কেন পানিতে ডুবে এত শিশুর মৃত্যু হচ্ছে? 

প্রতিরোধে দ্রুত পরিকল্পনা বাস্তবায়ন প্রয়োজন

বাংলাদেশে পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুর হার খুবই ভয়াবহ। একটি জরিপের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত দেড় বছরে এক হাজার ৪০০ জন মানুষ পানিতে ডুবে মারা গেছেন। যাদের মধ্যে ৮৩ শতাংশই শিশু। 

তবে, ২০১৬ সালে সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ বাংলাদেশের (সিআইপিআরবি) জরিপের তথ্য অনুযায়ী, প্রায় ১৪ হাজার ৪৩৮ জন ১৮ বছর বা তার চেয়ে কম বয়সী শিশু পানিতে ডুবে মারা গেছে। অন্যভাবে বলতে গেলে, দৈনিক ৪০ জন শিশু পানিতে ডুবে মারা যায়। 

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ১৮ হাজার মানুষ পানিতে ডুবে মৃত্যুবরণ করেন এবং এক থেকে চার বছর বয়সী শিশু মৃত্যুর ঘটনার ৪৩ শতাংশই পানিতে ডোবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট।

এতে বিস্মিত হওয়ার কিছু নেই, অসংখ্য পুকুরসমৃদ্ধ পল্লী অঞ্চলগুলো এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপ্রবণ। অনেক জায়গায় এক সারি বাসস্থানের কয়েকটি পরিবারের জন্য একটি পুকুর থাকে। এতেও বিস্মিত হওয়ার কিছু নেই, পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকে। এই বয়সের শিশুদের সাঁতারও শেখানো যায় না এবং বিপদ ও নিরাপত্তা সম্পর্কে সুষ্ঠু ধারণাও তাদের মাঝে বিকশিত হয় না।

বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং তা সারা বিশ্বের নজরে এসেছে। জাতিসংঘের ঘোষণা অনুযায়ী এ বছরের ২৫ জুলাই প্রথমবারের মতো পালিত হয়েছে 'পানিতে ডুবে মৃত্যু প্রতিরোধসংক্রান্ত আন্তর্জাতিক দিবস'। বাংলাদেশ সরকার এই দিবসটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে পালন করার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় আমরা আনন্দিত।

এখন, যে প্রশ্নটি আমাদের মনে এসেছে, তা হলো, যেহেতু এই বিষয়টির গুরুত্ব সরকারি পর্যায়ে স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে, সেক্ষেত্রে কেনো পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুর সমস্যাটিকে গুরুত্ব অনুযায়ী জরুরিভাবে মোকাবিলা করা হয়নি। বিশেষ করে, উল্লিখিত ভয়াবহ পরিসংখ্যানগুলো ধর্তব্যে নেওয়ার পরেও? 
ডিপথেরিয়া, পোলিও, নিউমোনিয়া ও অন্যান্য শিশুরোগে পাঁচ বছরের চেয়ে কম বয়সী শিশুমৃত্যুর হার কমানোর ক্ষেত্রে অসামান্য সাফল্য অর্জন করেছে বাংলাদেশ। এই প্রেক্ষাপটে, প্রতিরোধযোগ্য একটি কারণে এত শিশুর মৃত্যুর কাছে অসহায় আত্মসমর্পণের বিষয়টি একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়। 

আমরা জানতে পেরেছি, একাধিক উদ্যোগ প্রক্রিয়াধীন অবস্থায় আছে এবং কিছু উদ্যোগ সরকারি অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। বড় আকারে জনসচেতনতা বাড়ানোর কার্যক্রম পরিচালনার উদ্দেশ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর 'ডুবে মৃত্যু প্রতিরোধে জাতীয় কৌশলপত্রের' খসড়াটি তৈরি করেছিল। এই নথি ২০১৯ সাল থেকে অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। এতদিন কেনো লাগছে অনুমোদন হতে, সেটা ভাবনার বিষয়।

এ ধরনের দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্য বেশ কিছু প্রমাণিত কর্মপদ্ধতি রয়েছে, যেগুলো জাতিসংঘের সুপারিশ করেছে। এই উদ্যোগগুলোকে আমাদের কর্মপরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে এবং শিগগির বাস্তবায়ন করতে হবে। 

প্রকৃতপক্ষে এটি একটি জীবন-মৃত্যুর বিষয়। প্রতিরোধমূলক উদ্যোগ, পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নকে আমরা কোনো মতেই আমলাতান্ত্রিক লাল ফিতায় জড়িয়ে যেতে দিতে পারি না। এ ধরনের উদাসীনতা আমাদের আরও ভয়াবহ পরিণতির দিকে ঠেলে দেবে।

অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান

 

Comments

The Daily Star  | English

US retailers lean on suppliers to absorb tariffs

Rather than absorbing the cost or immediately passing it on to consumers, many US apparel retailers and brands have turned to their suppliers in Bangladesh, demanding they share the pain

4h ago