মেট্রো রেল: যোগাযোগ ব্যবস্থায় নতুন যুগের সূচনা

ঢাকার এলিভেটেড মেট্রো রেল বাংলাদেশের যাতায়াত ব্যবস্থায় এক নতুন যুগের সূচনা করেছে। যাত্রী পরিবহনের নতুন এই ধরন দেশের মাটিতে আগে কখনো দেখা যায়নি। যার প্রথম পদক্ষেপটি সংঘঠিত হয়েছে গত রোববার। যখন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী মেট্রো রেলের পরীক্ষামূলক যাত্রার উদ্বোধন করেন। পরিকল্পনা অনুসারে আগামী বছরের ডিসেম্বরে বাণিজ্যিক চলাচল শুরুর আগ পর্যন্ত এই পরীক্ষামূলক চলাচল অব্যাহত থাকবে। রোববার যা শুরু হয়েছে, সেটিকে বলা হচ্ছে 'পারফরমেন্স টেস্ট'। যা চলবে আগামী ছয় মাস পর্যন্ত। এর পরের তিন মাস হবে মূল পরীক্ষামূলক চলাচল। যা 'ইন্টিগ্রেটেড টেস্ট' হিসেবে পরিচিত। তার পরের পাঁচ মাস চলবে যাত্রীবিহীন 'ট্রায়াল রান'। ভায়াডাক্টের ওপর রেল চলার ক্ষেত্রে সব ঠিকঠাক আছে কী না, লাইন-বৈদ্যুতিক তারসহ বিভিন্ন পর্যায়ে আনুষঙ্গিক ব্যবস্থাপনাগুলো সঠিকভাবে কাজ করছে কী না- এমন সব বিষয়গুলো নিশ্চিত করার জন্যই এই পরীক্ষামূলক চলাচল।
দেশের পরিবহন খাতের জন্য এটা বড় ঘটনা। যদিও প্রথম পর্যায়ে এই ট্রেন সেবাটি উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত চালু করা হবে। পরে তা বিস্তৃত হবে মতিঝিল পর্যন্ত। যে পথের মোট দূরত্ব ২০ দশমিক ১০ কিলোমিটার। এর সফলতায় যে কেউ ঢাকার অন্য ব্যস্ত এলাকা কিংবা দেশের অন্যান্য মেট্রোপলিটন শহরগুলোতে এমন সেবা চালু হওয়ার বিষয়টি কল্পনা করতে পারেন। বাংলাদেশের মতো একটি অধিক জনবহুল, দ্রুত নগরায়ন হতে থাকা ও জায়গার স্বল্পতায় ধুঁকতে থাকা একটি দেশের জন্য মেট্রো রেলের সুবিধা অনেক। এটা যে কেবল দৈনিক যাতায়াতের সময় উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে আনবে, তা না। বরং একসঙ্গে প্রচুর সংখ্যক যাত্রীবহনের মাধ্যমে পরিবহনের অন্য মাধ্যমগুলোর ওপরও চাপ কমিয়ে দেবে। যোগাযোগের ক্ষেত্রে এই নমনীয়তা, স্বাচ্ছন্দ্য ও গতির ফলে এই পরিষেবাটি যে অর্থনৈতিক সম্ভাবনার প্রতিশ্রুতি দেয়, তা আমাদের জীবনমানের ওপরেও গভীর প্রভাব ফেলতে পারে।
ওই সম্ভাবনায় পৌঁছানোর বিষয়টি যদিও অনেকাংশে নির্ভর করে অনিষ্পন্ন কাজ ও কেনাকাটা (ট্রেন, কোচ ইত্যাদি) কত দ্রুত সম্পন্ন হচ্ছে। পাশাপাশি বাণিজ্যিক চলাচল শুরুর পর কতটা সন্তোষজনকভাবে সেবাটি দেওয়া হচ্ছে। ২০১২ সালে কাজ শুরু হওয়ার পর থেকে চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত ঢাকা মেট্রো রেল প্রকল্পের মেয়াদ বেশ কয়েকবার বাড়ানোর পরেও প্রকল্পের অগ্রগতি মাত্র ৬৮ দশমিক ৪৯ শতাংশ। অতি সম্প্রতি প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কাজ বিলম্বিত হয়েছে মহামারির অভিঘাতে। আমরা আশা করব সামনের দিনগুলোতে প্রকল্পের কাজ দ্রুত হবে। আর ২০২২ সালের ডিসেম্বরে এই পরিষেবা চালুর যে সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে, তার পথে আর কোনো বাধা আসবে না।
এ ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের দিক থেকে সদিচ্ছার কোনো অভাব আছে বলে মনে হয় না। তারপরও প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বিষয়টি যেন সঠিকভাবে প্রতিফলিত হয়, সে ব্যাপারে যত্নশীল হতে হবে। মানসম্মত সেবা নিশ্চিত করতে হবে। তাই অতীত অভিজ্ঞতা থেকে এই ইঙ্গিতটুকুও নিতে হবে, যাতে এটি অন্যান্য উচ্চাভিলাষী যোগাযোগ প্রকল্পগুলোর ভাগ্যবরণ না করে। যা প্রতিশ্রুতি অনুসারে ফলাফল দিতে ব্যর্থ হয়েছে।
প্রতিবেদনটি ইংরেজি থেকে অনুবাদ করেছেন মামুনুর রশীদ।
Comments