প্রতি অর্থবছরে মুনাফা হলে পানির দাম বৃদ্ধি কেন

ঢাকা ওয়াসার পানির দাম বাড়ানোর খবরে পুরান ঢাকার একজন অবসরপ্রাপ্ত বাসিন্দা তার প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছেন, 'এটা কি একটা মস্করা নাকি যে, আমার কল থেকে বের হয়ে আসা এই দুর্গন্ধযুক্ত হলুদ রংয়ের পানির জন্য আরও বেশি দাম দিতে হবে?' আমরা যদি প্রতিষ্ঠানটির কাজের মূল্যায়ন করি তাহলে, পানির দাম ৪০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধির বিষয়ে একজন বয়স্ক নাগরিকের হতাশার বিষয়টি উপলব্ধি করা সহজ হবে। ওয়াসার অন্যান্য গ্রাহকরাও দ্য ডেইলি স্টারকে পানির গুণগতমানের বিষয়ে একই ধরনের অভিযোগ করেছেন। যেটি আবার নিয়মিত সরবরাহও করা হয় না। এ ছাড়া তারা পানির দাম বাড়ানোর যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। গত ৩ বছরের মধ্যে ওয়াসা তৃতীয় বার এবং ১৩ বছরের মধ্যে ১৬ বার পানির দাম বাড়িয়েছে। ওয়াসা পানির দাম বাড়ালেও রাজধানীর ২ কোটি মানুষের জন্য নিরাপদ পানি সরবরাহের বিষয়টি এখনো অমীমাংসিত থেকে গেছে।

পানির দাম বাড়ানোর বিষয়ে সবশেষ ঘোষণায় বলা হয়, আবাসিক ব্যবহারে প্রতি ইউনিটে (১ হাজার লিটার) ২১ টাকা এবং বাণিজ্যিক ব্যবহারের ক্ষেত্রে ৫৫ টাকা দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে, যা যথাক্রমে ৩৮ দশমিক ৮ শতাংশ ও ৩১ শতাংশ মূল্য বৃদ্ধি। ওয়াসার নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২০-২১ অর্থবছরে ওয়াসা ৪৯ কোটি ৬০ লাখ টাকা লাভ করেছে, যা আগের বছরের তুলনায় ৭ শতাংশ বেশি। সঞ্চিত মুনাফা হচ্ছে একটি প্রতিষ্ঠানের সার্বিক মুনাফার একটি অংশ, যেটি ভবিষ্যতে ব্যবহারের জন্য জমিয়ে রাখা হয়, বিশেষ করে বিনিয়োগের জন্য। ২০২০-২১ অর্থবছরের শেষে ঢাকা ওয়াসার সঞ্চিত মুনাফার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৮৯২ কোটি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেহেতু ওয়াসা ইতোমধ্যে প্রতি অর্থবছরে মুনাফা করছে, তাই আবারও পানির দাম বাড়ানোর কোনো যুক্তি থাকতে পারে না। তাহলে এটি মহামারি এবং উচ্চ মুদ্রাস্ফীতির কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে নির্ধারিত আয়ের মানুষের আরও বেশি দুর্দশার কারণ হবে।

কিন্তু, বরাবরের মতো ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক, দ্য ডেইলি স্টারের প্রতিবেদকের কাছে লাভের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। তিনি দাবি করেন, পানির দামের চেয়ে উৎপাদন খরচ বেশি, সরকার ভর্তুকি দেওয়ায় এই পার্থক্য তৈরি হয়েছে এবং ভর্তুকির অর্থ লাভ হিসাবে ধরা হচ্ছে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, সুদ, অবচয় এবং অন্যান্য খরচ যোগ করা হলে, আর্থিক বিবরণীতে লাভ খুঁজে পাওয়া যাবে না।

বিশেষজ্ঞরা অবশ্য ওয়াসা এমডির ব্যাখ্যা মানতে রাজি নন। সাধারণ গ্রাহকদের ওপর বোঝা চাপানোর পরিবর্তে, তারা অন্যান্য উদ্যোগ হিসেবে উৎপাদন খরচ কমানোর এবং সিস্টেম লস মোকাবিলার পরামর্শ দিয়েছেন। ঢাকা ওয়াসা কর্তৃপক্ষ ভর্তুকির বোঝা কমানোর জন্য যাই করার সিদ্ধান্ত নিক—অথবা শেষ পর্যন্ত কিছুটা মুনাফা অর্জনের জন্য কোনো উদ্যোগ নিলে সেটি গ্রাহকদের আরও শরীরের রক্ত বা ঘাম ঝরিয়ে হতে পারে না। তাও আবার এমন একটি পণ্যের জন্য, তারা যেটির মান নিশ্চিত করতে পারে না।

Comments

The Daily Star  | English

Why 1971 still casts a shadow in Bangladesh-Pakistan relations

The truth of the 1971 remains buried in denial, distortion, and evasion

2h ago