আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যখন নীরব দর্শক

ছবি: রাশেদ সুমন/স্টার

গত ১৯ এপ্রিল ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী ও নিউমার্কেট এলাকার ব্যবসায়ীদের মধ্যে দিনব্যাপী সংঘর্ষে আমরা হতবাক ও আতঙ্কিত। এই ঘটনায় একটি কুরিয়ার সার্ভিসের ১৮ বছর বয়সী এক কর্মী মারা গেছেন। অথচ, তার সঙ্গে এই ঘটনার কোনো সম্পর্কই ছিল না। শুধু তাই নয়, সাংবাদিক ও শিক্ষার্থীসহ ৫০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে দ্য ডেইলি স্টারের এক সাংবাদিকও আছেন।

এই সংঘর্ষের কারণে নগরীর যান চলাচলও ঘণ্টার পর ঘণ্টা স্থবির হয়ে থাকে। ফলে রমজান মাসে যাত্রীদের অসহনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। আগুন দেওয়া হয়েছে নুরজাহান সুপার মার্কেটের ৫ দোকানে।

আমাদের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১৮ এপ্রিল একটি ফাস্ট ফুডের দোকানে দোকানদার ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে তর্কবিতর্ককে কেন্দ্র করে হাতাহাতি শুরু হয়। একপর্যায়ে কলেজ ক্যাম্পাসে গুজব ছড়িয়ে পড়ে যে, এক দোকানদার ঢাকা কলেজের এক শিক্ষার্থীকে ছুরিকাঘাত করেছেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে কলেজের একদল শিক্ষার্থী ঘটনাস্থলে গিয়ে দোকানের কর্মীদের ওপর হামলা চালান এবং ব্যবসায়ীরাও এর পাল্টা জবাব দেন। পরে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে।

এ ধরনের ঘটনা এই প্রথম নয়। অন্যান্য সময় এমন সংঘর্ষ বেশি দূর না গড়ালেও এবার তা হয়নি। ঘটনার পরদিন সকালে শিক্ষার্থীরা ব্যবসায়ীদের দোকান খুলতে বাধা দিলে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে তাদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। সে সময় পুলিশ কী করল? তারা নীরব দর্শক হয়েই ছিল।

প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, পুলিশের সামনে উভয়পক্ষ ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে এবং ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। তারপরও পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। পুলিশ যখন ২ পক্ষকে ছত্রভঙ্গ করতে অবস্থান নেয়, তখন দুপুর প্রায় ৩টা। পুলিশ সময়মতো ব্যবস্থা নিলে ওই যুবকের মৃত্যুর পাশাপাশি অনেক ক্ষয়ক্ষতি এড়ানো যেত।

পুলিশকে যেমন তাদের নিষ্ক্রিয়তার জন্য জবাব দিতে হবে, তেমনি শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ীদেরও এই ভয়াবহ সহিংসতার দায় দিতে হবে।

ঘটনার প্রকৃতি দেখে মনে হয়, দুরভিসন্ধিমূলক কোনো কারণে এই সংঘাতকে বাড়িয়ে তোলা হয়েছে। ব্যবসায়ী ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে দ্বন্দ্ব চলছে। শিক্ষার্থীদের দাবি, ব্যবসায়ীরা প্রায়ই তাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে এবং বাড়তি দাম রাখে। অপরদিকে ব্যবসায়ীরা বলছেন, রাজনৈতিক পরিচয়ধারী শিক্ষার্থীদের একটি অংশ দীর্ঘদিন ধরে তাদের কাছ থেকে চাঁদাবাজি করে আসছেন।

আমরা মনে করি, এই দ্বন্দ্বের আসল কারণ খুঁজে বের করে তা নিরসনের সময় এসেছে, যাতে ভবিষ্যতে এর পুনরাবৃত্তি না হয়। বলা বাহুল্য, ২ পক্ষের পরস্পরের প্রতি যত অভিযোগই থাকুক না কেন, এ ধরনের সহিংসতা মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়।

Comments

The Daily Star  | English

Sheikh clan’s lust for duty-free cars

With an almost decimated opposition and farcical elections, a party nomination from the ruling Awami League was as good as a seat in the parliament.

7h ago