শিক্ষককে এত অসম্মান কেন

যখন আমরা দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রার মাইলফলক পদ্মা সেতু উদ্বোধন নিয়ে ব্যস্ত, তখন নড়াইল জেলায় শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের হাতে একজন শিক্ষক লাঞ্ছিত হয়েছেন। শিক্ষকের গলায় জুতার মালা পরিয়ে দেওয়ার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পরলে ঘটনাটি আমাদের নজরে আসে।

গত ১৭ জুন নড়াইল সদর উপজেলার মির্জাপুর ইউনাইটেড কলেজে পুলিশের উপস্থিতিতে এ ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে। আরও হয়রানির আশঙ্কায় ওই শিক্ষক এখন আত্মগোপনে রয়েছেন।

বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে ওই ঘটনা সম্পর্কে আমরা যা বুঝেছি তা হলো—কলেজের এক হিন্দু শিক্ষার্থী ভারতের বিজেপি নেতা নূপুর শর্মার সমর্থনে ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছিলেন। এতে কলেজের কয়েকজন শিক্ষার্থী ক্ষুব্ধ হন এবং তারা তাকে ফেসবুক থেকে পোস্টটি সরিয়ে দিতে বলেন।

ওই শিক্ষার্থী পোস্ট সরাতে অস্বীকৃতি জানালে তারা আরও ক্ষুব্ধ হন। এ ঘটনা জানতে পেরে কলেজের অধ্যক্ষ পুলিশকে বিষয়টি জানান। অধ্যক্ষ হিন্দু হওয়ায় এ সময় গুজব ছড়িয়ে পড়ে যে তিনি এ ঘটনায় ওই হিন্দু শিক্ষার্থীর পক্ষ নিয়েছেন।

পরবর্তীতে কয়েকজন শিক্ষার্থী ও স্থানীয়রা ২ জনকেই জোর করে জুতার মালা পরিয়ে দেয়। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে পুলিশ অধ্যক্ষকে ক্যাম্পাস থেকে নিয়ে যায়।

আমরা মনে করি, এ ঘটনাটি শুধু ওই অধ্যক্ষের জন্যই নয়, আমাদের পুরো জাতির জন্য অপমানজনক। আমরা বারবার শিক্ষকদের মর্যাদা সমুন্নত রাখতে ব্যর্থ হচ্ছি।

কিছুদিন আগেই মুন্সিগঞ্জের বিজ্ঞান শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলকে তার শিক্ষার্থীরা লাঞ্ছিত করে। গতকাল আশুলিয়ায় এক এক শিক্ষক মারা গেছেন। তারই এক শিক্ষার্থী তাকে স্টাম্প দিয়ে আঘাত করে গুরুতর আহত করে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।

এসব ঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ার কারণেই অসহিষ্ণুতা ও সহিংসতার ঘটনা বেড়ে যাচ্ছে।

অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসের ঘটনায় বেশ কয়েকটি প্রশ্ন উঠেছে। পুলিশের উপস্থিতিতে তাকে কীভাবে লাঞ্ছিত করা হলো? পুলিশ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী হলেও তা অস্বীকার করছে কেন? ধর্মীয় পরিচয়ের কারণেই কি এই অধ্যক্ষের ওপর হামলা হয়েছে? এ ঘটনায় জাতি কী বার্তা পেল?

যারা লাঞ্ছিত করেছেন, তাদের অবশ্যই শাস্তি পেতে হবে এবং অধ্যক্ষ ও তার পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। যাতে তারা আবার নির্বিঘ্নে বসবাস করতে পারেন ও দায়িত্ব পালন করে যেতে পারে। আমাদের দেশে ঘৃণা ও অসহিষ্ণুতা বৃদ্ধির পেছনের কারণগুলোকে চিহ্নিত করা উচিত এবং সেগুলো উপড়ে ফেলার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। তা না হলে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতেই থাকবে।

Comments

The Daily Star  | English
government bank borrowing target

'Heinous act' of attacking NCP rally in Gopalganj will not go unpunished: govt

The government termed the use of violence in Gopalganj as "utterly indefensible"

16m ago