অর্জনের মাইলফলক

স্বাধীনতাযুদ্ধে বিজয়ী হওয়ার ৫০ বছর পূর্তি অনন্য এক মাইলফলক। এটি সত্যিই আমাদের ইতিহাসের সবচেয়ে উজ্জ্বল মুহূর্তগুলোর একটি। এই দিনে আমরা সেই সব সাহসী নর-নারীর প্রতি আমাদের চির কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি, যারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে কঠোর আত্মত্যাগের মাধ্যমে আমাদের এ বিজয় ছিনিয়ে এনেছেন।
ছবি: আর্কাইভ

স্বাধীনতাযুদ্ধে বিজয়ী হওয়ার ৫০ বছর পূর্তি অনন্য এক মাইলফলক। এটি সত্যিই আমাদের ইতিহাসের সবচেয়ে উজ্জ্বল মুহূর্তগুলোর একটি। এই দিনে আমরা সেই সব সাহসী নর-নারীর প্রতি আমাদের চির কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি, যারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে কঠোর আত্মত্যাগের মাধ্যমে আমাদের এ বিজয় ছিনিয়ে এনেছেন।

তবে, আমাদের সবচেয়ে আনন্দের এই উদযাপন ১৯৭১ সালে এ দেশের গণমানুষের ওপর সংঘটিত নৃশংস গণহত্যার রঙে রঞ্জিত। যারা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের সহযোগীদের হাতে অকল্পনীয় নির্যাতন সহ্য করেছিলেন আমরা তাদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই। একইসঙ্গে যুদ্ধাপরাধের বিচারের দাবি অব্যাহত রাখি।

আমরা যেহেতু নিপীড়ন ও শোষণের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হয়ে একটি স্বাধীন জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়াকে উদযাপন করছি। তাই আমাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের সম্ভাবনার দিকেও তাকাতে হবে। যে রাস্তা ধরে আমরা এখানে এসেছি, তা অত্যন্ত দীর্ঘ এবং কঠিন ছিল। বাংলাদেশের জন্মের সময় অনেকের ধারণা ছিল, যুদ্ধ বিধ্বস্ত একটি ছোট, জনবহুল ভূখণ্ড নিজেকে একটি কার্যকরী ও সার্বভৌম রাষ্ট্রে পরিণত করতে পারে কি না। আমরা গর্বের সঙ্গে বলতে পারি যে, সমালোচনাকারীদের সবভাবে ভুল প্রমাণ করেছি—বাংলাদেশের যাত্রা একটি সাফল্যের গল্প এবং স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী বাংলাদেশকে বিশ্ব মানচিত্রে একটি দুর্দান্ত সম্ভাবনার দেশ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

স্বাধীনতার পর সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে একটি কোভিড-১৯ মহামারির মুখোমুখি হয়েও বাংলাদেশ এলডিসির (স্বল্পোন্নত দেশ) মর্যাদা থেকে উত্তোরণের পথে। এই অর্থে এবারের বিজয় দিবসটি আরও বেশি বিশেষ। এই অভূতপূর্ব সংকট কাটিয়ে উঠে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রাখা একটি জাতি হিসাবে আমাদের স্থিতিস্থাপকতার প্রমাণ।

তবে, আমরা আমাদের কৃতিত্বের জন্য গর্বিত হলেও, অবশ্যই আমাদের ভুল এবং ব্যর্থতাগুলো থেকে শিক্ষা নেওয়ার জন্য সেগুলোকে সমালোচনামূলকভাবে মূল্যায়ন করা শিখতে হবে। যদিও আমরা আর্থ-সামাজিক সূচকগুলোর ক্ষেত্রে প্রত্যাশার চেয়ে এগিয়ে আছি, তারপরও গণতন্ত্রকে শক্তিশালীকরণ, শাসন ব্যবস্থার উন্নতি এবং জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় এখনো অনেক কিছু করা বাকি রয়েছে। দুর্নীতি এবং প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা দেশকে ক্রমাগত জর্জরিত করে চলেছে। মহামারি আমাদের শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা খাতে যে বিপর্যয় সৃষ্টি করেছে সেটা খুব সামান্যই পুনরুদ্ধার করতে শুরু করেছি। মোটের ওপর সাম্প্রদায়িকতা তার কুৎসিত রূপ লালন করে চলেছে এবং নারী ও শিশুরা এখনো সহিংসতার শিকার হচ্ছে। যেহেতু আমরা আমাদের ঊর্ধ্বমুখী উন্নয়নের গতিপথে এগিয়ে যাচ্ছি, তাই আমাদের সব প্রচেষ্টা এখন এসব সমস্যা মোকাবিলা ও একটি ন্যায়সঙ্গত, অধিকারভিত্তিক সমাজ গঠনের দিকে মনোনিবেশ করতে হবে।

এই গুরুত্বপূর্ণ উপলক্ষে আমাদের কেবল উজ্জ্বল ভবিষ্যতের অপেক্ষায় থাকলেই চলবে না, আমরা এই জাতির নেতাদের তাদের বিবেকের দিকে তাকাতে এবং বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলার স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে যা করতে হবে সেগুলো করার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।

 

Comments

The Daily Star  | English

Create right conditions for Rohingya repatriation: G7

Foreign ministers from the Group of Seven (G7) countries have stressed the need to create conditions for the voluntary, safe, dignified, and sustainable return of all Rohingya refugees and displaced persons to Myanmar

4h ago