কেন বর্ষাকালেই খুঁড়তে হয় ঢাকার রাস্তা

সম্প্রতি বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি) আয়োজিত 'কনটেম্পোরারি প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজমেন্ট (সমসাময়িক পরিকল্পনা ও উন্নয়ন ব্যবস্থাপন)' বিষয়ের ওপর একটি ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে নগর পরিকল্পনাবিদরা যে প্রশ্নটি তুলেছেন তা অত্যন্ত যুক্তি সংগত। আলোচকরা জানতে চেয়েছেন, কেন রাস্তা খোঁড়াখুঁড়িতে নীতিমালা মেনে চলা হয় না।
এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে সংশ্লিষ্ট সকল মন্ত্রণালয় ও সেবাদাতাদের। সংবাদ সম্মেলনে দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উঠে এসেছে। একটি, রাস্তা খোঁড়ার জন্য সময় নির্বাচন ও কাজের জন্য নির্ধারিত সময়সীমা এবং অপরটি, ঠিকাদারদের নীতিমালা মেনে না চলার প্রবণতা।
নিঃসন্দেহে আমরা জানতে চাই, কেন নীতিমালা লঙ্ঘন করে বর্ষাকালেই রাস্তা খোঁড়ার বেশিরভাগ কাজ করা হয়? রাস্তা খোঁড়া অবস্থায় মাসের পর মাস পড়ে থাকে। ঢাকা শহরের বাসিন্দা হিসেবে আমাদের বেশিরভাগের অভিজ্ঞতাই এটা।
একটি স্থানীয় দৈনিকের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর ঢাকায় প্রায় ৭০০ কিলোমিটার রাস্তা ও ফুটপাথ খোঁড়ার পর বেশ কয়েক মাস ওই অবস্থাতেই ছিল। বলাই বাহুল্য, এতে করে বর্ষাকালে রাস্তায় চলাচলে চরম ভোগান্তিতে পরেন ওই এলাকার মানুষ এবং প্রকারান্তে পুরো শহরের বাসিন্দারা। যান চলাচলে সমস্যা ও পথচারীদের চলাফেরা বিঘ্নিত করা ছাড়াও কাজ চলমান থাকা রাস্তাগুলো হতে পারে দুর্ঘটনা ও মৃত্যুর কারণ। একইসঙ্গে, এগুলো মশার প্রজনন ক্ষেত্রও হয়ে উঠতে পারে।
একটি প্রতিবেদন থেকে আমরা বিচিত্র একটি তথ্য জানতে পেরেছি। বিভিন্ন সেবাদাতাদের অপরিকল্পিত খোঁড়াখুঁড়ি ও উন্নয়ন কাজের কারণে ঢাকার ৩০ শতাংশ রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত অবস্থায় রয়েছে এবং দীর্ঘদিন ধরেই এই অবস্থা চলছে।
এই বিষয়ে গণমাধ্যমে নিয়মিত লেখা হলেও পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, কোনো প্রকার দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখা যায়নি। আমরা বারবার উল্লেখ করেছি, এসব কাজ করা বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে সমন্বয় নেই বললেই চলে। প্রতিটি সংস্থা তাদের নিজস্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী যখন প্রয়োজন হয় তখনই ঢাকার রাস্তাগুলোকে খুঁড়ে ফেলে। রাস্তার নিচে থাকা বৈদ্যুতিক তার, সুয়ারেজ লাইন, পানির পাইপ, গ্যাসের লাইন ইত্যাদির জন্য বছর জুড়ে খোঁড়াখুঁড়ি চলে। ১৯টি মন্ত্রণালয়ের ৫২টি সংস্থার মধ্যে সমন্বয় করার জন্য কোনো মন্ত্রণালয় বা সংস্থা না থাকায় এ ধরণের পরিস্থিতি তৈরি হওয়া স্বাভাবিক।
ঢাকা মহানগরীর সড়ক খনন নীতিমালা, ২০১৯ এ পরিষ্কার ভাবে বলা আছে, জুন থেকে অক্টোবরের মধ্যে ঢাকায় উন্নয়ন কাজ স্থগিত রাখতে হবে। ঠিকাদাররা কথা শোনেন না, এমন কথা যখন কর্তৃপক্ষ বলে, তখন তা শাক দিয়ে মাছ ঢাকার প্রচেষ্টা বলেই মনে হয়। কেন তাদেরকে নীতিমালা মেনে চলতে বাধ্য করা হয় না? আমরা সবাই উন্নয়নের পক্ষে, কিন্তু সেই উন্নয়নের জন্য মানুষের ঘাড়ে যন্ত্রণার বোঝা চাপিয়ে দেওয়া যৌক্তিক নয়। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সংস্থাগুলোর নিশ্চিত করতে হবে যে, উন্নয়ন কাজের কারণে জনমানুষের ওপর নেমে আসা দুর্ভোগ যেন সেবাদাতার উদাসীনতা বা নীতিমালা মেনে না চলার প্রবণতার কারণে অসহনীয় পর্যায়ে চলে না যায়।
অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান
Comments