করোনা প্রতিরোধে অবহেলার সুযোগ নেই

বেশ লম্বা সময় ধরে করোনাভাইরাস সংক্রমণ দ্রুত গতিতে বাড়তে থাকার পর গত কয়েক সপ্তাহে তা ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে। স্বাস্থ্যসেবা অধিদপ্তর শনিবার করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ১৫২ জনের মৃত্যুর খবর জানায় যা গত ৫১ দিনের মধ্যে সর্বনিম্ন। এছাড়াও, গত সপ্তাহে মৃত্যুর সংখ্যা এর আগের সপ্তাহের তুলনায় ২৭ শতাংশ কম। অন্যান্য সংখ্যাগুলোও একই ধারা দেখিয়েছে। নতুন করে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৩৫ শতাংশ কমেছে এবং শনিবারের দৈনিক সংক্রমণের হার ছিল ১৬ দশমিক ৭১ শতাংশ, যা গত দুই মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। যদিও আমরা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারণ করে দেওয়া 'পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে' থাকার মাপকাঠি থেকে এখনও অনেক দূরে (সংক্রমণের হার টানা দুই সপ্তাহ ধরে পাঁচ শতাংশের নিচে থাকতে হবে), তারপরও সাম্প্রতিক সংখ্যা উৎসাহ জাগানিয়া এবং এগুলো আমাদের আশাবাদী করে তুলছে।
তবে পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে আমরা বলতে পারি, এখনই বর্তমান ধারা ধরে রাখার জন্য অতিরিক্ত উদ্যোগ নেওয়ার উপযুক্ত সময়। আত্মতুষ্টিতে ভুগলে তার জন্য আমাদেরকে চরম মূল্য দিতে হতে পারে। ইতোমধ্যে আমরা এ ধরনের আচরণের বিরূপ প্রতিক্রিয়ার শিকার হয়েছি। আমরা বিধিনিষেধ প্রত্যাহার করে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার কারণে সেটি আবারও চালু করতে বাধ্য হয়েছিলাম। মহামারির বিরুদ্ধে দীর্ঘ সংগ্রামে এই ধারাটা ঘুরে ফিরে বারবার আসছে। স্বাভাবিকভাবেই, মানুষ বিভিন্ন সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে নিতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। মহামারি সংক্রান্ত অবসাদ ব্যক্তি ও রাষ্ট্র, উভয়ের জন্য একই ধরনের বিরূপ প্রতিক্রিয়া আনতে পারে। ঠিক এ কারণেই গত কয়েক সপ্তাহের কষ্টার্জিত অর্জন বজায় রাখতে হবে এবং যে কোনো মূল্যে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।
যদিও দেশব্যাপী লকডাউন এখন সম্পূর্ণরূপে তুলে দেওয়া হয়েছে, তবুও আমরা মনে করি সরকারের উচিত হবে না যেসব অঞ্চলে এখনও সংক্রমণের হার বেশি, সেগুলোকে বাকি দেশ থেকে আলাদা করে রাখার সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দেওয়া। প্রকৃতপক্ষে, সাময়িকভাবে এ ধরনের আঞ্চলিক লকডাউন চালু করার কৌশল আমাদের আরও আগে থেকেই এবং বেশি পরিমাণে কাজে লাগানো দরকার ছিল, কারণ বাংলাদেশের মতো দরিদ্র দেশের ক্ষেত্রে দীর্ঘ সময় ধরে সারা দেশকে লকডাউনের আওতায় রাখার বিষয়টি বাস্তবসম্মত নয়। আঞ্চলিক লকডাউন দেওয়া সহজ। সরকারকে আরও বেশি উদ্যোগ নিয়ে এটি নিশ্চিত করতে হবে, প্রতিটি ব্যক্তি যেন স্বাস্থ্যবিধি মানে। একই সঙ্গে টিকাদান কার্যক্রমের ওপরও সমপরিমাণ গুরুত্ব দিতে হবে, কারণ এই ভাইরাসের ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে দুধরনের উদ্যোগই অত্যন্ত জরুরি।
ভ্যাকসিন কেনার প্রেক্ষাপটে বলা যায়, খুব বেশি ভালো খবর নেই। টিকা সহজলভ্য করার জন্য সরকার সম্প্রতি চীনের সিনোফার্ম ভ্যাকসিন বোতলজাত করা, লেবেল দেওয়া ও ডিসপেন্সের জন্য একটি ত্রিপক্ষীয় চুক্তি করেছে। তবে আমরা জানতে পেরেছি, এই চুক্তির মাধ্যমে টিকার প্রথম চালানটি পেতে কমপক্ষে আরও তিন মাস সময় লাগতে পারে। টিকা কেনার ক্ষেত্রেও অগ্রগতি বেশ ধীর। এসব কারণে সরকারের জন্য টিকা দেওয়ার চলমান প্রক্রিয়াগুলোকে আরও অনেক উন্নত করতে হবে। সকলের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে ও দেশের বেশিরভাগ নাগরিককে, বিশেষ করে যারা অপেক্ষাকৃত দুর্বল, তাদের দ্রুত টিকা না দিয়ে আমরা কোনো ধরনের ক্লান্তি বা হাল ছেড়ে দেওয়ার মনোভাব দেখাতে পারি না। সেক্ষেত্রে আমরা শুধু ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার সম্ভাবনাকে প্রশ্নবিদ্ধ করবো।
ইংরেজি থেকে অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান।
Comments