটি সুশৃঙ্খল বাহিনীর কোনো সদস্য হত্যাকাণ্ডের মতো অপরাধে জড়ালে বাহিনীর ভাবমূর্তিই সংকটে পড়ে। কোনো ব্যক্তির কাজের দায় বাহিনী নেবে না বলে এড়িয়ে যেতে পারে, কিন্তু এতে কি ভাবমূর্তি উদ্ধার হবে? এড়িয়ে গেলে সমস্যার মূলে যাওয়া হবে না বরং প্রদীপ বা লিয়াকতের মতো অনেক কর্মকর্তারা মাথা চাড়া দিয়ে উঠবে। তাই পুলিশের উচিত হবে এই মুহূর্তে অনুসন্ধানে নেমে পড়া। কেন তারা হত্যাকাণ্ডে জড়াল? কী প্রেক্ষাপটে জড়াল? কীভাবে পুলিশের সদস্যদের এই পথে যাওয়া থেকে রক্ষা করা যায়? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজে বের করা এখন পুলিশের আশু কর্তব্য।

সিনহা হত্যার পরে টেকনাফে 'ক্রসফায়ার'-এর সংখ্যা নাটকীয় ভাবে কমে গেছে। সিনহা হত্যা মামলার রায় হলো কিন্তু প্রদীপ টেকনাফ থানার ওসি থাকা অবস্থায় অন্য যেসব 'ক্রসফায়ার' হয়েছে সেগুলোর কী হবে? সেগুলোর কি তদন্ত হবে না?

এই বিচারের মাধ্যমে সরকার প্রমাণ করেছে কেউ আইনের ঊর্ধ্বে না। এই ধারনাটি আরও শক্ত ভিত পাবে ও জনমনে সরকারের প্রতি শ্রদ্ধা বেড়ে যাবে যদি প্রতিটি 'ক্রসফায়ার' তদন্ত করে দোষীদের বিচার করা যায়।

সিনহা হত্যা মামলার রায় নতুন দিনের সূচনা করেছে। বাংলাদেশ আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় ধীরে ধীরে এগিয়ে যাবে এবং একদিন বিশ্বের বুকে মানবাধিকার রক্ষা ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় চ্যাম্পিয়ন হবে সেই প্রত্যাশা রাখি।

মোহাম্মদ আল-মাসুম মোল্লা: সাংবাদিক

Comments

The Daily Star  | English

46th BCS written exam postponed amid protests

Md Zahirul Islam Bhuiyan, a PSC member, announced in front of the protesters that the scheduled date for the 46th Bangladesh Civil Service written exam (May 8) would be postponed

1h ago