আরেকটি গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের মৃত্যু

জেলা পরিষদে প্রশাসক নিয়োগের বিধান যুক্ত করে জেলা পরিষদ (সংশোধন) বিল-২০২২ সংসদে পাস হয়েছে গত ৬ এপ্রিল। ১৭ এপ্রিল ৬১টি জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাদের (সিইও) ভারপ্রাপ্ত প্রধান হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে সরকার।

বলা বাহুল্য, এটি ছিল একটি অসাংবিধানিক কাজ, যা স্থানীয় সরকারের অপরিহার্য কাঠামোর সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ। কেননা, একটি গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান অনির্বাচিত ব্যক্তিদের দ্বারা পরিচালিত হতে পারে না।

জেলা পরিষদের মেয়াদ ৫ বছর পূর্ণ হয়ে গেলে উল্লিখিত আইন অনুযায়ী সরকার জেলা পরিষদে প্রশাসক নিয়োগ দিতে পারবে। এটি সংবিধানের ১১ ও ৫৯ অনুচ্ছেদের চরম লঙ্ঘন।

এই আইন পাসের সময়কাল এবং আইন পাসের অল্প সময়ের মধ্যেই ৬১টি জেলা পরিষদ বিলুপ্ত ঘোষণায় সরকারের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। আমরা বিশ্বাস করি, করোনা মহামারির কারণে জেলা পরিষদ নির্বাচন না করা যুক্তিটি গ্রহণযোগ্য নয়। মহামারির মধ্যে নির্বাচন কমিশন যেখানে এতগুলো ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচন আয়োজন করতে পেরেছে, তখন জেলা পরিষদের নির্বাচন না হওয়ার পেছনে অসাধু উদ্দেশ্য ছাড়া আর কী থাকতে পারে?

এই প্রেক্ষাপটে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলুপ্ত করা হাইকোর্টের রায় রেফারেন্স হিসেবে নেওয়া যায়। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে বাতিল করা হয়েছিল এই ভিত্তিতে যে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়টায় অনির্বাচিতরা দেশ পরিচালনা করবেন। তাহলে জেলা পরিষদের ক্ষেত্রে কী হচ্ছে?

আমাদের গণতন্ত্রের মেরুদণ্ড স্থানীয় সরকার এবং জেলা পরিষদ। সেগুলো এখন পরিচালনা করবেন অনির্বাচিত ব্যক্তিরা। সেই সঙ্গে তাদের কোনো নির্দিষ্ট মেয়াদও নেই। যতদিন নির্বাচন না হবে, ততদিন তারা জেলা পরিষদ পরিচালনা করবেন।

আমরা বিশ্বাস করি, এই ধরনের অসাংবিধানিক সিদ্ধান্ত না নিয়ে সরকার সংবিধান সংশোধন করতে পারত, যাতে মহামারির মতো কারণে মেয়াদ শেষ হওয়ার পরেও নির্বাচিত প্রতিনিধিরাই দায়িত্বে বহাল থাকতেন।

সেটা হলে সাম্প্রতিক পরিস্থিতির সঙ্গে মিলিয়ে জনগণের মনে এই ধারণা তৈরি হতো না যে, সরকার আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে বিবেচনায় রেখে এই ব্যবস্থা নিয়েছে।

আমাদের পরামর্শ হচ্ছে, সরকার এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করবে এবং জেলা পরিষদ (সংশোধন) আইন পাস হওয়ার আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবে। সেই সঙ্গে নির্বাচিত প্রতিনিধি থাকাকালীনই জেলা পরিষদ নির্বাচন আয়োজন করবে।

বাংলাদেশে গণতন্ত্র অনেকবার ধাক্কা খেয়েছে। আবারও যেন ধাক্কা না খায় সেই চেষ্টা করার এখনই সময়। জনগণের মৌলিক অধিকার অনুযায়ী তাদের কাজকর্ম পরিচালনা করা উচিত, প্রশাসনের চাপিয়ে দেওয়া কারও মাধ্যমে নয়।

Comments

The Daily Star  | English

From subsistence to commercial farming

From the north-western bordering district Panchagarh to the southern coastal district Patuakhali, farmers grow multiple crops to sell at markets

2h ago