রোহিঙ্গাদের ন্যায়বিচার: বিশ্বকে এক হতে হবে

আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে রোহিঙ্গা গণহত্যা মামলার শুনানি। ছবি: রয়টার্স

রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যার ঘটনায় ২ বছর আগে গাম্বিয়ার করা মামলায় আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের নতুন করে শুনানির উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই। ২ দফায় এ শুনানি সোমবার শুরু হয়।

রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গণহত্যামূলক কর্মকাণ্ড চালানোর জন্য মিয়ানমারকে জবাবদিহি করতে ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) পক্ষে গাম্বিয়া ২০১৯ সালের নভেম্বরে এ মামলা করে। প্রাথমিক শুনানি শেষে, আদালত দাবিগুলোকে যথাযথ বলে মনে করেন এবং রাখাইন রাজ্যে গণহত্যা বন্ধে অস্থায়ী ব্যবস্থা নিতে মিয়ানমারকে নির্দেশ দেন। এরপর ২ বছর পেরিয়ে গেলেও মিয়ানমার এখনো তেমন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দেওয়া বা অন্যান্য মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করার কোনো উদ্যোগ নেয়নি দেশটি।

মানবাধিকার সংস্থা ফর্টিফাই রাইটসের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬ সালের অক্টোবর এবং ২০১৭ সালের আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী রাখাইনে ১১ হাজারের বেশি সেনা মোতায়েন করে। পুলিশ ও বেসামরিক অস্ত্রধারীদের পাশাপাশি সেনাবাহিনী পরিকল্পিতভাবে রোহিঙ্গা পুরুষ, নারী ও শিশুদের ওপর গণহত্যা চালায়, ধর্ষণ করে এবং উত্তর রাখাইনের ৩টি জনপদের কয়েকশ গ্রাম ধ্বংস করে। শুধু ২০১৭ সালের আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসেই প্রায় সাড়ে ৭ লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। এর আগে, ৮০'র দশক থেকেই নির্যাতনের শিকার হয়ে ৩ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে বাস করছিল।

জাতিসংঘের স্বাধীন ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং মিশনও গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সন্দেহে ১০০ জনের বেশি লোকের একটি গোপন তালিকা তৈরি করেছে। তা স্বত্বেও জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ মিয়ানমারের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়েছে।

এই প্রেক্ষাপটে গাম্বিয়ার মামলা অনেক বড় অর্জন। কিন্তু নানা কারণে মামলার কার্যক্রম গতি পায়নি। মামলার ক্ষেত্রে গাম্বিয়ার যোগ্যতা নিয়ে গত বছরের শুরুর দিকে মিয়ানমারের সু চির নেতৃত্বাধীন সরকার আপত্তি তুলেছিল। কিন্তু পরে দেশটির সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখলের পর, জাতীয় ঐক্য সরকার আপত্তি তুলে নেয় এবং অভিযোগের শুনানির জন্য আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের এখতিয়ার মেনে নেয়। প্রকৃতপক্ষে, জাতীয় ঐক্য সরকার আদালতকে সহযোগিতার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভের চেষ্টা করছে। গণহত্যার মামলা শক্তিশালী করতে সামরিক জান্তার গণহত্যার অভিপ্রায় প্রমাণ করে এমন অনেক গোপন নথি তাদের কাছে আছে বলে প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।

এখন মামলার নতুন করে শুনানি শুরু হওয়ায় রোহিঙ্গাদের প্রতি ন্যায়বিচারের আশা জেগে উঠেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী এখন ভয়াবহ আন্তর্জাতিক চাপের মধ্যে আছে। আসিয়ান দেশগুলোর বৈঠকে মিয়ানমারকে ডাকা হচ্ছে না। তাই আমরা মনে করি, রোহিঙ্গাদের প্রতি ন্যায়বিচার, তাদের নাগরিকত্ব দেওয়া এবং মিয়ানমারে তাদের প্রত্যাবাসনের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের একসঙ্গে কাজ করার এটাই উপযুক্ত সময়।

Comments

The Daily Star  | English

Bangladesh races to expand air cargo capacity

In a first move to address the shortfall, Sylhet's Osmani International Airport is set to launch dedicated cargo operations today

6h ago