বিচারক হিসেবে অযোগ্য হলে দাপ্তরিক কাজ করতে পারেন: জেড আই খান পান্না
ধর্ষণের ৭২ ঘণ্টা পর কোনো মামলা নথিভুক্ত না করতে পুলিশকে নির্দেশনা দেওয়ায় ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭-এর বিচারক মোসাম্মৎ কামরুন্নাহারের বিচারিক ক্ষমতা 'সাময়িকভাবে প্রত্যাহার' করেছে সুপ্রিম কোর্ট।
বিচারক মোসাম্মৎ কামরুন্নাহারের রেইন ট্রি হোটেলে ধর্ষণ মামলার রায়ের পর্যবেক্ষণ নিয়ে তীব্র প্রতিবাদ হয়। এমন প্রেক্ষাপটে ওই বিচারকের 'বিচারিক ক্ষমতা' কেড়ে নেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে প্রধান বিচারপতিকে চিঠি দেওয়া হবে বলে আইনমন্ত্রী বক্তব্যের একদিন পরই সুপ্রিম কোর্ট এই সিদ্ধান্ত নেন।
বিচারকের ক্ষমতা কেড়ে নেওয়া বা সাময়িকভাবে প্রত্যাহারে বাদীর কতটা লাভ, নিম্ন আদালতের বিচারকদের প্রশিক্ষণ ও সাধারণ মানুষের ন্যায় বিচার পেতে উচ্চ আদালতে যাওয়ার সুযোগ কতটা? এসব বিষয়ে দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে কথা বলেছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সাবেক সভাপতি ও ব্লাস্টের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য জেড আই খান পান্না।
বিচারিক ক্ষমতা কেড়ে নেওয়ার অর্থ হলো, তিনি যে কাজের জন্য নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছিলেন, সেটার যোগ্য নন। এখন ওই বিচারককে বিচারিক কাজের বাইরে অন্য কোনো প্রশাসনিক কাজে নিয়োগ দিলেও সেটা কি যৌক্তিক হবে? এই প্রশ্নের জবাবে জেড আই খান পান্না বলেন, 'এখানে তার বিচারিক ক্ষমতা "সাময়িকভাবে প্রত্যাহার" করা হয়েছে। নিশ্চয় তার কার্যকলাপ সম্পর্কে তদন্ত হবে। সুপ্রিম কোর্ট বা হাইকোর্ট বিভাগের কোনো বেঞ্চ তার রেকর্ড দেখতে পারেন। সেটা সম্পূর্ণ আদালতের বিষয়। রেকর্ড দেখে তারা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারেন। তার বিরুদ্ধে সাময়িক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তবে, এ ধরনের ঘটনা শুধু এটাই না, আরও আছে। বিচারক হিসেবে তিনি যদি যোগ্য না হন, তাহলে অন্যান্য দাপ্তরিক কাজগুলো করতে পারেন। যেমন ড্রাফট করা, ড্রাফট দেখে দেওয়া।'
নিম্ন আদালতের বিচারকদের প্রশিক্ষণের বিষয়ে তিনি বলেন, 'নিম্ন আদালতের বিচারকদের প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে যদি দুর্বলতা থাকে সেটা ঠিক করতে হবে। কোনো কিছুই অসম্ভব না। বাংলাদেশে কয়েক হাজার জুডিশিয়াল অফিসার আছেন। সবার বেলা তো এটা ঘটে না। সব জায়গায় সরিষার ভেতর দুএকটা ভূত থাকে। এটাও সে রকম একটা ঘটনা।'
রেইনট্রি হোটেলে ধর্ষণ মামলাটির বিষয়ে শুরু থেকে গণমাধ্যম ও জনগণের দৃষ্টি ছিল, এ ধরণের অন্যান্য মামলা যেগুলোর প্রতি এমন নজর থাকে না, সেসব ক্ষেত্রে আসলে কী ঘটছে? এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'এ ধরনের মামলার ক্ষেত্রে আমরা দণ্ডিত হতে এবং খালাস পেতে দুটোই দেখছি। এখানে বিচারক যে সুপারিশ করেছেন, ৭২ ঘণ্টা পর ধর্ষণের ঘটনায় কোনো মামলা যাতে পুলিশ না নেয়। এটা তিনি বলতে পারেন না। এটা সম্পূর্ণ আইন ও উনার এখতিয়ার বহির্ভূত। কারণ ফৌজদারি অপরাধের ক্ষেত্রে কোনো কিছু তামাদি হয় না।'
এই ধরনের রায়ের পর সারা দেশ থেকে কত জন উচ্চ আদালতে যাওয়ার সুযোগ পান? এ বিষয়ে জেড আই খান পান্না বলেন, 'কেউ যদি উচ্চ আদালতে আসতে চান, সে ক্ষেত্রে ব্লাস্ট আছে। আইন ও সালিশ কেন্দ্র আছে। যারা বিনা পয়সায় এ ধরনের মামলাগুলো পরিচালনা করে। যেমন, মিরপুরের জনি হত্যা মামলা। দীর্ঘ সময় ধরে ব্লাস্টের আইনজীবীরা লড়াই করে এই অবস্থায় নিয়ে এসেছে। আবার বিভিন্ন জায়গায় আইন ও সালিশ কেন্দ্রের আইনজীবীরা লড়াই করে একটা জায়গায় নিয়ে এসেছে। এদের কাছে আসলে তখন বিনা পয়সায় মামলা লড়ে। সে ক্ষেত্রে অসুবিধা হওয়ার কথা না। আইনজীবীদের কাছে এটা সুপরিচিত। এ ছাড়া, ২টা অর্গানাইজেশন আইনজীবীদের কাছে সুপরিচিত। দ্বিতীয়ত হলো, স্থানীয় আইনজীবীও কেউ না কেউ থাকেন। তারাও এটা রেফার করেন। এ ছাড়া, অনেকের আস্থার অভাব আছে। অনেকে আসতে চায় না। সে ক্ষেত্রে তো আমাদেরও তো সীমাবদ্ধতা আছে।'
বিচারক তদন্তকারী কর্মকর্তাকে ভর্ৎসনা করলে বা অযোগ্যতার কারণে বিচারককে সরিয়ে দিলে মামলার বাদীর লাভ কতটা? জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'বাদীর লাভ হলো, বাদী যদি আপিলে আসেন, এই মামলায় না হোক, অন্তত একটা সুবিধা পাবেন। বিচারক বিচার সেটা ন্যায়ভাবে করেছেন কিনা, সেটার একটা সন্দেহের অবকাশ থাকে। সেই সন্দেহের অবকশটা তাদের পক্ষে যাবে।'
Comments