ওয়াসার পানির দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব অযৌক্তিক

দেশে গত নভেম্বরে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম বৃদ্ধির পরপরই বাড়ানো হলো ভোজ্য তেলের দাম। এরমধ্যে আবার ঢাকা ওয়াসা ২০ শতাংশ শুল্ক বাড়ানোর প্রস্তাব করায় রাজধানীতে পানির দামও বাড়তে চলেছে। যদি সরকার এ প্রস্তাবের অনুমোদন দেয় তাহলে রাজধানীবাসীর পকেট খালি হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা যাবে। বিশেষ করে আসছে রমজানে যদি নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যায় তাহলে তাদের অবস্থা আরও করুণ হবে এটা বলার অপেক্ষা রাখে না।

করোনা মহামারির অর্থনৈতিক চাপ কাটিয়ে উঠতে মানুষ ইতোমধ্যে তাদের সামর্থ্যের সর্বোচ্চ দিয়ে অনিশ্চয়তার বাজারে প্রতিদিনের চাহিদা পূরণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় ওয়াসার প্রস্তাব সত্যিই তাদের জন্য ধাক্কার।

পানির দাম ২০ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাবটি বোধগম্য হচ্ছে না। কারণ ঢাকা ওয়াসা ওয়াসা আইন-১৯৯৬-এর ধারা ২২ অনুযায়ী প্রতি বছর ৫ শতাংশ করে শুল্ক বাড়ানো যেতে পারে। তবে, আত্মপক্ষ সমর্থনে ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেছেন, প্রতি লিটার পানির জন্য ১০ টাকা সরকারি ভর্তুকি দিয়েও উৎপাদন খরচ মেটানো সম্ভব হয় না। তাই ৫ শতাংশ বৃদ্ধি 'পর্যাপ্ত' নয়।

নতুন প্রস্তাব অনুযায়ী, প্রতি ইউনিট বা ১ হাজার লিটার পানির দাম আবাসিক ব্যবহারের জন্য ২১ টাকা এবং বাণিজ্যিক ব্যবহারের জন্য ৫৫ টাকা হবে। বর্তমানে এই দাম যথাক্রমে ১৫ টাকা ১৮ পয়সা এবং ৪২ টাকা। ভর্তুকি কমিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি এ প্রস্তাবের আরেকটি কারণ হলো, ওয়াসাকে বৈদেশিক ঋণ সুদসহ ফেরত দিতে হবে।

দুর্ভাগ্যবশত, ওয়াসার কর্মকর্তারা সুযোগ পেলেই পানির শুল্ক বাড়িয়ে দিতে চান। তারা গত ২ বছরে ২ বার এবং গত ১৩ বছরে ১৫ বার শুল্ক বাড়িয়েছে। কিন্তু রাজধানীর প্রায় ২ কোটিরও বেশি বাসিন্দার জন্য বিশুদ্ধ ও নিরাপদ পানি সরবরাহের প্রতিশ্রুতি পূরণে তারা কখনোই খুব বেশি উৎসাহ দেখায়নি। অনেক ক্ষেত্রে তারা তাদের ব্যর্থতার উত্তর দেওয়ারও প্রয়োজন মনে করেনি। অথচ তাদের সক্ষমতা, পরিকল্পনা ও জবাবদিহিতার অভাবে ভুগছেন রাজধানীর বাসিন্দারা।

আগামী মার্চের মধ্যে বিদ্যুৎ, গ্যাস ও সারের দাম বাড়ানোর যে আলোচনা চলছে- এ অবস্থায় পানির দাম বাড়ানোর প্রস্তাবটি খুবই উদ্বেগজনক। সবকিছুর ধারাবাহিক মূল্য বৃদ্ধির সম্মিলিত প্রভাব এখনো অকল্পনীয়। মহামারির কারণে ইতোমধ্যে দেশের মানুষ অপরিমেয় দুর্ভোগ ও কষ্টের মধ্যে পড়েছে। তাদের একটি বিশাল অংশকে দারিদ্রসীমারও বাইরে যেতে হয়েছে। বেকারত্বও দুশ্চিন্তার পর্যায়ে পৌঁছেছে। মানুষকে লড়াই করতে হচ্ছে ক্রমবর্ধমান স্বাস্থ্যসেবা সংক্রান্ত ব্যয়ের সঙ্গেও। এখন তাদেরকে অতিরিক্ত ভোগান্তিতে ফেলার সময় নয়।

আমরা সরকারকে বিষয়গুলো বিশদভাবে দেখার আহ্বান জানাচ্ছি। ঢাকা ওয়াসার এমন খাপছাড়া প্রস্তাবে সরকারকে সম্মতি না জানাতে অনুরোধ করছি। পাশাপাশি সরকারকে ভর্তুকির তহবিল যোগান বা ব্যবস্থা করার বিকল্প উপায়ও খুঁজে বের করা উচিত।

Comments

The Daily Star  | English

Election in first half of April 2026

In his address to the nation, CA says EC will later provide detailed roadmap

11h ago