লকডাউন তুলে নেওয়ায় ঘরমুখো মানুষের উন্মাদনা

আগেও এমন দেখেছি আমরা। ইচ্ছামতো একের পর এক লকডাউন দিতে আর তুলে নিতে দেখেছি। এ দেশে বেশিরভাগ সিদ্ধান্তই নেওয়া হয় স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে। প্রতি ঈদের আগে লকডাউন শুধু শিথিলই করা হয় না, নাগরিকদের করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষায় রাষ্ট্র তার দায়িত্ব ভুলে যায়। এর পরিণতি কতটা ভয়াবহ - তা আমরা দেখেছি।
লকডাউনে শিথিলের প্রথম দিন গতকালই শুরু হয়ে যায় তীব্র যানজট। রাজধানীর সাতরাস্তা এলাকা থেকে তোলা। ছবি: এমরান হোসেন/স্টার

আগেও এমন দেখেছি আমরা। ইচ্ছামতো একের পর এক লকডাউন দিতে আর তুলে নিতে দেখেছি। এ দেশে বেশিরভাগ সিদ্ধান্তই নেওয়া হয় স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে। প্রতি ঈদের আগে লকডাউন শুধু শিথিলই করা হয় না, নাগরিকদের করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষায় রাষ্ট্র তার দায়িত্ব ভুলে যায়। এর পরিণতি কতটা ভয়াবহ - তা আমরা দেখেছি।

তাই, সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার ‘কঠোর লকডাউন’ তুলে নেওয়ার পরে যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। তবে, সেই একই পরিচিত চিত্রই আবার দেখে এবং আসন্ন সর্বনাশা পরিণতি আঁচ করতে পেরে দু:খ দুর হচ্ছে না। কেবল উন্মত্ত ঈদ যাত্রাই আমাদের দুশ্চিন্তার একমাত্র কারণ নয়। শপিং মল, রাস্তাঘাট ও শহরগুলোর সব জায়গায় মানুষের উপচে পড়া ভিড় দেখা যাচ্ছে। যেন লকডাউনে নষ্ট হওয়া সময় পুষিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চলছে। গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে তীব্র যানজট থাকার খবর পাওয়া গেছে। রাজধানী থেকে বের হওয়ার পয়েন্টগুলোতেও একই রকম বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছে। এরইমধ্যে হাজার হাজার মানুষ বাস, ট্রেন ও লঞ্চে করে ঢাকা ছেড়ে গেছে বলে আমাদের প্রতিবেদনগুলোতে এসেছে। ঈদ-উল-আজহার সময় যত ঘনিয়ে আসবে, আরও হাজার হাজার মানুষ ঢাকা ছাড়বে।

নির্দেশনা অনুযায়ী, করোনার বিস্তার কমাতে সব ধরনের গণ-পরিবহনে ৫০ শতাংশ যাত্রী পরিবহনের কথা। কিন্তু, এ নির্দেশনা খুব কমই মানা হচ্ছে। জনাকীর্ণ ফেরিগুলোতে করে পদ্মা পাড়ি দিতে গিয়ে লোকজন মাস্ক পরা বা দূরত্ব বজায় রাখার নিয়মও মানছেন না। মহাসড়কগুলোতে যানবাহনের দীর্ঘ সারি দেখা দেখা গেছে। বাস অপারেটরা বেশি ভাড়া নিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন অনেক যাত্রী। টিকিট স্বল্পতা থাকার অভিযোগ করেছেন অনেকে। 

এ সবকিছুই এমন এক সময়ে ঘটছে, যখন দেশে রেকর্ড সংখ্যক লোক করোনা আক্রান্ত হচ্ছেন ও মারা যাচ্ছেন। গত বৃহস্পতিবার একদিনে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড হয়েছে। ওইদিন ২২৬ জন করোনায় মারা যান এবং দৈনিক সংক্রমণের হার ছিল ২৭ দশমিক ২৩ শতাংশ। এটা তার আগের দুই-তিন সপ্তাহ ধরে সংক্রমণ বাড়তে থাকার ধারাবাহিকতা। বিশেষজ্ঞরা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, লকডাউন শিথিল করা হলে ঈদ-উল-ফিতরের পর মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে আমরা যে অবস্থা দেখেছি, তার চেয়েও জটিল পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে পারি। সে সময় একই রকম শিথিলতার কারণে সংক্রমণ বেড়ে গিয়েছিল।

কিন্তু, এবার আরও সংক্রামক ও মারাত্মক ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের কারণে বিপদ আরও বেশি। ইতোমধ্যে এ ভ্যারিয়েন্ট সারাদেশে, বিশেষ করে সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে সর্বনাশের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। একবার ভেবে দেখুন, বিপুল সংখ্যক মানুষ যখন ওইসব জেলায় কোনো নজরদারি ছাড়া অবাধে চলাফেরা করবে, ইতোমধ্যেই তারা অবশ্য তা করতে শুরু করেছে, তখন কত বড় বিপর্যয় ঘটবে। এখনই দিশেহারা অবস্থায় থাকা আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর তখন কেমন প্রভাব পড়বে, ভাবুন একবার।

ভঙ্গুর অর্থনৈতিক কাঠামোর একটি দেশের জন্য দেশব্যাপী লকডাউন হয়তো আদর্শ সমাধান নয়। ঈদের আগে সাময়িকভাবে লকডাউন তুলে নেওয়ার বাস্তব প্রয়োজনও আমরা বুঝি। কিন্তু, গণপরিবহনে ৫০ শতাংশ যাত্রী পরিবহনের নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে ব্যর্থ হওয়ার কোনো অজুহাত থাকতে পারে না। এমনকি আমাদের স্বাস্থ্যমন্ত্রী, যাকে তার ব্যর্থতা স্বীকার করতে দেখা যায় না, তিনি পর্যন্ত বলেছেন যে নির্দেশনা কঠোরভাবে মেনে না চললে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ‘ভেঙে পড়বে।’

কার্যকর কোনো ব্যবস্থা ছাড়াই সবাই নির্দেশনা মেনে চলবে-এমন আশা করা মেনে নেওয়া যায় না। লকডাউন শিথিল করে যে ক্ষতিটা হচ্ছে, তা কমাতে সরকারকে তার দেওয়া নির্দেশনা বাস্তবায়নে অবশ্যই আরও অনেক কিছু করতে হবে।

Comments

The Daily Star  | English

Deeper crisis feared as 219 factories shut

With 219 garment factories shut amid worker unrest along the industrial belts yesterday, Bangladesh’s apparel sector is feared to get into a deeper crisis if production does not resume on Saturday after the weekend.  

2h ago