ইউএনএইচসিআরের প্রশংসনীয় উদ্যোগ

ভাসানচরে জাতিসংঘের সহায়তা কার্যক্রম শুরু
ফাইল ফটো স্টার

বাংলাদেশ সরকার ও ইউএনএইচসিআরের মধ্যে সমঝোতা স্মারক সইয়ের মাধ্যমে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার কক্সবাজারে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের মতো ভাসানচরের রোহিঙ্গাদের জন্যেও সব ধরনের সহযোগিতার পথ সুগম হওয়ার বিষয়টিকে আমরা স্বাগত জানাই। উল্লেখ্য, এই সহযোগিতার আওতায় আছে নিরাপত্তা, শিক্ষা, দক্ষতা প্রশিক্ষণ, জীবিকা অর্জন ও স্বাস্থ্য, যার মাধ্যমে রোহিঙ্গারা একটি স্বস্তিদায়ক জীবনযাপন করতে পারবেন এবং পরিশেষে মিয়ানমারে প্রত্যাবর্তনের জন্য আরো ভালো প্রস্তুতি নিতে পারবেন।

এই চুক্তি সাক্ষরের মাধ্যমে ১ লাখ রোহিঙ্গাকে ভাসানচর দ্বীপে পুনর্বাসন করার সরকারি সিদ্ধান্তের বিপরীতে জাতিসংঘের যে কোনো ধরনের আপত্তি দূর হয়েছে বলে আমরা ধরে নিতে পারি। আশা করা যায়, এর সঙ্গে ভাসানচর সংক্রান্ত সব ভুল ধারণারও অবসান হয়েছে।

ঝড় ও জলোচ্ছ্বাসপ্রবণ এলাকা ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনের ব্যাপারে কিছু আন্তর্জাতিক সংস্থা ও দাতা গোষ্ঠীর আপত্তির কারণ আমরা বুঝতে পারছি, কিন্তু তারপরেও, আমরা আশা করছি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আমাদের বাস্তবতাকে আমলে নেবেন এবং কোনো ধরনের বাধ্যবাধকতার কারণে রোহিঙ্গাদের একটি অংশকে কক্সবাজার থেকে সরিয়ে নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে, সেটাও তারা বুঝবেন।

ডিসেম্বর ২০২০ পর্যন্ত কক্সবাজার জেলার ৩৪টি ক্যাম্পে প্রায় ৯ লাখ রোহিঙ্গা অবস্থান করছিলেন। এতজন শরণার্থী একটি অঞ্চলে থাকার কারণে সেখানের জলবায়ুর ওপর অত্যন্ত বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়েছে এবং সঙ্গে সামাজিক অস্থিরতাও তৈরি হয়েছে। এছাড়াও, এতজন মানুষ যোগ হওয়াতে সার্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতির ওপর ঝুঁকির বিষয়টিকেও অবজ্ঞা করা যাচ্ছে না। এ পর্যন্ত ১ লাখ রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে স্থানান্তরের লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ২০ শতাংশ পূরণ হলেও, আশা করা যায় বিভিন্ন পর্যায়ে বাকিদের স্থানান্তর প্রক্রিয়াও খুব শিগগির শেষ হবে।

এই উদ্যোগটি অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার, কিন্তু একই সঙ্গে আমরা আশা করছি ভাসানচর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কিংবা মিয়ানমারের সামরিক শাসকদের কাছে কোনো ভুল বার্তা পাঠাবে না। আমাদেরকে জোর দিয়ে বলতে হবে, এই স্থানান্তর প্রক্রিয়া একটি সাময়িক উদ্যোগ মাত্র এবং এটি নেওয়া হয়েছে কক্সবাজারের ওপর থেকে অতিরিক্ত চাপ কমানোর জন্য। আমাদের মূল লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে শরণার্থীদের সম্মান ও উপযুক্ত মানমর্যাদার সঙ্গে এবং মিয়ানমারের নাগরিক হিসেবে তাদের মর্যাদা পুনরুদ্ধারের মাধ্যমে তাদের নিজ জন্মভূমিতে প্রত্যাবর্তন প্রক্রিয়া শেষ করা। জাতিসংঘ ও ক্ষমতাবান রাষ্ট্রদের উচিত হবে মিয়ানমার সরকারকে তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতে বাধ্য করার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া। আমরা আশা করবো এটি খুব দ্রুত হবে। কিন্তু যতদিন পর্যন্ত রোহিঙ্গারা তাদের নিজের দেশে ফিরতে পারছেন না, ততদিন পর্যন্ত আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে তাদের সহায়তা উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে, যাতে এই ক্যাম্পে আশ্রয় নেওয়ারা মানবিক জীবনযাপন করতে পারেন।

অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান

Comments

The Daily Star  | English
rally demanding ban on awami league in Dhaka

Blockade at Shahbagh demanding AL ban

The demonstration follows a sit-in that began around 10:00pm last night in front of the Chief Adviser's residence

3h ago